আসামের এনআরসি ॥ ওয়েবসাইট থেকে তথ্য উধাও, আসছে ‘ভূমিপুত্র জরিপ’

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতে আসাম রাজ্যের জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) তথ্য তাদের ওয়েবসাইট থেকে উধাও হয়ে গেছে। গতবছরের ৩১শে অগাস্ট এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকেই তাদের ওয়েবসাইটে ওই তালিকা দেখা যেত। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে সেই তালিকা আর দেখা যাচ্ছে না।
এ নিয়ে আসামের একটা বড় অংশের মানুষদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে যে প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ গেছে, তাদের মধ্যে। তবে এনআরসি-র রাজ্য সমন্বয়ক হিতেশ দেব শর্মা অবশ্য বলছেন যে, এটি কেবল একটি সাময়িক কারিগরি সমস্যা।
দেব শর্মার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ‘ক্লাউড স্টোরেজে এই বিপুল পরিমান তথ্য রাখা ছিল উইপ্রো সংস্থার সঙ্গে একটি চুক্তির ভিত্তিতে। সেই চুক্তি গতবছর অক্টোবর মাসে শেষ হয়েছে। এর আগে যিনি সমন্বয়ক ছিলেন, তিনি ওই চুক্তি পুনর্নবায়ন করেন নি। তাই ১৫ ডিসেম্বর থেকে ক্লাউড স্টোরেজ পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ওই সংস্থাটি। আর আমি দায়িত্ব নিয়েছি ২৪শে ডিসেম্বর।’
তিনি আরও বলেছেন যে উইপ্রোর সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে এই সমস্যা নিয়ে এবং তাদের আশা কয়েকদিনের মধ্যেই আবারও এনআরসি-র পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেখা যাবে ওয়েবসাইটে।
এদিকে এনআরসি নিয়ে এই বিতর্কের মধ্যেই আসামে আবারও একটি জনসমীক্ষা শুরু হতে চলেছে। এবার শুধু ‘ভূমিপুত্র’ মুসলমানদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে এই সমীক্ষার মাধ্যমে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মুসলমানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে ওই সমীক্ষ। বাদ যাচ্ছে বরাক উপত্যকার বাসিন্দারা।
আসামের মুসলমানদের মোটামুটি দুটো বড় গোষ্ঠীতে ভাগ করা হয় – খিলঞ্জিয়া বা ভূমিপুত্র এবং ভাটি বা বঙ্গমূলের মুসলমান। অসমীয়া খিলঞ্জিয়া মুসলমানদের বসবাস কবে থেকে শুরু, তা নিয়ে দ্বিমত আছে।
কেউ মনে করেন মোগল-অহম যুদ্ধের পরে যে পরাজিত মুসলমান সৈন্যরা আসামে থেকে যান, তারাই আসামের প্রথম মুসলমান বাসিন্দা, কেউ আবার মনে করেন আসামে প্রথম মুসলমান বসতি আটশো বছর আগে থেকেই শুরু হয়।
অন্যদিকে ব্রিটিশ আমলেই ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার নানা অঞ্চলে কৃষিকাজের জন্য তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে মুসলমান কৃষকদের নিয়ে এসে জমি দিয়ে চাষে উৎসাহ দেওয়ার প্রথা শুরু হয়েছিল।
‘খিলঞ্জিয়া’বা ভূমিপুত্র মুসলমানদের সম্বন্ধে নতুন করে তথ্য কেন সংগ্রহ করতে হচ্ছে, এই প্রশ্নের জবাবে আসামের সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মুমিনুল আওয়াল বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার আসামের সংখ্যালঘু উন্নয়নে যা অর্থ বরাদ্দ করে, প্রায় সবটাই চলে যাচ্ছে বাংলাভাষী মুসলমানদের কাছে। কারণ তারা একই এলাকায় সংঘবদ্ধ ভাবে থাকে। অন্যদিকে খিলঞ্জিয়া মুসলমানরা যেসব এলাকায় থাকেন, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত নয় বলে এই বরাদ্দ তাদের কাছে যায় না। সেজন্যই সমীক্ষা করা হচ্ছে।’
এই সমীক্ষা নিয়ে সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তর মঙ্গলবার একটি বৈঠক করেছে খিলঞ্জিয়া মুসলমানদের ২১ টি সংগঠনের সঙ্গে। সেখানে গোরিয়া, মোরিয়া, দেশি, জলুহা এবং সৈয়দ – এই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন।
বৈঠকে অবশ্য ডাকা হয় নি বরাক উপত্যকার বাংলাভাষী মুসলমানদের। যদিও তাদের প্রায় সকলেই ভূমিপুত্র, তবুও তাদের ওই সমীক্ষা থেকে বাদ রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বরাকের বাংলাভাষী মুসলমানদের মধ্যে। বরাকের মুসলমানদের সংগঠনগুলি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চিঠিও দিয়েছে সরকারের কাছে।
অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাংলাভাষী মুসলমানদের আশঙ্কা তাদের হয়তো এরপর সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে।