জেড. এম. শামসুল :
দেশের রাজধানী ঢাক, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহর-নগরীতে যেভাবে অপরিকল্পিত অট্টালিকা গড়ে উঠছে, তাতে ভূকম্পন-অগ্নিকান্ডের আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। দেশের রাজধানীসহ বিভাগীয় শহর গুলোতে যেভাবে, অপরিকল্পিত গড়ে উঠা বিল্ডিংগুলো এক সময়ে মহা-বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তখন কিছু করার থাকবে না। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট মহা-নগরীতে যে ভাবে ঘন-বসতি স্থাপন হয়েছে, তা মনে পড়লে কেহ বিশ্বাস করবে না। এ সব শহর-নগরীতে অট্টালিকা গড়ে উঠেছে, সেগুলো এক সময় ছিল, বড় দীঘি, জলাভূমি, খাল-নালায় ভরপুর। এ সব স্থান গুলোতে গড়ে উঠেছে, নগর-মহানগরের বিশাল-বিশাল অট্টালিকা, বাসা-বাড়ী। এ সব অট্টালিকাÑবিল্ডিংগুলো মৃদু-ভূকম্পন দিলে ভবন গুলো কেঁপে উঠলে, লোকজন ধ্বস্তা-ধ্বস্তি করে বাসা-বাড়ী থেকে নামতে গিয়ে হতাহতের ঘটনা অহরহ ঘটছে। তাই প্রতিটি নগর-মহানগরীর অট্টালিকা-বিল্ডিং, বিপণী-বিতানগুলোতে ভূমি-কম্পনসহ অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিজ্ঞজনের ধারণা, আমাদের দেশে যেভাবে ভূকম্পন‘র সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি ঝড়-ঝাপটা সহ অগ্নিকান্ডের সংখ্যা থেমে থাকেনি। এ সব বিপদ আসলে কেউ নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয় নয়। এ গুলো মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন সতর্কতা ও সচেতনতা এবং অট্টালিকা নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোড মেনে বিল্ডিং নির্মান করা হলে এ সব দুর্যোগ মুহূর্তে ক্ষয়ক্ষতির মোকামেলায় প্রস্তুত থাকা উচিত। দেশের ক্রমবর্ধমান শহর, নগর-মহানগর গুলোতে প্রতিদিন অসংখ্যক বিল্ডিং নির্মিত হচ্ছে, এ গুলোতে বিল্ডিং কোড, ইমারত নির্মাণের নীতিমালা কতটুকু মেনে তৈরী হচ্ছে, যে সব স্থানে ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সে স্থানের মাটি বিল্ডিং নির্মাণের উপযোগী কি না, বিল্ডিংয়ের ভার বহনের ক্ষমতা আছে কিনা তা নিরীক্ষা হচ্ছে না। ভবন নির্মাণের পর অনেক দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়, ঝড়-ঝাপটার সময় এমনকি মৃদু-ভূকম্পন দিলে ভবন গুলোর একাংশ হেলে যাওয়ার ঘটনা কম নয়। এ সব ভবন গুলো বড় ধরনের ঝড়-ঝাপটা ছাড়াও মৃদু-ভূমি কম্পন দেখা দিলে ধসে পড়ার সম্ভাবনাসহ বিরাট ক্ষয়ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
অনেকের মতে আমাদের দেশে বিশেষ করে অনেক দুর্নীতিবাজ ভবন নির্র্মাণের সময় রডের পরিবর্তে বাঁশ, কাঠের টুকরো দিয়ে ভবন নির্মাণের ঘটনা কম ঘটেনি। যা অনেক থবর গণ-মাধ্যমে এসেছে, এগুলো ভবনে যে অঘটন-ঘটবে না, তা অবিশ্বাস করার সুযোগ নেই। শহর গুলোতে নির্মিত ভবন গুলোতে ভূমিকম্পের উপর নির্ভর নয়, শহর গুলোতে যেভাবে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে ভূমিকম্পের সময় শহর জুড়ে অগ্নিকান্ডের সূচনা হওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ভবন ধ্বসে হয়ত; কেউ বেঁচে যেতে পারে, কিন্তু অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে কেউ বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকবে না। কারণ, আমাদের শহর নগর-মহানগরীর যে সব ছোট-ছোট অলি-গলি, এ গুলোতে প্রয়োজনীয় উদ্ধার কার্য করা কঠিন হবে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সিলেট সহ শহরগুলোর রাস্তা গুলো তেমন উপযোগী নয়।
সিলেট মহানগরীর ভবন-বিপণী গুলোতে ভূকম্পন বা অগ্নিকান্ড রোধে কতটুকু কার্যকারী, তা নিরীক্ষা করে পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরী বলে সচেতন মহল মনে করছেন। নগরবাসী অনেকের মতে নগরীর অধিকাংশ ভবন-বিপণী কেন্দ্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে সিলেটবাসী মৌলভীবাজারের অগ্নিকান্ডের মত ট্র্যাজেডির আশংকা করছেন। মৌলভীবাজারের অগ্নিকান্ডের ট্র্যাজেডি নগরবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। নগরবাসীর মধ্যে ভয়াবহ ভূকম্পন-অগ্নিকান্ডের আশংকা দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কোন প্রকার ব্যর্থতা বা অমনোযোগী হলে সমূহ সর্বনাশের আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই ভয়াবহ দুর্ঘটনা রোধে মহানগরী সহ সিলেট অঞ্চলের জেলা-উপজেলা সমূহের ভবন-বিপণী গুলোতে নিরাপাত্তা মূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।
