দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে চান প্রধানমন্ত্রী

15
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে-ই-বাংলা নগর প্রান্তের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অংশগ্রহণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে বর্তমান রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার, যা সর্বকালের রেকর্ড। তিন মাসের আমদানি খরচ হাতে রেখে রিজার্ভ থেকে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ নিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টির প্রভাব ও সম্ভাবনা যাচাই-বাছাই করে দেখতে বলেছেন তিনি।
সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এমন প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় প্রতি একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী কিছু মন্তব্য, প্রস্তাব, নির্দেশনা দেন। সভা শেষে সেসব সংবাদকর্মীর সামনে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
একনেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। সর্বকালের রেকর্ড এটা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নিই। আমরা নিজেদের টাকা তো নিজেরাই ঋণ দিতে পারি। সরকার নিজেই ঋণ নিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের পক্ষে, জনগণের পক্ষে এই টাকা সংরক্ষণ করে। রিজার্ভ তাদের আয়ত্তেই আছে। ওখান থেকে আমরা প্রকল্পের জন্য ঋণ নিতে পারি।’
এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা হলো যে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিন্তাভাবনা করে খুঁটিনাটি দেখবে। অর্থনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর ধারণা, সাধারণ তিন মাসের আমদানি ব্যয় হাতে রাখা নিরাপদ। তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ বিদেশি টাকা যদি হাতে থাকে, তাহলে স্বস্তিদায়ক মনে করা হয়। সুতরাং তিনি মনে করেন যে, আমদানি ব্যয়ের যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ হাতে রিজার্ভ রেখে বাকিটা অভ্যন্তরীণ নিজেদের অর্থে নিজেরাই ঋণ নিতে পারি এবং তুলে দিতে পারি।’
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রীকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, রিজার্ভ আমাদের একমাত্র ব্যাকআপ। রিজার্ভ থেকে প্রকল্পের জন্য ঋণ নেয়াটাকে আপনি যৌক্তিক মনে করেন?
জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমি এটা মনে করি। আমি সমর্থন করি দুটো কারণে। একটা হলো আমাদের নিজস্ব টাকা ডান হাত থেকে বাম হাতে আনলাম। আবার ডান হাতে ফেরত দেব। এটা আগে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ফেরত যায়। এটা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দ্বিতীয়ত, বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক শর্ত থাকে, এটা-সেটা থাকে, সেগুলো মানতে হয়। মানতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে যায়। ঋণচুক্তি সই করার পরে প্রক্রিয়া করতে অনেক সময় দেখা যায়, এক থেকে দেড় বছর পার হয়ে যায়। তখন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। ডলারের মান বেড়ে যায়, টাকার মান কমে যায়। আমাদের নিজেদের টাকা হলে নিজেরাই খরচ করবো। ভয়ের কারণটা হলো যে ডলারটা দেব, তা ফেরত আসতে হবে। এখানে যদি ওই ধরনের কোনো ভীতি থাকে, যেটা ব্যাংকে আমাদের নন-পারফর্মিং (ঋণখেলাপি) ঋণের ক্ষেত্রে দেখেন। তাহলে আমি হাত দেব না। ওটা নিশ্চিত হয়ে আমি করতে রাজি আছি। আমি মনে করি, এটা সম্ভব।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এটা তার অর্ডার নয়। তিনি একটা আইডিয়া তুলে ধরেছেন আলোচনার জন্য। তারপর আমরা সিদ্ধান্তে আসবো।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আল্টিমেটলি জনগণের সঞ্চয় জনগণ ব্যয় করবে তাদের কল্যাণে। এজন্য নিয়ম-কানুন, নীতিমালা, চিন্তা-ভাবনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আমাদের অন্যান্য যেসব অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভাগ আছে, তারা ঠিক করবে। আমরাও পরিকল্পনা বিভাগ থেকে অবশ্যই সহায়তা দেব। এটা একটা যুগান্তকারী প্রস্তাব এসেছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। অত্যন্ত আনন্দিত যে, এখানে আমি ছিলাম এবং অবশ্যই সমর্থন করি।’