স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট সদর উপজেলায় পানি বৃদ্ধির কারণে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা প্ল¬াবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুরমা ও চেঙ্গেরখাল নদী ও হাওরের পানি বাড়ছে। বিভিন্ন হাট-বাজার, মসজিদ, স্কুল-মাদ্রাসাসহ ভিটে বাড়ী বন্যার পানিতে প্ল¬াবিত হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ এমনিতেই দিশেহারা। এখন পাহাড়ি ঢল এবং টানা বৃষ্টিতে বন্যার মধ্যে নিপতিত এ উপজেলার লাখও মানুষ। সিলেট সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে ১নং জালালাবাদ ইউনিয়ন। এ ইউনিনের বর্তমান মেম্বার ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহিত আলম শফিক জানান, জালালাবাদ ইউনিয়ন পুরোটাই পানিবন্দী। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। কিছু মানুষ ফ্লাড সেন্টার বা নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছেন, বাকিরা গবাদি পশুসহ আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের এখন জরুরী ত্রাণের প্রয়োজন। ২নং হাটখোলা ইউনিয়নও পুরোটা পানীতে এখানকার শিবেরবাজার নামের বড় একটি বাজার রয়েছে। রয়েছে ইউনিয়ন অফিস, একটি কওমি মাদ্রাসা এবং পাশাপাশি রাজারগাঁও হাইস্কুল। বাজার ও ইউনিয়ন অফিসের খাদ্য গুদামে বন্যার পানী উঠে গেছে। জানিয়েছেন উপজেলা যুবলীগ নেতা বাদশা মিয়া। তিনি আরও জানান পিটারগঞ্জ বাজার ও আশপাশের এলাকার ঘর-বাড়ীতে পানী উঠেছে। অসহায় মানুষদের জন্য জরুরী ত্রণ প্রয়োজন, তাই বিত্তবানদেরকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি। ৩নং খাদিমনগর ইউনিয়নের স্থানীয় এক সাংবাদিক জানিয়েছেন এ ইউনিয়নের আলীনগর, সাতগাছি, ছয়দাগ, ঘোড়ামারা, গনকিটুক, বাইশটিলা, বাউয়ারকান্দি, রঙ্গিটিলা, পীরেরগাও, মোকামবাড়ি, মধুটিলা, বাইলার কান্দি, শিমূল কান্দি, রইরকান্দি, যুগলটিলা, ছালিয়াসহ বেশ কিছু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে মাছের খামার, ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, রাস্তাঘাট, আউশ ক্ষেত, বীজতলা। তিনি বলেন এই দুঃসময়ে অসহায় মানুষের দিকে মানবিক হাত প্রসারিত করা প্রয়োজন। ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি জানিয়েছেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বিলাল, তিনি বলেন ৩নং ওয়ার্ডের মুরাদপুর, সোনাপুর, মিরের চক, নয়ামসজিদ, মুক্তির চক, ৪নং ওয়ার্ডের ধনকান্দি, পাচঘরি, ৫নং ওয়ার্ডের কলে¬াগ্রামের একাংশ, ইসলামাবাদ, ৬নং ওয়ার্ডের বালুটিকর, ৭নং ওয়ার্ডের বংশিধর, পলিয়া, দেওয়ানের চক, মাজরগাঁও, সুরমা আদর্শ গুচ্ছগ্রাম, হাতুড়া, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সরকারের পাশা-পাশি দরিদ্র মানুষের সাহায্যে বিত্তবান্দের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। ৫নং টুলটিকর ইউনিঢর সুহিন আহমদ চৌধুরী মেম্বার বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পূর্ব টুলটিকর ও কুশিঘাট এলাকা সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। এতে জন জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। ৬নং টুকেরবাজার ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি জান্তে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শহিদ আহমদ বলেন, ১ থেকে ৫নং ওয়ার্ডের প্রায় ১৭-১৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী। তারা খুব অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। তিনি পানিবন্দী মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। সরকারী ত্রাণ বৃদ্ধির জন্য তিনি দাবী জানাচ্ছেন। এদিকে ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার গিয়াস উদ্দিন ও ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মালেক জানান, সাহেবেরগাঁও, চরুগাঁও, শেখ পাড়া, ২নং ওয়ার্ডের হায়দরপুর, পীরপুর, শাহপুর, ৩নং ওয়ার্ডের টুকেরগাঁও, গরীপুর, শাহপুর, ৪নং ওয়ার্ডের নোয়াগাঁও, ৫নং ওয়ার্ডের শাহপুর তালুকদার পাড়া, নওয়াপাড়া, মইয়ারচর, খুরুম খলাও বন্যায় আক্রান্ত। ৭নং মোগলগাঁও ইউনিয়নের ব্যবসায়ী জুনেদ আহমদ জানান মোগলগাঁও ইউনিয়নের প্রায় ঘর-বাড়ী রাস্তাঘাট স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ খুবই অসহায়ত্বের মধ্যে রয়েছে। এই সময়ে সরকারী এবং বেসরকারী সাহায্য সহায়তার প্রয়োজন। ৮নং কান্দিগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বন্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ঘোপাল, জাংগাইল, মিরপুর, গোবিন্দপুর, মিরেরগাঁও, চামাউরাকান্দি, নীলগাঁও, নলকটসহ অনেক গ্রাম পানিবন্দী। তিনি বন্যা কবলিত এলাকা সার্বক্ষণিক খবরা-খবর রাখছেন। যারা বেশি সমস্যায় থাকার জায়গা নেই তারা যেন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। এবং যার যে রকম সাধ্য অসহায়দের জন্যে এগিয়ে আসুন। ইনশাআল্লাহ ভয়ের কারণ নেই, সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে। সতর্ক থাকুন, শিশু এবং বৃদ্ধদের নিরাপদে রাখুন। আল্লাহ তায়ালা এ দুর্যোগ থেকে আমাদেরকে হেফাজত করবেন।