সমন্বিত নয়, সমমনাদের ৪ গুচ্ছে ৪ ধাপে ভর্তি পরীক্ষা

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের সবচেয়ে বড় পাঁচ বিশ^বিদ্যালয়ের সমর্থন না পেয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ থেকে সরে আসল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)। এবার ‘সমন্বিত’ পরীক্ষার পরিবর্তে সমমনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চারটি গুচ্ছে ভাগ করে চার ধাপে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কমিশন। মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি গুচ্ছ করে, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য অপর একটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে।
বুধবার ইউজিসি মিলনায়তনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকের পর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ এ ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি বলেন, চারটি ধাপে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হলেও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, ব্যবসা শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে তিনটি ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে আলাদাভাবে। এ ভর্তি প্রক্রিয়ায় দেশের ৩৪ বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করবে। এর আগে এক মাস ধরে সকল বিশ^বিদ্যালযে একইসঙ্গে বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে কয়েক দফা আলোচনার পর উদ্যোগের বিরোধিতা করে নিজেদের মতো পরীক্ষার ঘোষণা দেয় বড় বিশ^বিদ্যালয়গুলো। গত এক সপ্তাহে যথাক্রমে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় (চবি), ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (ঢাবি), রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় (রাবি) ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয় (জাবি)।
এসব বিশ^বিদ্যালয় উদ্যোগের বাইরে চলে যাওয়ায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মাঝে আগ্রহ ছিল প্রচুর। এ অবস্থায় পরবর্তী করণীয় ঠিক করতেই বুধবার উপাচার্যদের নিয়ে জরুরী বৈঠক আহ্বান করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।
বৈঠকের পর ইউজিসি চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে তাদের নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়টি তুলে ধরেন। চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে চারটি ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। তবে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে আলাদভাবে তিনটি গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে। তবে এ পদ্ধতিতে দেশের ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করবে বলে চূড়ান্তভাবে জানিয়েছে। আমরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছি, যারা আসবে তাদের সবাইকে নিয়ে আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে যুক্ত করব।
তিনি বলেন, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ পদ্ধতিকে সাধুবাদ জানালেও তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে তারা যুক্ত হতে পারছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে আমাদের চেষ্টা ও দরজা খোলা থাকবে। যারা এতে যুক্ত হতে যাবে তাদের নেয়া হবে।
ইউজিসির সদস্য মোঃ আলামগীর জানান, মার্চের প্রথম সপ্তাহে আবারও বৈঠক করে পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। তারা উপকমিটি তৈরি করে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন, প্রশ্ন পদ্ধতি প্রণয়ন, ফল প্রকাশসহ যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আগের মতো প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন নেয়া হবে। আবেদনকারীদের রোল নম্বর অনুযায়ী গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা আয়োজন করে সেই অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফল পাঠিয়ে দেয়া হবে। সবকিছু কেন্দ্রীয় কমিটি ও উপ-কমিটির সদস্যদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত কলেজগুলোতেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।
বৈঠকের বিষয়ে উপস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষাকে সবাই সমর্থন করেছেন। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কাউন্সিল কমিটির সদস্যদের সম্মতি না থাকায় এতে যুক্ত হতে পারছে না বলে জানিয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা স্বয়ং রাষ্ট্রপতি প্রত্যাশা করেন। দেশের মানুষও তাই চায়। তারপরও এই প্রক্রিয়ায় কেউ পিছিয়ে থাকাটা দুঃখজনক। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজন করতে হবে। কেউ যেন এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান তিনি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, প্রথমে সকলে সমন্বিত পদ্ধতিকে সমর্থন জানালেও এখন কেন কেউ কেউ পিছিয়ে যাচ্ছে? যা কেউ আশা করে না। যেসব সমস্যার কারণে অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছে, তা চিহ্নিত করে সমাধানের মাধ্যমে সবাইকে যুক্ত করতে হবে।