কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আজ বাজেট পেশ ॥ বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা

22

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মহামারী করোনায় বিপর্যস্ত অবস্থায় এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে যেমন শুরু হয়েছে মন্দা, দেশীয় অর্থনীতিও বিপর্যস্ত। বাজারে চাহিদা কম। জরুরী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য খাতে উৎপাদন কমে গেছে। রফতানিমুখী শিল্পের অবস্থাও তথৈবচ। আবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কেটে গেলেই যে চাহিদা লাফিয়ে বাড়বে, সে আশাও কম। সব মিলিয়ে এক কঠিন বাস্তবতা। এই বাস্তবতার মধ্যে বিদ্যমান কর্মসংস্থান ধরে নতুন বিনয়োগে গতি সঞ্চার সত্যিকার অর্থেই কঠিন চ্যালেঞ্জের। আর সেই কঠিন চ্যালেঞ্জটাই দক্ষতার সঙ্গে গ্রহণ করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে করোনার কবল থেকে ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের’ এক ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট দিতে যাচ্ছেন তিনি। যা হবে দেশের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এক উৎসাহমূলক বাজেট।
বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে দেশের অর্থনীতিতে প্রাপ্তির সম্ভাবনা কম। ফলে অর্থমন্ত্রীর সামনে আছে দেশের বিশাল এক ভোক্তাশ্রেণী। তাদের মধ্যে চাহিদা সৃষ্টি করে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধিই অর্থমন্ত্রীর সামনে মূল লক্ষ্য। যাতে অভ্যন্তরীণভাবে দেশের অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করা যায়। সেই সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর কাছে আছে দেশে চলমান উন্নয়নের মেগা প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন দ্রুততর করার অস্ত্রও তিনি আগামী বাজেটে ব্যবহার করতে যাচ্ছেন।
বাজেটের আকার : আশা করা যাচ্ছে, মন্দা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও নিম্ন আয়ের মানুষের পুনর্বাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে দ্বিতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিকেল ৩টায় সীমিত সদস্যদের উপস্থিতিতে এ বাজেট উপস্থাপন করবেন তিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ১৩.২৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ১২ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে যা সংশোধন করে কমানো হয়েছে ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
জানা যায়, বিনিয়োগ বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির এক ধরনের উদ্যোগ থাকছে বাজেটে। গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কৃষি খাতকে। ফলে আগামীতে বাড়বে কৃষি খাতের ভর্তুকির পরিমাণও। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে যেন কৃষি খাতে গুরুত্ব দেয়া হয়। আগামী বছরও প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা কৃষি ভর্তুকি রাখা ধরা হয়েছে। আর অন্যান্য খাতে ভর্তুকি মিলে থাকছে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা।
আকার বাড়লেও সরকার নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকারের পরিচালনা ব্যয় সংকোচনের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা করেছে। এর ধারাবাহিকতায় সরকারী চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিতকরণ, অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বন্ধ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সভা সেমিনার হ্রাস, মুদ্রণ কাজ কমিয়ে আনার নির্দেশ সব মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে গিয়ে এমনিতেই সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এজন্য অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো হচ্ছে। এরপরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, সরবরাহ ও সেবা বাবদ ৩৫ হাজার কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধে ৬৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা এবং প্রণোদনা ও অনুদান ইত্যাদি খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
কয়েক বছর ধরে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে উন্নয়ন খাতকে। এর মধ্যে পদ্মা সেতুসহ কয়েকটি বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে অনেক উন্নয়ন কাজের গতি থমকে দাঁড়িয়েছে। ফলে নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন কাজে বরাদ্দের পরিমাণ খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। সব মিলে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। আর এডিবি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীতে ব্যয় করা হবে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট উন্নয়ন ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১২ হাজার ৫২১ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ মনে করছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের সুফল বয়ে আনতে পারে। কমতে পারে নিত্যপণ্যের দামও। এজন্য আগামী বছরে মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এ অঙ্ক বেড়ে হচ্ছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ। এই প্রথম স্মরণকালের মধ্যে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশে পৌঁছাচ্ছে। ইতোপূর্বে আশির দশক এবং নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৬ শতাংশ থাকাটা ছিল নিয়মিত ব্যাপার। ঘাটতি মেটানো হয় সাধারণত দেশী-বিদেশী ঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রির টাকা থেকে। আগামী বছরও ঘাটতি বাজেট পূরণে অধিক মাত্রায় ঋণনির্ভর হচ্ছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ৮৮ হাজার কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য ঋণ নেয়া হবে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ ছাড়াও আগামী বছরে বৈদেশিক ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বিদেশী ঋণের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি অর্থাৎ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা থাকছে ঋণ পরিশোধ বাবদ। ফলে ৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা অনুদান ধরে নিয়ে নিট বিদেশী ঋণের হিসাব দাঁড়াচ্ছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, আগামী অর্থবছর বাজেটে ঘাটতি ঠিক রাখাই হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি হলে সমস্যা নেই। প্রতি বছর প্রবৃদ্ধির ৫ শতাংশ ধরেই ঘাটতি বাজেট নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বছর শেষে ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচেই থাকে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হবে তার সুফল যেন সাধারণ মানুষ পায় সেটি নিশ্চিত করা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, কোভিডের কারণে এবার জ্বালানি ভর্তুকি বাবদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সাশ্রয় হবে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা। রফতানি কম হওয়ায় রফতানি ভর্তুকির টাকা বাঁচবে আরও প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। আর স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ইত্যাদি সংস্থার উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ তিন মাস কাজ না হওয়ায় এডিপি থেকেও ভাল একটি অর্থ বেঁচে যাবে।
প্রবৃদ্ধিতে আশার আলো : করোনাভাইরাসের মধ্যেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আশার আলো দেখছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলমান মহামারীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে শ্লথগতি বিরাজ করছে। ওই ধারাবাহিকতায় দেশের অর্থনীতির সব সূচকই এখন নিম্নমুখী। অর্থনীতি এতটাই বিপর্যস্ত যে এর ধাক্কায় প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে।
এমন প্রেক্ষাপটে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি দেশের আর্থিক বৃদ্ধিকেও আগামী অর্থবছরের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চান। এজন্য আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে সংশোধিত জিডিপির তুলনায় নতুন জিডিপি ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১শ’ কোটি টাকা বেশি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) টাকার অঙ্কে ধরা হয়েছিল ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এটি কাটছাঁট করে ২৮ লাখ ৫ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ সংশোধিত বাজেটে জিডিপি কাটছাঁট করা হয়েছে ৮০ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি সংশোধন করা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ। তবে বছর শেষে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি থাকবে বলেই আশা করছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।
বর্তমানে এমন একটি সময়ে অর্থমন্ত্রী বাজেট দিতে যাচ্ছেন যখন দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি গত মে মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর আগের মাসে যা ছিল ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ফলে আগামী অর্থবছরেও ৫ দশমিক ৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ধরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করেছে অর্থমন্ত্রী, যা চলতি বাজেটে রয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
রাজস্ব বাজেট : আগামী অর্থবছরে বড় বাজেট বাস্তবায়নে বড় আয়ের লক্ষ্যই নির্ধারণ করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের জন্য ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে।
বিদ্যমান করোনাভাইরাসের প্রকোপ দীর্ঘ হলে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও দীর্ঘ হবে। এসব কিছু বিবেচনায় রেখেই মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী বছর কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। এছাড়া আগামী বছরে বৈদেশিক অনুদান হিসাবে পাওয়া যাবে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। সাধারণত বৈদেশিক অনুদান পরিশোধযোগ্য নয় বিধায় একে সরকারের আয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল সরকার। পরে তা কমিয়ে ৩ লাখ ৬০০ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু এ লক্ষ্যও অর্জন করা এনবিআরের পক্ষে সম্ভব হবে না। চলতি অর্থবছরে আদায় হতে পারে বড়জোর ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিলে ১৯ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল। আদায় হয়েছে মাত্র ৮ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই সময়ে শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। ঘাটতি প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা টাকা। বছর শেষে সংশোধিত লক্ষ্য থেকেই ঘাটতি ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ অবস্থায় আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। এতে জনগণের ওপর পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি হবে নিঃসন্দেহে। বাস্তবে ঘটতেও যাচ্ছে তা-ই।
