বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক। মহাসড়কে ডিভাইডার তৈরি করা হয়েছে। শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আবার অনেক দুর্ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে আসে না। ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, দুর্ঘটনার সব খবর নথিভুক্তও হয় না। এর মধ্যে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ডও বলা যায়। লাইসেন্সহীন অদক্ষ চালকের হাতে, এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। বহু ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে রাস্তায়, যেগুলোর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা রয়েছে। অনেক চালক রাত-দিন গাড়ি চালায়। অত্যধিক ক্লান্তি এবং গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়। এসব কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। যাঁদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা তাঁরাও উদাসীন। ফলে এসব দুর্ঘটনাকে অনেকেই দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ডই বলে থাকেন। সড়কের এই নিরাপত্তাহীনতা কি চলতেই থাকবে?
গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত ২০ ঘণ্টায় দেশের ৯ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত হয়েছেন। হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, কুমিল্লা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও পঞ্চগড় জেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। রাজধানীর বনানীতে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জে লরির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে এক বাসচালকের সহকারী নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন আরো ১০ জন।
আমাদের দেশে চালকদের বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তাঁদের অনেকেই আধুনিক সড়ক নির্দেশনা বুঝতে অক্ষম। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আমরা কোনো মতেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। প্রতিদিনের এই মৃত্যুও কাম্য নয়। এ জন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য চালক ছাড়া কারো হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া যাবে না। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। সড়কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। অনিয়মকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। আমরা মনে করি, দুর্ঘটনা নামের হত্যাকাণ্ড রোধে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।