ভার্চুয়াল কোর্টে সিলেটে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৮৮টি, জামিন পেয়েছেন ৪৫৩ জন

16

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাসের কারণে উচ্চ আদালত সহ সারাদেশের আদালতগুলোতে ভার্চুয়াল কোর্টে বিচার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ভার্চুয়াল কোটে ১০ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত সাড়ে ২৭ হাজার আসামিকে জামিন দেয়া হয়েছে। এতে করে দেশের বিচারপ্রার্থীগণ উপকৃত হচ্ছেন। ভার্চুয়াল আদালতের বিরুদ্ধে কোন কোন আদালতে বিক্ষোভ হয়েছে। গাইবান্ধা বার সমিতিতে ভার্চুয়াল আদালতে অংশ গ্রহণ করায় ১৫ আইনজীবীকেসাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি বার কাউন্সিল পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হলাম। কাজেই আমি অবশ্যই তদন্ত করে দেখব। অন্যদিকে আইনজীবীগণ বলেছেন ভার্চুয়াল আদালতে বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ করছেন তারা মূলত শাস্তিমূলক কাজ করছে।
সুুপ্রীমকোর্টের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে যে বিচার কাজ হচ্ছে তা দেশের জন্য খুবই মঙ্গলজনক। বিচার কাজ একবারে ডিজিটাল যুগে পৌঁছে গেছে। কিন্ত আমি দেখলাম গাইবান্ধা সহ কয়েকটি বারে ভার্চুয়াল কোর্টের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। গাইবান্ধা বারের ১৫ জন আইনজীবীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা আইনের বিরোধী। প্রধান বিচারপতির আদেশে মাধ্যমে অডিন্যাস বলে এই আদালত চলছে। তার বিরুদ্ধে কথা বলাটাই শাস্তিমূলক অপরাধ। ভার্চুয়াল পদ্ধতিটি নতুন প্রযুক্তি। করোনা মহামারীর কারনেই প্রধান বিচারপতি এই পদ্ধতি চালু করেছেন। এর বিরুদ্ধে কথা বলাটা ঠিক না।
এদিকে সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশে সারাদেশের সব অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানি নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ২৭ হাজার ৪৮০ আসামির জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। গত ৩১ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত সারাদেশে ১৪ হাজার ৩৪০ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ ছাড়া জামিন দেয়া হয়েছে ৬ হাজার ৫৪২ জনকে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৩ হাজার ৪২৯টি জামিন পেয়েছে ১৭৪১ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৩৬৫টি জামিন পেয়েছে ১৩৩১ জন। রংপুর বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০৩৩টি জামিন পেয়েছে ৪০০ জন। রবিশাল বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৫৩টি জামিন পেয়েছে ২৩২ জন। রাজশাহী বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ২২৩২টি জামিন পেয়েছে ৮৭২ জন। খুলনায় বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১৫৪০টি জামিন পেয়েছে ৮৫৮ জন। সিলেট বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৮৮টি জামিন পেয়েছে ৪৫৩ জন। ময়মনসিংহ বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৭৭টি জামিন পেয়েছে ৪৮৩ জন। নারী ও শিশু আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৩২১টি জামিন পেয়েছে ১৩৬ জন। শিশু আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১০২টি জামিন পেয়েছে ৬৩ জন। গত ১০ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত এ সময়ে চলা কার্যদিবসগুলোতে এসব আসামিকে জামিন দেয়া হয়। গত ১০ মে নিম্ন আদালতের ভার্চুয়াল কোর্টে শুধু জামিন শুনানি করতে নির্দেশ দেয় সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। এরপর থেকে নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল কোর্টে জামিন শুনানি শুরু হয়। ১১ মে প্রথমবারের মতো কুমিল্লার আদালতে এক আসামির জামিন হয়। পরবর্তীতে গত ২৮ মে পর্যন্ত মোট ১০ কার্য দিবসে ২০ হাজার ৯৩৮ আসামির জামিন মঞ্জুর করা হয়েছিল। এ সময় মোট ৩৩ হাজার ২৮৭টি আবেদনের নিষ্পত্তি করা হয়। ৬ জুন সুপ্রীমকোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, সারাদেশে অধস্তন আদালতে ৩১ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ভার্চুয়াল শুনানিতে ১৪ হাজার ৩৪০টি জামিন-দরখাস্ত নিষ্পত্তি ও ৬ হাজার ৫৪২ জন আসামির জামিন মঞ্জুর হয়েছে।
গত ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্টের শুনানির জন্য অধ্যাদেশ জারি করা হয়। পরদিন ১০ মে উচ্চ আদালতের সব বিচারপতিদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে ফুল কোর্ট সভা করেন প্রধান বিচারপতি। এরপর উচ্চ আদালতসহ অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। তারপর থেকে উচ্চ আদালতসহ সারাদেশে ভার্চুয়াল কোর্টে বিচার কাজ অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে দফায় দফায় সাধারণ ছুটিরও মেয়াদ বাড়ান হয়। সর্বশেষ গত ১৬ মে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে সরকার ৩০ মে’র পর সাধারণ ছুটি আর না বাড়ালেও আদালত অঙ্গনে নিয়মিত কার্যক্রমের পরিবর্তে ভার্চুয়াল বিচার কাজ অব্যাহত থাকবে ১৫ জুন পর্যন্ত ।