কাজিরবাজার ডেস্ক :
কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে মরিয়া হয়ে ছুটছে বিভিন্ন দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ক্ষিপ্র প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এই তাড়াহুড়োর প্রতিষেধক নিয়ে আস্থার সংকট দেখা দিচ্ছে। তড়িঘড়ি করে তৈরি করা এ টিকা আসলে স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত মানুষ।
রয়টার্স জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে এখন অন্তত ২০০টি করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির পর্যায়ে রয়েছে। ২০টির বেশি টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগও শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের মধ্যেই কোভিড-১৯ টিকা হাতে পেতে চাইছেন। অথচ বিশ্বের অন্যান্য সংক্রমক রোগের ক্ষেত্রে দশকের বেশি সময় লেগেছিল টিকা তৈরিতে। টিকার জন্য এমন তড়িঘড়ি করা ‘রাজনীতিকদের জন্য ভালো’ এমন তির্যক মন্তব্য করেছেন ভ্যাকসিন কনফিডেন্স প্রজেক্টের শীর্ষ কর্মকর্তা হাইডি লারসন।
তিনি বলেন, ‘জনগণের দিক দিয়ে সাধারণ অনুভূতি হল- এত তাড়াহুড়োয় নিরাপদ কিছু হবে না।’ টিকা অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষগুলো বারবার তাড়াহুড়োর কারণে জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের আপস না করার কথা বলছে। এরপরেও তাতে ভরসা রাখতে পারছেন না অনেকে; বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো, যেখানে টিকার ওপর আস্থাহীনতা আগে থেকেই রয়েছে।
একটি জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ মানুষ কেবল বলছেন, কোভিড-১৯ এর টিকা এলে তারা তা নেবেন। গত মে মাসে ১৯টি দেশের মানুষের ওপর এ জরিপ চালানো হয়েছিল। জরিপকারী ‘বিজনেস পার্টনার টু কনভিন্স’র সহ-উদ্যোক্তা স্কট রাটজান বলেন, ‘আমরা দেখছি, বিজ্ঞান ও সরকারগুলোর ওপর মানুষের অনাস্থা কীভাবে বাড়ছে। এ তড়িঘড়ির ক্ষেত্রে টিকার ঝুঁকি, রাজনীতিকদের অতিশয়োক্তির বিষয়টি আমাদের আমলে নিতে হবে।’
জরিপে দেখা যাচ্ছে, টিকার ওপর সবচেয়ে বেশি আস্থা রয়েছে চীনাদের, আর সবচেয়ে বেশি অনাস্থা রুশদের। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শঙ্কাসহ নানা কারণে টিকার বিষয়ে অনেকের দ্বিধা-সন্দেহ থাকে, যাকে এককথায় বলে ‘অ্যান্টি-ভ্যাক্স’।
করোনাভাইরাস মহামারী দেখার আগে ২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, এই ‘অ্যান্টি-ভ্যাক্স’ বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বড় ১০টি হুমকির একটি। ইউরোপের দেশগুলোতে টিকার প্রতি সন্দেহ তুলনামূলকভাবে বেশি। ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রতি আস্থাহীনতার সঙ্গে নানা ভুয়া শঙ্কাও এর কারণ। ২০১৮ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ফরাসিদের ৭০ শতাংশ টিকাকে নিরাপদ মনে করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে এ হার ছিল ৮২ শতাংশ। কিন্তু মৌসুমীর ফ্লুর টিকার ক্ষেত্রে এ হার ৬৮ শতাংশে নেমে আসে।
লারসন বলেন, চলতি বছরের মধ্যেই কোভিড-১৯ এর টিকা চলে আসবে, এমন ঘোষণা দ্বিধান্বিত মানুষের দ্বিধা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কারণ তারা মনে করতে পারে যে, তাহলে এ রোগ তেমন জটিল নয়। সোশাল মিডিয়া থেকে তথ্য নিয়ে ভ্যাকসিন কনফিডেন্স প্রজেক্ট দেখেছে, জুন নাগাদ ৪০ শতাংশ ব্রিটিশ সম্ভাব্য কোভিড-১৯ টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়ী ছিল। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়েও তাদের ছিল নেতিবাচক মনোভাব। রাশিয়া ও চীন টিকা তৈরিতে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার কথা জানালেও তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।
রাটজান বলেন, ‘আমরা জানি না তা কতটা স্বচ্ছ। তাদের তথ্য কতটা সঠিক ও নির্ভরযোগ্য।’ ডক্টরস উইদাউট বর্ডারের নেতা কেইট এল্ডারের মতে, রাজনীতিকদের সতর্ক হওয়া উচিত টিকার বিষয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে। চিকিৎসা সাময়িকী ল্যান্সেটে গত মে মাসে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে ফরাসি বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, টিকা নিয়ে দ্বিধান্বিত মানুষের হার গত মার্চের শুরুতে ছিল ১৮ শতাংশ। আর মার্চের শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৬ শতাংশে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের মধ্যে টিকার উপর এই আস্থাহীনতা কাটাতে না পারলে তা বড় ঝুঁকিই হবে।তারা বলছেন, যখন ভ্যাকসিন তৈরি সম্পন্ন হবে তখন এই অনাস্থা একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে।