স্পেন থেকে সংবাদদাতা :
স্পেনে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। ইউরোপের এই দেশটি মহামারি করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত। দেশটিতে একদিনে নতুন করে আরও ৮০৯ জন কোভিড-১৯ রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। স্পেনে করোনায় মৃতের সংখ্যা এখন ১১ হাজার ৯ শত ৪৭ জনে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার (৪ এপ্রিল) এই হিসাব দিয়েছে।
এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশি একজনের মৃত্যু এবং ৭০ জন বাংলাদেশি আক্রান্ত হওয়ায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছেন কতজন এ বিষয় জানতে দূতাবাসের হট লাইনে কল করা হলে ৭০ (মাদ্রিদ ৫৯জন,বার্সেলোনা ৯) জন বলে জানান বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।
সাম্প্রতিক সময়ে ‘রেড জোন’এর ফলে এদের অধিকাংশই আয়-রোজগার বঞ্চিত হয়ে সপরিবারে দুর্বিষহ দিন যাপন করছে। স্থানীয় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় বাংলাদেশি সামাজিক সংগঠন প্রায় ২ হাজার অসহায় ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে চাল, ডাল, তেলসহ অতি প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহের কার্যক্রম শুরু করেছে। বাংলাদেশ দূতাবাসও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। ইতিমধ্যে দূতাবাস ৩ শত অসহায় ব্যক্তির নাম ও সংগ্রহ করছে। শিগ্রই তা সরবরাহ করা হবে বলে জানান দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মুহাম্মদ মুহতাসিমুল ইসলাম।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্পেনে চলমান জরুরী অবস্থার মেয়াদ তৃতীয় দফা আবারো বাড়ানো হয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী দেশটিতে আরও দুই সপ্তাহ এ স্টেট অব এলার্ট চলবে।
দেশের জাতীয় সতর্কতার মেয়াদ আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউরোপে করোনায় বিপর্যস্ত দেশ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো শানচেজ বলেছেন, ‘আমরা এখন আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি।’
জাতীয় সতর্কতার কারণে দেশটিতে মানুষের চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ রয়েছে। সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। স্পেনের সরকার গত মঙ্গলবার এই জাতীয় সতর্কতার অনুমোদন চাওয়ার পর দেশটির পার্লামেন্ট এই অনুমোদন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘আরও দুই সপ্তাহ নির্জন ঘরে একাকী থাকা কতটা কঠিন তা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সংকটের মুখে এছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। আরও কয়েক সপ্তাহ আমাদের এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক পরিবারকে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। যারা তরুণ তারা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাও। যারা বয়স্ক মানুষ আছেন, আপনারা নিজেদের সুরক্ষিত রাখুন। আপনারা এই মুহূর্তটিতে যা করা দরকার তাই করবেন।’
মহামারি করোনার ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কতটা শান্ত ও স্থির থাকতে পারি এই দিনগুলো সেই পরীক্ষাই নিচ্ছে। এই দিনগুলো হলো উন্মাদের মতো। এটা আমাদের নিজ নিজ পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে শঙ্কিত করেছে। আমাদের জীবনে এই দিনগুলোই সবচেয়ে কঠিন দিন।’
এর আগে ১৩ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত প্রথম দফা এবং ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২য় দফা বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিতে আশঙ্কাজনক হারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্টেট অব এলার্ট জারি থাকবে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত।
উল্লেখ্য গত শনিবার (৪এপ্রিল) একদিনেই রেকর্ডসংখ্যক ৯৫০ জন মারা গেছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১ হাজার ৯ শত ৪৭ জনে।এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ১৬৮ জন। এর মধ্যে ৬ হাজার জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
প্রতিবেশি দেশ ইতালির পর স্পেনে এ ভাইরাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মানুষ মারা গেল। এদিকে স্পেনে এখন পর্যন্ত ৭০ প্রবাসী বাংলাদেশি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের একজনের মৃত্যু হয়েছে।