লকডাউন অমান্য করে সিলেটে ট্রেন আসার ঘটনা, ২৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি

21

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিলেটে লকডাউন ভেঙ্গে ঢাকা থেকে একটি ট্রেন আসা-যাওয়া করায় প্রশাসনে তোলপাড় চলছে। ট্রেনটি আসার ব্যাপারে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদেরও কিছুই জানানো হয়নি।
করোনা ভাইরাসের কারণে সারা দেশে ট্রেন চলাচলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্রেন আসায় দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। জনমনে দেখা দিয়েছে নানা আতঙ্ক।
লকডাউন অমান্য করে রবিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় ২৩ জন যাত্রী নিয়ে যায়। এর আগে গত শনিবার বিকাল ৫টায় ঢাকা থেকে একটি ট্রেন ৩টি বগি নিয়ে সিলেটে এসে পৌঁছে।
এ সময় ট্রেনে ৫৪ জন যাত্রী ছিলেন। বাকি ৩১ জন যাত্রী গেল কোথায় এর কোনো হদিস মিলছে না। রেল স্টেশন কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পারছে না।
এ সব যাত্রী কারা, কোথা থেকে কী কারণে এসেছে তার কোনো সঠিক জবাব মিলছে না।
স্টেশনের কর্মকর্তারা প্রথমে বিষয়টি গোপন করতে এলোমেলোভাবে কথা বলেন। ২৩ জন যাত্রী নিয়ে ট্রেন আসছে এমন তথ্য নিশ্চিত করে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। পরে ঢাকা থেকে অধিক যাত্রী নিয়ে আসার তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।
খবর পেয়ে রোববার সকালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরশাদ মিয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ৫৪ যাত্রীর বিষয়টি নিশ্চিত হন। বাকি যাত্রী কারা, কোথা থেকে এসেছে, কোথায় গেল, কী কারণে এসেছে এ সব প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেনি স্টেশন কর্তৃপক্ষ। যে কারণে স্টেশন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠেছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরশাদ মিয়া বলেন, প্রথমে স্টেশন কর্তৃপক্ষ ২৩ জন যাত্রী নিয়ে আসছে ও ছেড়ে যাওয়ার কথা জানান। পরে ফুটেজ খতিয়ে দেখে ৫৪ জন যাত্রী আসছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বেআইনি কাজ করায় স্টেশন ম্যানেজারসহ ২৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসন থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যারা লকডাউন ভেঙ্গে যাত্রী এনেছে এরা কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।
স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমান জানান, স্টেশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নিয়ে ৩টি বগি আসছে। রোববার ট্রেনটি ২৩ জন যাত্রী ছেড়ে গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ৭/৮ জন থাকার কথা।
এত যাত্রী কোথা থেকে এল এমন প্রশ্নের জবাবে স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমান বলেন, পথে স্টেশনে ট্রেনটি থেমে থেমে আসছে তাই রাস্তা থেকে উঠতে পারে।
এ ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকডাউন নতুন তাই বুঝতে পারিনি।
এ ব্যাপারে সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যহানির কথা বিবেচনা করে লকডাউন দেয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আরেক দল আইন মানবে না এটা হতে পারে না।
তিনি বলেন, লকডাউন যারা ভঙ্গ করেছে তাদের খুঁজে আইনের আওতায় আনা জরুরি। যে ৩১ জন রেখে গেছে এটি ভয়ংকর তথ্য। অচিরেই বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়। এ দিকে সিলেটকে গত ১১ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সিলেটের বাইরে যাওয়া ও প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। আইন ও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি আসায় সিলেটবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।