উহান থেকে আসা ৩১২ জন সুস্থ, কোয়ারেন্টাইন থেকে বাড়ি ফিরেছেন

13

কাজিরবাজার ডেস্ক :
চীনের উহান থেকে আসার পর পর্যবেক্ষণে রাখা ৩১২ জন সুস্থ রয়েছেন এবং তাদের কারো মধ্যে ভাইরাসের কোন লক্ষণ-উপসর্গ নেই। ১৪ দিন ধরে তাদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন রাখা হয়েছিল। শনিবার বিকেল ৫টায় শুরু হওয়া চূড়ান্ত স্ক্রিনিং কার্যক্রম চলে রাত পর্যন্ত। এখন তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাবেন। যারা শনিবার রাতে যেতে পারবেন না, তারা রবিবার যেতে পারবেন। বাড়িতে চলে যাওয়ার পরও তাদের আইইডিসিআরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পর্যবেক্ষণে রাখা ৩১২ জনের চূড়ান্ত স্ক্রিনিং শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা (আইইডিসিআর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী সব কিছু করা হচ্ছে। চূড়ান্ত স্ক্রিনিং সম্পন্ন করার পরই তাদের পাসপোর্টসহ অন্যান্য ডকুমেন্টস তুলে দেয়া হয়েছে। তারা এখন স্বাধীন, তবে অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে তাদের মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়ে যেতে পারেন। এখান থেকে চলে যাবার পর তাদের করণীয় কী হবে সে সম্পর্কেও তাদের বলে দেয়া হয়েছে। তাদের আগে একটি স্বাস্থ্য ফর্ম দেয়া হয়, যাতে তারা নিজেরাই করোনাভাইরাসের উপসর্গ আছে কীনা জানিয়ে সেটি পূরণ করেন।
স্ক্রিনিং পদ্ধতি সম্পর্কে পরিচালক ডাঃ ফ্লোরা আরও জানান, চারটি ডেস্ক করা হয়। সেখানে একসঙ্গে স্ক্রিনিং শুরু হয়, চিকিৎসকরা তাদের দেখেন। কোন লক্ষণ না পাওয়া গেলে ফর্মে চিকিৎসকরা স্বাক্ষর করেন। চারটি ডেস্কে তাদের পাসপোর্টসসহ অন্য ডকুমেন্টস রাখা হয়, সেখান থেকে তারা সেগুলো তুলে নেন। পরে আরও চারটি ডেস্কে কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করেছেন এমন সার্টিফিকেট তুলে দেয়া হয়। এভাবে তাদের পুরোকার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এগুলো সব মিলিয়ে, আমাদের সব কার্যক্রম পরিচালনা করার পর শেষ হতে রাত হয়ে যায়। এরপর তারা ফ্রি। তাদের অনেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী হজ ক্যাম্প ত্যাগ করেন, তবে আমরা রবিবার পর্যন্ত তাদের থাকার ব্যবস্থা ওখানে রেখেছি।
অধ্যাপক ডাঃ ফ্লোরা আরও জানান, প্রতিটি জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সিভিল সার্জনসহ অন্যদের আহ্বান জানিয়েছিলাম। সেখানে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি গঠন করে প্রতিটি জেলা পর্যায়ে কভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম যেন পরিচালনা করা হয়। তাদের সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, চীন থেকে এলেই যেন তাদের আইসোলেশনে রাখার বা আতঙ্কিত হওয়ার পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন দুটো ভিন্ন বিষয় মন্তব্য করে ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যদি কাউকে আমরা করোনা আক্রান্ত সন্দেহ করা হয় অথবা করোনাতে সম্পর্কিত লক্ষণ-উপসর্গ থাকে তাদেরই কেবলমাত্র আইসোলেশনে রাখা হয়। কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে যারা করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বা করোনা আক্রান্ত এলাকা থেকে এসেছেন অথবা করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন তাদের রাখা হয়।
