কাজিরবাজার ডেস্ক :
সৌদি আরবে নারী কর্মীদের সুরক্ষার দায়-দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে নিতে হবে। অতীতে নারীকর্মী সৌদি আরব যাওয়ার পর তিন মাস পর্যন্ত দায় বহন করত রিক্রুটিং এজেন্সি। এখন থেকে নারীকর্মীরা যতদিন সৌদি আরব থাকবেন তার দায়-দায়িত্ব সৌদি ও বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা। সৌদি আরর সফর শেষে সোমবার ইস্কাটন প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সচিব বলেন, সৌদিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হযেছে। নারীকর্মীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য উভয় দেশের ভূমিকা থাকতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যে সব রিক্রুটিং এজেন্সি সৌদিতে নারী কর্মী পাঠান ও সৌদিতে যে সব এজেন্সি রয়েছে উভয়পক্ষেরই দায়িত্ব রয়েছে নারী কর্মীদের সুরক্ষা দেয়ার। কোন নারীকর্মী নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার না হন তার ব্যবস্থা এজেন্সিদের ওপর পড়ে। সৌদি কর্তৃপক্ষও এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তারাও বাংলাদেশের নারী কর্মীদের বিষয়ে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন। গত ২৭ নবেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সৌদির শ্রম ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে তৃতীয় জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সেলিম রেজা ও সৌদি শ্রম ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি এ্যাসিসটেন্ট মন্ত্রী জাবের আব্দুর রহমান আল মাহমুদ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সৌদি প্রতিনিধি দলে শ্রম মন্ত্রণালয় ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শ্রম সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির সভায় নেয়া আরও সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে- নারী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে এ সংক্রান্ত আইটি প্ল্যাটফর্ম ‘মোসানেদে’ কর্মীর বিস্তারিত ঠিকানা, সৌদি ও বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নিয়োগকর্তার পূর্ণ যোগাযোগের ঠিকানা, নারীকর্মীর নিয়োগকর্তা পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্যাদি, নারীকর্মীর আগমনের তারিখ এবং নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তরের তারিখ, প্রত্যাবর্তনকারী গৃহকর্মীর ‘এক্সিট’ সংক্রান্ত সব তথ্য অনলাইনে ‘আপগ্রেড’ দেয়া থাকবে। দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সহজেই কোন নারী কর্মী চাকরি নিয়ে কোন কোফিলের বাসায় গেলেন। আবার তিনি কবে দেশে ফিরে আসলেন। সব তথ্যই থাকবে অনলাইনে একটি কমন সার্ভারে।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ইতোমধ্যে নিয়োগকর্তা পরিবর্তন, নতুন চুক্তি নবায়ন ও এক্সিট এছাড়া অন্যান্যও তথ্যও হালনাগাদ করা হয়েছে। বাকি তথ্য হালনাগাদের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব। এছাড়া সৌদি কর্তৃপক্ষ মোসানেদ সিস্টেমে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি ‘এ্যাপ্রুভাল উইন্ডো’ স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করবে সৌদি কর্তৃপক্ষ। যেসব নারীকর্মী কাজ ছেড়ে পলাতক রয়েছেন তাদেরকে পুলিশ কোনভাবেই নিয়োগকর্তার কাছে হস্তান্তর করবে না।
ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, নারীকর্মীরা কর্মকাল পূর্ণ করলে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এজেন্সি বহন করবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবে। যদি নারীকর্মী মেয়াদ শেষে কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই চুক্তি নবায়ন করতে হবে। নবায়ন করার কাজটি বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। চুক্তি নবায়নের পর সংশ্লিষ্ট এজেন্সি এ সংক্রান্ত তথ্য মোসানেদে আপলোড করবে। আদালতে মামলা করার পদ্ধতি আরও সহজ করার বিষয়ে দু’পক্ষ একমত হয়। বিষয় সৌদি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোকে জানাবে। সব কর্মী যাতে চুক্তির কপি পেতে পারেন এ লক্ষ্যে সৌদি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীদের বিদ্যমান স্বাস্থ্য বীমা পর্যাপ্ত নয়, অসুস্থ কর্মীদের চিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্য বীমা করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ কোম্পানি বা নিয়োগকর্তাদের বাধ্য করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে বলা হয়েছে।