সিরেট মহানগরীতে ভবন-বিপণীসহ বাসা-বাড়ীর বহুতলা বিশিষ্ট তৈরী হলে ও এগুলোতে কোন ধরনের অঘটন-দুর্ঘটনায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা কতটুকু রয়েছে, তা নিরীক্ষা করা খুরই জরুরী হয়ে পড়েছে। এ সব ভবন গুলো নির্মাণের নীতিমালা অনুসারে তৈরী করা হয়েছে কিনা ? কোন প্রকার ভূকম্পন বা অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে কতটুকু নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে, এ ব্যবস্থায় ফলে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবা যাবে কি না? এ নিয়ে নগরবাসী নানা ধরনের বিপদের আশংকায় ভোগছেন।
সিলেট মহানগরী এমনিতেই নানা ধরনের সমস্যায় হাবু-ডুবু খাচ্ছে, শব্দ-দূষণ, বায়ূ-দূষণ, পরিবেশ দূষণ সহ বহু তলা ভবন-বিপণী নির্মাণের প্রতিযোগিতা ছাড়া ও ঘন-বসতি ,অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি অসংখ্যক কলোনীর জন নিরাপত্তার বিষয়ে কতটুকু কার্যকারী পদক্ষেপ রয়েছে, তাও ভাবার বিষয়। নগরীর এমন কিছু মার্কেট-বিপণী রয়েছে, যে গুলোতে পা ফেলার স্থান নেই, শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। এ গুলোর মধ্যে নগরীর কেন্দ্রস্থল বন্দর বাজার, ব্রহ্মময়ী বাজার, হাসান মার্কেট, হকার মার্কেট সহ নগরীর জিন্দাবাজার এলাকা, আম্বরখানায় এমন কিছু বিপণী রয়েছে, যে গুলোতে যানজট লেগে থাকে, যা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। এ ছাড়া ও নগরীর বহুতলা বিশিষ্ট অধিকাংশ বিপণী বাসা-বাড়ীর ভবন গুলোতে একের অধিক কোন সিঁড়ি নেই। বহুতলা বিশিষ্ট বিশালাকৃতির ভবন-বিপণীতে হঠাৎ কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে বের হওয়া কতটুকু সম্ভব। বহুতলা বিশিষ্ট ভবন গুরোতে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র আছে কিনা ? এ ছাড়াও নগরীতে অসংখ্যক ভবন রয়েছে, যে গুলো অনেকটি ব্যবহারের অযোগ্য রয়েছে। এ গুলো অনুসন্ধান পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া সময়ের দাবিতে রূপ নিয়েছে।
নগরীর অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা ভবন-বিপণী গুলো চিহ্নিত করে কঠোর হস্তে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে। সাধারণ ভূকম্পন ছাড়া ও বড়-ধরনের ভূমিকম্প, সাম্প্রতিক ঝড়-ঝাপটা, এমনকি অগ্নিকান্ডের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। দুর্যোগের মুহূর্তে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে না পারলে দুর্ঘটনায় পতিত মানুষের পরিণতি কি ঘটবে। অনেক মানুষ মারা যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
আমাদের মনে করতে ভূমিকম্প, ভবন ধসের ঘটনা, অগ্নিকান্ডের ঘটনা পৃথিবী জুড়ে অনেক আলোচিত ঘটনা ঘটেছে, যা সচেতন মহলের মধ্যে এখন ও ঘুরপাক খাচ্ছে; পৃথিবী জুড়ে আলোচিত অনেক ঘটনাবলীর মধ্যে ২০১০ সালে হাইতিতে মাত্র ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা গেছেন তিন লক্ষ মানুষ, একেই বছর চিলিতে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা গেছেন ৫৬২ জন। চিলিতে এত কম মানুষ মারা যাওয়ার কারণ হিসাবে অনেকে মনে করেন, সেখানে যে সব ভবন গুলো নির্মিত হয়েছিল, সে গুলো নির্মিত হয়েছিল পরিকল্পিতভাবে। এত বড় দুর্যোগের মুহূতে দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্ধার কার্য চালানো সম্ভব হয়েছিল। আমাদের দেশে এ রূপ কোন দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধারকারীরা যথা-সম্ভব হবে না। তাই এ সব বড় ধরনের ভূমিকম্প বা অগ্নিকান্ডের মত দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিটি ভবন, বাসা-বাড়ী তৈরিতে বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করার বিকল্প নেই।
তাই যারা বিল্ডিং তৈরি করার দায়িত্ব প্রাপ্তরা যদি দায়সারা ভাবে কাজ করতে গিয়ে কোন প্রকার ভুল করলে, তার ভুলের দায়ভার তিনিই ভোগ করতে হবে। তাই জন-সাধারণের দায়িত্ব পালনে কোন প্রকার গাফিলতির ফলাফল নিজেই ভোগ করতে হবে। কোন প্রকার তোয়াজ-তোষামোধি কাজে আসবে না। নিজেই জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবেন নিজের কাছে। বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় সকলের সচেতনতাই কাম্য।