কে.এম.লিমন গোয়াইনঘাট থেকে :
সিলেটের পাথর কোয়ারী এলাকায় দীর্ঘ দিন থেকে কর্মক্ষেত্র বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। শ্রমিকরা বেলচা, টুকরীসহ প্রতিদিন কোয়ারী এলাকায় কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসলেও সারাদিন অপেক্ষা করে কোথাও কাজ না জুটায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারী জাফলং, ভোলাগঞ্জ, লোভাছড়া ও শ্রীপুরসহ সব কয়টি কোয়ারী এলাকার কয়েক লক্ষ শ্রমিকের বর্তমান চিত্র। কোয়ারী সচল থাকলে সিলেটসহ দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে নিজের জীবন মান উন্নয়নসহ দেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিকে আরো মজবুত করেন।
শুধু শ্রমিক নয়, বেকায়দায় পড়েছেন এবার ব্যবসায়ীরাও। দীর্ঘ দিন থেকে কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় পাথরের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হতে চলেছে জাফলং, ধূপাগুল, ভোলাগঞ্জসহ উত্তর সিলেটের ক্রাসিং জোন এলাকা। কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ওই সব ক্রাসার এলাকা শ্রমিক শূন্য হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট পেশা ছাড়া অন্য কোন পেশা জানা না থাকায় সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর এলাকার পাথর শ্রমিক পরিবারে চরম অভাব দেখা দিয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন হত দরিদ্র শ্রমিকেরা। বর্তমানে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাশাপাশি ইতিমধ্যে সিলেট জেলায় কোয়ারী বন্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মাছ বাজার, সবজি বাজার, ফার্মেসি ব্যাবসা, সেলুন ব্যাবসা, কাপড়ের বাজারসহ জেলার প্রত্যেকটি হাটবাজারের ক্ষুদ্র ও মাঝারী ধরনের ব্যাবসায়ীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় মামার বাজারের ক্ষুদ্র মাছ বিক্রেতারা জানান পাথর কোয়ারী গুলো খোলা থাকা অবস্থায় ফেব্রুয়ারী মাসে প্রতি দিন ৩০/৩৫ হাজার টাকার মাছ ক্রয় করে ২/৩ ঘন্টা সময়ের মধ্যে বিক্রি করা যেত। বর্তমানে দৈনিক ৫/৬ হাজার টাকার মাছ ক্রয় করে গভীর রাত ১১/১২টা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেও বিক্রি করা সম্ভব হয়না।
স্থানীয় সবজি চাষি ও ক্ষুদ্র সবজি বিক্রেতা রহিম মিয়া জানান, পাথর কোয়ারী গুলোকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর আমাদের এলাকায় স্থানীয় ও বহিরাগত লাখ লাখ শ্রমিক কোয়ারীতে জড়ো হন। তাই কোয়ারী খোলার উপর নির্ভর করে ১০/১২ একর জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ করেছিলাম। আমার মতো কয়েক শতাধিক চাষি হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। সবজির ক্রেতা না থাকায় নাম মাত্র মূল্যে তা বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতা না থাকায় অনেক চাষির জমিতে লাখ লাখ টাকার সবজি নষ্ট হচ্ছে। হাদার পারের ফার্মেসী ব্যাবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, অন্যান্য বছর এ সময়ে প্রতিদিন শত-শত শ্রমিক ও মালিকের ভিড় জমাতেন ফার্মেসী এলাকায় ঔষধ ক্রয়ের জন্য। শুধু মাছ,সবজি ও কাপড় চোপড়ের বাজারে নয় জেলার প্রত্যেকটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ প্রতিটি জিনিসপত্রে পাথর কোয়ারীর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
ইতিমধ্যে সিলেটের সকল পাথর কোয়ারী খুলে দেওয়ার দাবিতে সকল শ্রেণি পেশার মানুষেরা জড়ো হয়ে আন্দোলন করেছেন। এছাড়া জাফলং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, বিছনাকান্দি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ভোলাগঞ্জ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও শ্রীপুর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের শ্রমিকেরা পাথর কোয়ারী সচলের দাবিতে পৃথক পৃথক মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেছেন।
বিভিন্ন মানববন্ধন কর্মসূচীতে শ্রমিকেরা ‘ভাত চাই না হলে কাজ চাই’ এই শ্লোগানে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
এ ব্যাপারে জাফলং পাথর কোয়ারী এলাকার ব্যবসায়ী ও মোহাম্মদপুর মিতালী সবুজ সংঘের সভাপতি রুবেল আহমেদ বলেন, পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকার কারণে কোয়ারী এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। যে কারণে কর্মহীন মানুষের হাহাকার পরিলক্ষিত হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুস সাকিব জানান, বিদ্যুৎ জালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ইজারা বিহীন কোয়ারী এবং যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট পাথর কোয়ারী গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং পাথর কোয়ারী বন্ধ রাখতে উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, পাথর শ্রমিকের মানবেতর জীবনের কথা বিবেচনা করে পাথর কোয়ারীগুলো জরুরী ভিত্তিতে খুলে দেওয়ার জন্য।