রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল, পাটকল বন্ধ নয়-আধুনিকায়ন করো, মাথাভারী প্রশাসন নয় – দক্ষ কার্যকর প্রশাসন চাই, সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ, ভুলনীতি পরিহার এর দাবিতে আজ ২ জুলাই, শুক্রবার বিকাল ৫টায় আম্বরখানাস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বাসদ জেলা সমন্বয়ক আবু জাফর ও জেলা সদস্য প্রণব জ্যোতি পালের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাসদ জেলা সদস্য জুবায়ের আহমদ চৌধুরী সুমন, চা শ্রমিক ফেডারেশনের সন্দিপ রঞ্জন নায়েক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মহানগর আহ্বায়ক সনজয় শর্মা, শ্রমিক নেতা মামুন বেপারি, মাহবুব হাওলদার, লাবলু মিয়া, শাকিল আহমদ প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা সংক্রমণের এই দুর্যোগকালে এমনিতেই যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বিদেশ থেকেও অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়ে দেশে ফিরছে সেই সংকটকালে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন কথিত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে ২৫টি রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ করার গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ফলে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে প্রায় ৫৫/৬০ হাজার শ্রমিক কাজ হারাবে। তাদের পরিবার এবং ৪০ লাখ পাটচাষী ও তাদের পরিবার, পাট ব্যবসায়ী মিলে মোট প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ চরম বিপাকে পড়বে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পাট ও পাট শিল্পের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য গভীরভাবে যুক্ত। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও পাটকল শ্রমিকদের ভূমিকা ছিল সামনের কাতারের। দেশ স্বাধীনের পর ৭৭টি রাষ্ট্রীয় পাটকল ছিল। ১৯৮২ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এর কাঠামোগত সমন্বয়ের পরামর্শ পলিসি অনুসারে একের পর এক বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো বন্ধ করতে থাকে শাসকশ্রেণি। পানির দামে এসব কলকারখানা ব্যক্তি মালিকদের হাতে তুলে দেয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা দুর্যোগে বেসরকারি পোষাক কারখানাসহ কারখানা মালিক ব্যবসায়ীরা পাচ্ছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা আর রাষ্ট্রীয় কারখানায় প্রণোদনা না দিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। এর নাম নাকি দেশপ্রেম!
নেতৃবৃন্দ বলেন, সারা বিশ্ব আজ সবুজায়নের দিকে যাচ্ছে। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে কৃত্রিম তন্তু পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হচ্ছে। পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে তখন দেশের রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ করা অযৌক্তিক-অন্যায়।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ৩০৫টি পাটকল আছে এর মধ্যে ২৮১টি বেসরকারি। ৫৬টির মতো বন্ধ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় পাটকলে ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিক আরও ২৫ হাজার বদলী শ্রমিক মিলে ৫০/৫৫ হাজার শ্রমিক অথচ এই অল্প সংখ্যক পাটকল ও শ্রমিক পরিচালনার জন্য রয়েছে সাড়ে তিন হাজার কর্মকর্তার এক মাথাভারী প্রশাসন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বলা হচ্ছে পাটকল লোকসান দিচ্ছে। দেশবাসীর প্রশ্ন লোকসানের জন্য দায়ী কে? সরাকরের দুর্নীতি, লুটপাট, ভুলনীতি ও মাথাভারী-অদক্ষ প্রশাসন লোকসানের জন্য দায়ী – শ্রমিকরা নয়। কারণ মৌসুমে জুলাই-আগষ্ট মাসে পাটের দাম যখন ১০০০/১২০০ টাকা থাকে তখন পাট না কিনে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে যখন পাটের দাম ২০০০/২২০০ টাকা হয় তখন পাট কেনা এবং চাহিদার চেয়ে কম পাট ক্রয় করা হয়। বিদেশে বাজার খোঁজা, পণ্যের বহুমুখীকরণ এসবই মন্ত্রণালয় ও বিজেএমসিসহ প্রশাসনের কাজ। ফলে লোকসানের দায় কোনভাবেই শ্রমিকেরা নেবে না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো পাকিস্তান আমলে ১৯৫১-৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ফলে দীর্ঘ দিনের পুরনো যন্ত্রপাতির কারণে উৎপাদন ১৮ টন থেকে অর্ধেকে নেমে এসে ৯ টনে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান বিশ্বে আধুনিক মেশিন দিয়ে ৩৬ টন পর্যন্ত উৎপাদন করা যায়। ফলে পুরনো যন্ত্রপাতি বদলে পাটকলের আধুনিকায়ন না করাও লোকসানের অন্যতম কারণ।
নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের অযৌক্তিক, অন্যায় ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল করে পাটকলের আধুনিকায়ন করা, দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ করার আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি