কাজিরবাজার ডেস্ক :
উহান থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে পর্যবেক্ষণে রাখা ৩১২ বাংলাদেশী আজ শনিবার বাড়ি ফিরতে পারবেন। বিকেল পাঁচটায় তাদের পর্যবেক্ষণের ১৪দিন পূর্ণ হবে এবং পাঁচটায় তাদেরকে আরেকবার চূড়ান্ত স্ক্রীনিংয়ের আওতায় আনা হবে। এই স্ক্রীনিংয়ে উত্তীর্ণ হওয়া চীনফেরত বাংলাদেশীদের নিজ নিজ বাড়িতে যেতে দেয়া হবে। করোনা নিয়ে বাংলাদেশের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন করোনাভাইরাস রোগী পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন রকমের ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ করে উচ্চপর্যায়ের যেসব দেশ চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশে সে তালিকাতে নেই। সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চারজনের মধ্যে একজন আইসিইউতে আছেন। করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতীয় রোগত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এসব তথ্য জানান।
আর প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে চীনে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৮২৩ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৭৫ জনে এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি। প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক ডাঃ ফ্লোরা আরও জানান, যেহেতু চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ অন্য দেশের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে তাই যাত্রীদের মাধ্যমে এই ভাইরাসের অনুপ্রবেশের একটা ঝুঁকি থাকে, তাই স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। এই প্রস্তুতি মানে এই নয় যে আমাদের অবস্থা অনেক জটিল, যে জন্য আমাদের আতঙ্কিত হতে হবে। যদি করোনা আক্রান্ত কোন রোগী শনাক্ত হয় তাহলে কিভাবে তাকে অন্যদের থেকে আলাদা রেখে তার কাছ থেকে যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেদিক মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিয়েছি। সারাদেশেই প্রস্তুতি রয়েছে। এতদিন যে পদ্ধতে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল তাতে করে দেড় থেকে দুদিন সময় লাগলেও এখন নতুন যে ‘রিএজেন্ট’ এসেছে তাতে করে দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে ফলাফল দিয়ে দেয়া সম্ভব।
অধ্যাপক ডাঃ সাব্রিনা ফ্লোরা আরও জানান, সিঙ্গাপুরে আরও কয়েকটি কেস শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে নতুন করে দুজন বাংলাদেশী রয়েছেন। সিঙ্গাপুরের মোট আক্রান্তের মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যা চারজন। এই চারজনই একই ক্লাস্টারভুক্ত অর্থাৎ প্রথম যিনি শনাক্ত হয়েছেন তার কন্টাক্টের ভেতরে বাকি তিনজন চিহ্নিত হয়েছেন। সিঙ্গাপুরে মোট ৫৭ জন শনাক্ত হয়েছেন।
নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে পরিচালক ডাঃ সাব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এ পর্যন্ত ৬২ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে এখনও নতুন এই করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এবং এই মুহূর্তে আইসোলেশনে কোন রোগী নেই, যাদের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের বাড়ি গিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আমাদের যারা হজ্ব ক্যাম্পে আছেন এক ফেব্রুয়ারি থেকে, আগামীকাল বিকেলে তাদের ইনকিউবিশন পিরিয়ড ১৪ দিন শেষ হবে। তারপর তাদের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ছেড়ে দেয়া হবে।
সিঙ্গাপুরে যে চারজন আছেন তাদের শারীরিক অবস্থা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম যিনি ভর্তি হয়েছিলেন তিনি আইসিইউতে আছেন, বাকিদের অবস্থা স্টেবল বা স্থিতিশীল। সিঙ্গাপুরে যাদের কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদের মধ্যে এখন আছেন বাংলাদেশী ছয়জন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম যে বাংলাদেশী রোগী ভর্তি হয়েছিলেন তার ১৯ কন্টাক্ট ছিল, তাদের মধ্যে ১০ দশজন রুমমেট, ৮ জন একইবাসে যাতায়াত করতেন আরেকজন তাদের প্রোগ্রাম ম্যানেজার। চীন থেকে যারা ফিরছেন তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উহানে যারা থাকেন বা অন্য কোন জায়গায় যারা করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যারা গেছেন কোয়ারেন্টান তাদের জন্য প্রযোজ্য। চীন থেকে যারা ফিরছেন তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে নিতে হবে বিষয়টি তা না মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে অতিরিক্ত সতকর্তা হিসেবে সাবধানতার অংশ হিসেবে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনের কথা বলা হয় যেন জনসমাগমে না যায় যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের লক্ষণ-উপসর্গ না থাকবে ততক্ষণ কিন্তু তার কাছ থেকে এই ভাইরাস ছড়াবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে বাংলাদেশ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কী কী সরঞ্জাম চেয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইইডিসিআরের ক্যাপাসিটির জন্য ল্যাবরেটরি টেস্টের জন্য যেসব রিএজেন্ট দরকার হয় সেটা পেয়েছি এবং আরও চেয়েছি। যেন বড় আকারের হলেও আমাদের সক্ষমতার ভেতরে থাকে। এছাড়া বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং সিস্টেমকে আরও জোরদার করার জন্য ১০ থার্মাল স্ক্যানার চাওয়া হয়েছে, পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুয়েপমেন্ট চাওয়া হয়েছে- কারণ এটা ওপেন মার্কেটে পাওয়া যায় না। আর স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটার কেনা হয়েছে।
সর্বশেষ স্ক্রিনিংকৃত যাত্রীদের বিষয়ে ডাঃ সাব্রিনা ফ্লোরা জানান, শুক্রবারও জল, স্থল ও বিমানপথে বাংলাদেশে আসা মোট ১৩ হাজার ৫৪২ যাত্রীর স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এনিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৮ জনের স্ক্রিনিং করা হয়েছে। শুক্রবার বিমান পথে ৭৮৬৯ জন, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরে ২৩৯ জন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে ৬২ জন এবং অন্যস্থলে বন্দরে স্ক্রিনিং করা হয়েছে ৫৬১১ জন যাত্রীকে।