কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে পূজা এন্টারপ্রাইজ নামে এক মোদী দোকানের নগদ ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সাথে স্যানিটারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক কর্তৃক ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার অভিযোগে ও অভিযুক্তের অপসারণ দাবি করে ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ীরা এক ঘন্টা দোকানপাঠ বন্ধ রেখে ভানুগাছ চৌমুহনায় বিক্ষোভ মিছিলসহ পথসভা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বিকাল ৪টায় এ ঘটনাটি ঘটে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টার দুলাল মিয়া পরিদর্শনের নামে ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ীদের নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধভাবে উৎকোচ আদায়ের করে ব্যবসায়ীদের হযরানী করে আসছেন। বুধবার ১৯ ফেরুয়ারী সকাল ১১টায় ভানুগাছ বাজারের লোকনাথ ষ্টোরে গিয়ে নানা ভাবে বাহনা দেখিয়ে উৎকোচ দাবী করেন এবং হাকিমপুরী জদ্দা বস্তায় করে আসার সময় মাছ বাজারের এক ব্যবসায়ী আপত্তি করে এবং এ সময় পাশ^বর্তী দোকান পুজা ষ্টোরের ম্যানেজার ঝলক দত্ত ভিডিও করলে তাকে হুমকি দেন তার দোকানে জরিমানা করা হবে। এ ঘটনার পর বিকাল ৩টায় কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসা (চলতি দায়িত্ব) ও সহকারী কমিশনার ভূমি নাসরিন চৌধুরী নেতৃত্বে ভানুগাছ বাজারের পুজা ষ্টোরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে প্লাস্টিক ব্যাগ রাখার অপরাধে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু মালিক না থাকায় ম্যানেজার ঝলক দত্ত টাকা পরিশোধ না করায় তাকে আটক করে। এ খবর ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক ব্যবসায়ীরা অভিযুক্ত স্যানিটারী ইন্সপেক্টার দুলাল মিয়ার অপসরানের দাবিতে দোকান পাট বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করে। ব্যবসায়ীরা সমবেত ভানুগাছ চৌমুহনী মোড়ে কমলগঞ্জ- শ্রীমঙ্গল সড়ক অবরোধ করলে যানচলাচল বন্ধ হযে পড়ে। খবর পেয়ে কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমেদ, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ আরিফুর রহমান, ভানুগাছ পৌর বাজার বলিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. মো. সানোয়ার হোসেন, পৌর কাউন্সিলর মো. আনোয়ার হোসেনসহ বাজার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ছুটে আসে। তারা ব্যবসায়ীদের শান্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে রাস্তা থেকে সরে যাবার অনুরোধ করেন এবং অভিযুক্ত কমলগঞ্জ উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টার দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দেন এবং ইউএনও সাথে কথা বলে আটক দোকান কর্মচারীকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন বলে আশা^স দেন। তারপরও ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও ধর্মঘট অব্যাহত রাখেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে ব্যবসায়ীরা স্যানিটারী ইন্সপেক্টার দুলাল মিয়ার ঘুষ-দুর্নীতির অনিয়মের কথা তুলে ধরে অপসারনের দাবী করেন। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ভানুগাছ পৌর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. মো. সানোয়ার হোসেন, যুগ্ন সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তৈমুর, ব্যবসায়ী আনহার আলী, কেশব পাল, পৌর কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন ও ব্যবসায়ী সুব্রত দেবরায় প্রমুখ। ধর্মঘট চলাকালে ভানুগাছ বাজারে সবকয়টি দোকান বন্ধ থাকে। অচলাবস্থা নিরসনে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) নাসরিন চৌধুরী ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম ভুইয়া সাথে পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমেদ ও ওসি আরিফুর রহমান টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। আটক ম্যানেজার ঝলক দত্তকে ছেড়ে দেয়া হয়। এবং প্রায় ২ ঘন্টার পর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম ভুইয়া প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে স্যানিটারী ইন্সপেক্টারের বিরুদ্বে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দেন। তার আশ^াসে বিকাল সাড়ে ৫ টায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যান ব্যবসায়ীরা।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টার দুলাল মিয়া তার বিরুদ্বে আনা অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানান এবং অভিযানের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমেদ বলেন, বিষয়টি দু:খজনক। ব্যবসায়ীদের এভাবে হয়রানী করা সঠিক নয়। তবে প্রশাসনের সাথে আলাপ করে দ্রুত সমাধান করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কশিনার ভুমি নাসরিন চৌধুরী বলেন, ভানুগাছ বাজারে একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে ৮ হাজার জরিমানা করা হয় এবং পরে আটক কর্মচারীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। স্যানিটারী ইন্সপেক্টার দুলাল মিয়া প্ররোচনায় অভিযান করা হয়েছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি আমার নিজ হতে অভিযান চালিয়েছি। কেউ প্ররোচনা দেয়নি। ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ সভা সম্পর্কে তিনি বলেন, অভিযুক্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যবসায়ীদের এ আশ্বাস প্রদানে তিনি থানার ওসি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তিনি পাঠিয়েছেন বলেও জানান।