মৌলবীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
১৭ জন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবীর আলোর পথে ফিরে আসার মাধ্যমে একটি ইউনিয়ন মাদকমুক্ত ঘোষণা করা হলো।
১৯ ফেব্র“য়ারী বুধবার বিকেলে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৮নং কনকপুর ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত ঘোষণার মাধ্যমে সারা জেলায় এই কার্যক্রমের শুরু হলো।
ক্রমান্বয়ে মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলার সব ইউনিয়ন মাদকমুক্ত করা হবে।
মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার আয়োজনে ও কনকপুর ইউনিয়নের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বিপিএম (বার)।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, দেশে ৭০ লাখ মাদকসেবীদের মধ্যে ৩০ লাখ-ই ইয়াবা সেবী। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী। এটি একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা ও উদ্বেগের বিষয়। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন ১৩৫ কোটি টাকার মাদক বিক্রি হচ্ছে। যার সারা বছরের হিসেবে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে প্রতিদিনই একটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। তাই এটি অর্থনীতি, সমাজসহ সবক্ষেত্রেই এক নম্বর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের ৩০টি রুটের ৫১২টি পয়েন্ট দিয়ে এই মাদক দেশে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়েও মাদক দেশে প্রবেশ করছে। তাই এসব উৎস্যমুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) পরিমল দেব এর সঞ্চালনায় এবং মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফজলুল আলী, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফুল ইসলাম, কনকপুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সালেহ এলাহী কুটি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার জামাল উদ্দিন, টাউন কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শামসুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আক্তারুজ্জামান, একাটুরা ইউপি চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান, মোস্তফাপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ রুমেল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, এডভোকেট পার্থ সারথী দাস, কনকপুর ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) বলেন, আমাদের দেশে ৭০ লক্ষ মানুষ মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িত। কিন্তু আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছি। তিনি বলেন, আমি আজ খুবই খুশী। কারণ এজেলায় যোগদান করার পর আমার টার্গেট ছিলো প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে মাদক সেবন ও ব্যবসা বন্ধ করার কার্যক্রম শুরু করবো। ৬ মাস পর আজ থেকে শুরু হলো এই কার্যক্রম। তাই আমি আশা করছি ক্রমান্বয়ে সারা জেলা একদিন মসাদকমুক্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি গত ৬ মাসে এটা বুঝেছি যে, এজেলার রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ীদের কেউই মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। তাই সকলের সহযোগিতায় আমরা জেলাকে মাদকমুক্ত করতে পারবো।
অনুষ্ঠানে গত ৬ মাসে ৪৬৭টি মামলা, ৬২১জন গ্রেফতার, ১৮ হাজারেরও বেশি ইয়াবা আটক, ৩ হাজারেরও বেশি চোলাই মদ, ৩৭ কেজির বেশি গাঁজা উদ্ধার, ১১২ বোতল বিদেশী মদ, ১৪১ বোতল ফেনসিডিল, ৯ গ্রাম হেরোইন ও ৩৭৫ লিটার ওয়াস উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।