করোনায় অর্ধেক দেশই অবরুদ্ধ

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার ৩৯ দিনের মাথায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ৪৩ জেলায়; এর মধ্যে ৩০ জেলাকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ অন্য কোনো জেলা থেকে কেউ এসব জেলায় প্রবেশ হতে পারবে না। এসব জেলা থেকেও কেউ বের হতে পারবে না। জেলার ভেতরে চলচলেও বিধিনিষেধ আছে।
করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় গত ২৬ মার্চ থেকে সব ধরনের অফিস-আদালত বন্ধ, আকাশ, নৌ ও সড়কপথে সব ধরনের যানবাহন চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সবাইকে বলা হয়েছে যার যার ঘরে থাকতে। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন জেলায় ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে অবরুদ্ধ জেলার সংখ্যা তত বাড়ছে।
এ পর্যন্ত যত রোগী শনাক্ত হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশই ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা। রাজধানীকে এখনো অবরুদ্ধ ঘোষণা করা না হলেও বিচ্ছিন্নভাবে অনেক এলাকায় ‘লকডউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। ৪৩ জেলায় ১ হাজার ৫৭২ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার পর বৃহস্পতিবার পুরো দেশকেই সরকার ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করেছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, কোনো জেলা অবরুদ্ধ ঘোষণা করার আগে প্রধানমন্ত্রীকে সে বিষয়ে অবহিত করতে হয়।
আর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ বলছে, সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কোনো জেলাকে ‘কনটেইনমেন্ট জোন’ হিসেবে অবরুদ্ধ ঘোষণা করে। জেলার সিভিল সার্জন ওই কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে থাকেন।
অবরুদ্ধ জেলা : ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, রাজবাড়ী, নরসিংদী, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর।
চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চাঁদপুর। রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ ও রাজশাহী। রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও দিনাজপুর। বরিশাল বিভাগের বরিশাল ও পিরোজপুর। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ।
ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুর। এসব জেলার বাইরে আরো কয়েকটি উপজেলা এবং কয়েকটি অঞ্চল লকডাউনে রয়েছে বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান।
এদিকে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনু বিভাগ) আ. গাফ্ফার খান বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক নিজে লকডাউন ঘোষণা করতে পারেন। তিনি সিভিল সার্জনকে সেই ক্ষমতা দিলে সিভিল সার্জনও লকডাউন করে দিতে পারেন।
জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায় করেনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব গাফ্ফার বলেন, পরিস্থিতি বুঝে কোনো জেলা অবরুদ্ধ করা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো অঞ্চলও অবরুদ্ধ করা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসন লকডাউনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আইনপ্রয়োগ করছে পুলিশ এবং সশস্ত্র বাহিনী। এর বাইরে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের সঙ্গে কাজ করছেন। রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেওয়া, দোকানপাট বন্ধ রাখার কাজ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে সমন্বয়টা করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
সরকারের অনুমতি নিয়ে কোনো জেলাকে অবরুদ্ধ করতে হয় জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে যোগাযোগ করে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন, সেখান থেকে সিগন্যাল নিয়েই লকডাউন করা হয়। কোন জায়গা অবরুদ্ধ হচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রীর নলেজে দেওয়া হয়। সেখানকার পরিস্থিতিটা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়।
এছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রত্যেক বিভাগে বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি ও বিভাগীয় পরিচালককে (স্বাস্থ্য) সদস্য সচিব করে ১২ সদস্যের একটি করে কমিটি রয়েছে। সব জেলায় জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও সিভিল সার্জনকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যের একটি করে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে প্রতি উপজেলায় একটি করে কমিটি করা হয়েছে।