আগামী অর্থবছরে বিপুল রাজস্ব আদায়ে সবেচেয়ে বেশি ভরসা করা হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা মূসক-এ। মূসক থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। আয়কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ২০ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ১ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ৬৮ শতাংশই আশা করা হচ্ছে পরোক্ষ কর থেকে। এই অর্থবছরে যা ছিল ৬৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডির) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জানি অ-প্রত্যক্ষ করের চাপ সাধারণ মানুষের ওপরেই বেশি পড়ে। এটা আদায় করা সহজ। অনেক ক্ষেত্রে মানুষকে বিভিন্ন ব্যয় করতে হয়। সেই ব্যয়ের ওপর ট্যাক্স রাখা হলে সেটা আদায়ও অনেক সহজ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, আমরা কীভাবে কর ফাঁকি রোধ করতে পারি। প্রত্যক্ষ কর যেটা দেয়ার কথা, সেটা ঠিকমতো আসছে কিনা সেটার কঠোর নজরদারি করতে পারি। এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের ওয়েলথ ট্যাক্স এবং ইনহেরিটেন্স ট্যাক্স চালু করার বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করেছি।’
ভর্তুকি বাড়ছে ১১ শতাংশ : আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১১ শতাংশের মতো বেশি। হিসাব বলছে, বরাদ্দের অধিকাংশ অর্থই যাবে কৃষি ও বিদ্যুত খাতে। বৈধপথে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহী করতে প্রতি একশ টাকার জন্য ২ টাকা হারে ভর্তুকি দেয় সরকার। প্রণোদনার এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে চলতি অর্থবছরে। রেমিটেন্স পাঠানোর এই প্রণোদনা বহাল থাকবে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরেও। রেমিটেন্স পাঠানোর প্রণোদনা দিতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা।
রফতানি আয়ে যে প্রণোদনা দিয়ে আসছে সরকার সেজন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে চলতি অর্থবছরের মতোই ৬ হাজার ৮শ’ ২৫ কোটি টাকা। কৃষি খাতের জন্য বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৯ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। এসব কিছু মিলিয়ে আগামী অর্থবছরে ২২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার খবর পাওয়া গেছে বাজেটে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা।
নগদ প্রণোদনার বাইরেও বিভিন্ন খাতকে আর্থিক সহায়তা করে সরকার। এমন খাতগুলোর মধ্যে বিদ্যুত খাতে ৯ হাজার কোটি টাকা, খাদ্য নিরাপত্তায় ৫ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা, জ্বালানি আমদানিসহ ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে ২৩ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এসব খাতে ভর্তুকির পরিমাণ রয়েছে ২৩ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।
এর সঙ্গে নগদ প্রণোদনা ও সরকারের ঋণ সহায়তার সুদের হিসাব করলে মোট ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। যা বর্তমান অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৫ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা।
অপ্রত্যাশিত খাতেও বরাদ্দ বাড়ছে : করোনাভাইরাস মহামারীসহ যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগামী অর্থবছরে ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে তা তিন হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরের বাজেটে অপ্রত্যাশিত খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।
দুর্যোগপ্রবণ দেশ হওয়ার কারণে ‘অপ্রত্যাশিত বা অনাকাক্সিক্ষত যেকোন ঘটনা মোকাবেলার জন্য সরকার প্রতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখে। আগামী অর্থবছরেও তা-ই রাখা হচ্ছে। আর এ খাতে অর্থ বরাদ্দ ছিল বলেই করোনাভাইরাস মোকাবেলায় অর্থের বিষয়ে সরকারতে ভাবতে হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক কিংবা রাষ্ট্রীয় অনাকাক্সিক্ষত যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতি অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়। বাংলাদেশে হঠাৎ সৃষ্ট যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার যে বরাদ্দ রাখে সেটিই ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত’ নামে পরিচিত। গত কয়েক অর্থবছরে এ খাত থেকে তেমন অর্থ ব্যয় না হলেও চলতি অর্থবছরে এ খাতের প্রায় পুরো অর্থই ব্যয় হয়ে গেছে। এর বেশিরভাগই গেছে নোভেল করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য ও প্রণোদনা খাতে। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেকটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। গ্রীষ্মে কালবৈশাখী ছাড়াও আমফানের মতো ভয়াল ঘূর্ণিঝড় যেকোন সময় আঘাত হানতে পারে। রয়েছে বন্যার ভয়। এসব মাথায় রেখেই আগামী অর্থবছরের নতুন বাজেটে ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাতে তিন হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে।