তিনি বলেন, কেউ একজন চীন থেকে এলেই রোগী নন। চীন থেকে এলেই তিনি করোনাতে এক্সপোজড নাও হতে পারেন। এখানে ভুল বোঝাবুঝি বা বিভ্রান্তি হচ্ছে। চীন বা সিঙ্গাপুর থেকে এলেই যে তিনি করোনা আক্রান্ত হতে পারেনÑ এটা নিয়ে বিভ্রান্তি হচ্ছে। আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তাদের ১৪ দিন বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। অত্যাবশ্যকীয় না হলে বাড়ির বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করছি আর বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করবেন।
কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অধ্যাপক ডাঃ ফ্লোরা বলেন, মাটিতে শুতে দিয়েছি। তবে এটা অবশ্যই খুশি মনে দেইনি। কিন্তু আমাদের এটা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। এমন কোন জায়গা ছিল না যেখানে ৩১২ জনকে একসঙ্গে কোয়ারেন্টাইন করতে পারতাম। সেদিক থেকে সবসময় নিশ্চিত করতে চেয়েছি, তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারি সেদিকেই ফোকাস করতে চেয়েছি। এমন কোন ইস্যু ছিল না, যেটা পূরণ করতে পারতাম কিন্তু করিনি। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের কিছু হলে আলাদা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার প্রয়োজন হলে ফর্মাল কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন পরিস্থিতি হলে তাদের যেন কোয়ারেন্টাইন করতে পারি। আমাদের সেভাবে আলাদা করে কোয়ারেন্টাইন করার মতো সেরকম জায়গা নেই। জায়গা থাকলে তাদের আমরা হজক্যাম্পে রাখতাম না। এরকম পরিস্থিতি আগে কখনও হয়নি যে এতজনকে কোয়ারেন্টাইন করতে হয়েছে। ৩১২ জনকে একসঙ্গে কোয়ারেন্টাইন করতে হয়েছে এটা আমাদের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। আর এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ জায়গাতেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু তারা উহান থেকে এসেছে এবং বেশ বড় গ্রুপ তাই তাদের এখানে রাখা হয়েছে একসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী। ১৪ দিনের ইনকিউবিশন পিরিয়ড পার হওয়ার পর যদি কারও মধ্যে কভিড-১৯ এর লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দেয়, তখন তার থেকেও কিন্তু ছড়াতে পারে। তাই আমরা অনুরোধ করছি আমাদের দেয়া তথ্যকার্ডে যখনই যারা বাইরে থেকে এসেছেন তারা নিজেকে প্রথমেই অন্যদের থেকে আলাদা করবেন, মাস্ক ব্যবহার করা এবং আইইডিসিআরকে অবহিত করা।
অধ্যাপক ডাঃ ফ্লোরা আরও বরেন, আমাদের প্রস্তুতি বা কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা রাখা হয়নি। সব পোর্টকে এ্যালার্ট করেছি। প্রথমদিকে চীনের ফ্লাইটকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হলেও পরে সেটা সব ফ্লোইটের ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে এখনও কিন্তু বেশি জোরদার চীন এবং সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট। এখনও রোগী শনাক্ত হয়নি দেশে, তাতে করে আইইডিসিআর সন্তুষ্ট কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্বে যতক্ষণ একজন রোগীও থাকবে ততক্ষণ সন্তুষ্টির জায়গা নেই। সতর্ক থাকতে চাই- ঝুঁকি মাথায় নিয়েই কাজ করছি। প্রস্তুতি কার্যক্রম চালাতে হবে। পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোর আরও বলেন, বাংলাদেশের চারজন আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন একজন, বাকিরা আইসোলেশনে আছেন। আমাদের নজরদারির একটা বড় অংশ হটলাইনের মাধ্যমে হয় এবং সেখানে ২৪ ঘণ্টায় ১২২টি কল এসেছে এবং এর মধ্যে কভিড-১৯ নিয়ে কল এসেছে ৯৩টি। গত ২৪ ঘণ্টায় আর কোন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। ৬২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সেখানে কারও শরীরে কভিড-১৯ এর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।