কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতে অনলাইনে বিচার (ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা) কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার শুনানি চলছে। ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা চালুর পর এরইমধ্যে চারটি কার্যদিবস অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ে হাইকোর্ট এবং দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫০টি জেলায় ভার্চুয়াল আদালত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকী ১৪টি জেলায় এখনও কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এসব জেলায় আইনজীবীদের পক্ষ থেকে সাড়া না মেলায় বিচার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি বলে জানা যায়।
ভার্চুয়াল আদালত কার্যক্রম কিভাবে পরিচালিত হবে, আইনজীবীরা কিভাবে আবেদন দাখিল ও শুনানি করবেন সে বিষয়ে আগাম প্রশিক্ষণ না থাকা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাবাদী (যেমন স্ক্যানার, ল্যাপটপ) না থাকায় কিছু কিছু জেলায় এই আদালত কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আইনজীবীরা। তবে সকল জেলায় যাতে বিচার কার্যক্রম চালু করা যায় সেজন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, টাঙ্গাইল, ঝালকাঠী, পাবনা, নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা এবং মৌলভীবাজার জেলায় এখনো ভার্চুয়াল আদালত চালু হয়নি। এসব জেলার আইনজীবীরা ভার্চুয়াল আদালত কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। এ অবস্থায় রবিবার গাজীপুরসহ কয়েকটি জেলায় জেলা ও দায়রা জজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলার আইনজীবী নেতাদের বৈঠক হবার কথা রয়েছে। কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়েই মূলত এই বৈঠক বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান শনিবার বলেন, কিছু কিছু জেলায় এখনও ভার্চুয়াল আদালত কার্যক্রম শুরু হয়নি। এসব জেলায় কি সমস্যা তা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। ওইসব জেলার আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে জেলা জজশিপের। সমস্যা সমাধানের চেস্টা চলছে। আশা করি চলতি সপ্তাহেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দেশের সকল জেলায়ই আদালত চালু হয়ে যাবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকায় ভার্চুয়াল আদালত চালু করতে রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারির জন্য অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করা করা হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই আবেদন পাবার পর রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার আলোকে আইন মন্ত্রণালয় ৯ মে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে স্বশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ নামে গেজেট প্রকাশ করে। এই অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আদালতকে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
এই অধ্যাদেশ জারি পর সুপ্রিম কোর্টের বিচার কাজ পরিচালনার জন্য ভার্চুয়াল ব্যবস্থা হাইকোর্ট রুলস-এ অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কারণে পরদিন ১০ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে ফুলকোর্টসভা হয়।
এই সভা শেষে ওইদিনই সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরে আদালতের জন্য ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ এবং আইনজীবীদের জন্য ‘ভার্চুয়াল কোর্টরুম ম্যানুয়াল’ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়াও আপিল বিভাগের চেম্বার জজ এবং হাইকোর্টে ভার্চুয়াল বেঞ্চ গঠন করা হয়।
এরপর দিন ১১ মে থেকে হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতে অনলাইন বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমদিন হাইকোর্টে আবেদন দাখিল করা হয়। আর সারা দেশের নিম্ন আদালতের মধ্যে শুধুমাত্র কুমিল্লার আদালতে একটি জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে একজনের জামিন মঞ্জুর করা হয়। পরদিন ১২ মে ১৫টি জেলায়, ১৩ মে ৩৬টি জেলায় এবং ১৪ মে ৪৬ জেলায় আদালত কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সারা দেশে নিম্ন আদালতে ১১ মে একজন, ১২ মে ১৪৪ জন, ১৩ মে ১০১৩ জন এবং ১৪ মে ১৮২১ জনের জামিন মঞ্জুর করা হয়।
উল্লেখ্য, করোনাবাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে তালমিলিয়ে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ক্রমেই সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ছে। এরইমধ্যে সরকার সাধারণ ছুটির মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে।