চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করোনার কোন ওষুধ সেবন না করার পরামর্শ

13

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় ডেক্সামিথাসনকে ‘কার্যকর’ ওষুধ হিসেবে প্রচারের মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধটি গ্রহণে মারাত্মক শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একদল বিজ্ঞানীর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ডেক্সামিথাসন বিশালভাবে কাজে লাগতে পারে। ওষুধটির ব্যবহারে ভেন্টিলেটরে থাকা করোনা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক-তৃতীয়াংশ কমানো সম্ভব। অক্সিজেন দিয়ে যাদের চিকিৎসা চলছে তাদের ক্ষেত্রেও মৃত্যুর হার এক-পঞ্চমাংশ কমানো যাবে।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন ওষুধ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান স্টেরয়েড জাতীয় এই ওষুধ তৈরি করে। ওষুধের দোকানে এক থেকে দুই টাকার মধ্যে এই জাতীয় ট্যাবলেটের বিক্রি হয়।
তবে ডেক্সামিথাসন নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশে কিছু এলাকায় এই গ্রুপের ওষুধের বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মানব শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে তখন শরীরের ভিতর যে ক্ষতিগুলো হয় তা কিছুটা হলেও ডেক্সামিথাসন প্রশমন করতে পারবে।
যদিও ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের চিকিৎসায় এই ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক বিল্লাল আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ চিকিৎসার প্রথম গাইডলাইনে তীব্র উপসর্গসহ কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ডেক্সামিথাসন গ্রুপের স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করার কথা উল্লেখ করা হয়।’
‘কিন্তু এই জাতীয় ওষুধ কোন ধরণের রোগীকে কী মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্রয়োগ করা একেবারেই অনুচিত। এটা করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে’-যোগ করেন অধ্যাপক বিল্লাল আলম।
তিনি জানান, শ্বাসকষ্ট জাতীয় সমস্যার ক্ষেত্রে, নিউমোনিয়া হলে, তীব্র অ্যাজমা থাকলে অনেকসময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই ধরণের ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। মানুষ মারা যাওয়ার আগেও অনেকক্ষেত্রে শেষ চেষ্টা হিসেবে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ ব্যবহারে যেসব ঝুঁকি তৈরি হতে পারে সে বিষয়ে বিল্লাল আলম বলেন, ‘স্টেরয়েডের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে হাইপার টেনশন, পেপটিক আলসার হতে পারে এবং ডায়াবেটিসের তীব্রতা বৃদ্ধি করতে পারে।’
‘এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ গ্রহণে মুখে, পেটে বা পায়ে পানি আসতে পারে, কিডনি বিকল হতে পারে এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিডনি বা লিভারের সমস্যা বা ডায়বেটিস যাদের রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুরুতর হতে পারে। এছাড়া শরীরে কোনো ধরনের ইনফেকশন থাকলে তাও বেড়ে যেতে পারে।’
মূলত কোন মাত্রায় এই ওষুধ কোন ধরনের রোগীর জন্য ব্যবহার করতে হবে, সেই বিষয়টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামতের সাপেক্ষে নির্ধারণ না করা হলে এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করছেন মেডিসিনের এই অধ্যাপক।
সংবাদ দেখে ওষুধ না কেনার পরামর্শ
এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখেই ওষুধ না কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক জাকির তালুকদার। ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘মানুষের প্রতি অনুরোধ, মিডিয়াতে শুনে ওষুধ কিনতে ছুটবেন না। ডাক্তারদের প্রতি অনুরোধ, ওষুধ কোম্পানির প্ররোচনায় দামি কিন্তু অপরীক্ষিত ওষুধ লিখবেন না।’
গবেষণার পরিপূর্ণ ফলাফলের আগে কোনো ওষুধের নাম ও খবর প্রচার না করতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধও রেখেছেন চিকিৎসাবিদ্যার পাশাপাশি কথাসাহিত্যেও খ্যাতি পাওয়া জাকির তালুকদার।
তিনি বলেন, ‘আজ পর্যন্ত করোনার কোনো সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। আমরা কেবলমাত্র সিম্পটোমাটিক ওষুধ দিই। এসব ওষুধ রোগীর কষ্ট ও উপসর্গ কমায়। কয়েকদিনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের এন্টিবডি তৈরি শুরু হয়ে যায় রোগীর শরীরে। সেই এন্টিবডি রোগীর শরীরে ভাইরাসকে হত্যা করার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তোলে।’