বাজেটের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ছয়টি অর্থবছরে এ খাতের বরাদ্দের বিপরীতে খরচ প্রায় ছিলই না। তবে ব্যতিক্রম গত ২০১৮-১৯ ও চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ বরাদ্দ দুই হাজার কোটি টাকার প্রায় সবটাই খরচ হয়েছে। ওই অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি টাকা গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত অনিষ্পন্ন আবেদনগুলো নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সম্ভাব্য ৭৫৭ কোটি টাকার মধ্যে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা এ খাত থেকে ছাড় করা হয়। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা বাবদ সুদ ব্যয় এবং প্রান্তিক পরিবারগুলোকে নগদ অর্থের পাশাপাশি ওএমএসের মাধ্যমে ১০ টাকায় চাল বিক্রিতে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সরকারী চাকরিজীবীদের মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ যে অর্থ দেয়া হবে, তা-ও এ খাত থেকেই যাবে। সব মিলিয়ে এ অর্থবছরের বরাদ্দের সব টাকাই খরচ হবে।
এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় দুই হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় হয় ৫০০ কোটি টাকার মতো। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতে একই পরিমাণ বরাদ্দ রাখা হলেও ব্যয় হয় মাত্র ২৯ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে একই পরিমাণ বরাদ্দের বিপরীতে মাত্র ৬০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে মাত্র দুই কোটি টাকা।
রূপপুরেই সর্বোচ্চ বরাদ্দ : সাতটি মেগা প্রকল্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) চূড়ান্ত করছে পরিকল্পনা কমিশন। এর মধ্যে আবার সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র। আর সর্বনিম্ন পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প।
উন্নয়ন বাজেটে মেগা প্রকল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা পেয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে। আর পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় এখন সরকারী হিসাবে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) দলিলে এই ব্যয়ের অংক উল্লেখ করা হয়েছে।
নতুন এডিপির আকার দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিলের এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা খরচ করা হবে।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১২ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে নতুন এডিপি। ফলে নতুন এডিপিতে ছয় দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি বরাদ্দ। চলতি অর্থবছরে মোট এডিপি ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার।
সাতটি মেগা প্রকল্পে ৩৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে উন্নয়ন বাজেটে। এছাড়া দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল। সমাপ্ত হওয়ার কথা ২০২২ সালে। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৩৮ শতাংশ।
এছাড়া এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে ১২ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ১০ হাজার ৫৪ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে ২ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের মূল এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ১১০ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে চলতি বছরের চেয়ে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।
অবশ্য করোনা মহামারীর কারণে এবার স্বাস্থ্য খাতেই সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের সক্ষমতা না থাকায় শেষ পর্যন্ত তা দেয় হয়নি। তবে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫ হাজার ৭৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৫ হাজার ৭২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ফলে শীর্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ৫ম অবস্থানে উঠে এসেছে স্বাস্থ্য খাত।
এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের অনুকূলে এই বরাদ্দের বাইরেও করোনাভাইরাসের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরও ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা করোনাকালীন যে কোন প্রয়োজনে ব্যয় করা যাবে। বিশেষ করে, আগামী অর্থবছরে করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন বের হলে তা কেনার জন্য বড় বরাদ্দের প্রয়োজন হবে।
মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে ৩১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা। এর পরেই পরিবহন খাতে ২৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১৭ হাজার ৩৮৯, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ৪৯১, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ৯ হাজার ৮৬৫, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৯ হাজার ৪০৪ ও সেতু বিভাগে ৭ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে কমছে উন্নয়ন প্রকল্প। বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৮টি (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া)। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৪৪টি। ফলে নতুন অর্থবছরে কমছে ১৫৬টি উন্নয়ন প্রকল্প।