একে কুদরত পাশা সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের আলোচিত শিশু তুহিন মিয়া (৫) হত্যার ঘটনায় বাবা, চাচা, চাচাতো ভাইসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয় বলে জানান পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান। আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার পর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, বাবা আব্দুল বাছির, চাচা নাসির উদ্দিন, জমসেদ আলী ও আব্দুল মোসাব্বির ও চাচাতো শাহরিয়ার ওরফে শাহারুল হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। সাহারুলের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ার তার বিরুদ্ধে শিশু আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমরা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছি কেজাউড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন মেম্বারের সঙ্গে তুহিনের পিতা আব্দুল বাছির ও তার চাচাদের বিরোধ ছিল। ২০০১ সালের দিকে গ্রামে একটি হত্যাকাণ্ড হয়। মুজিব হত্যা নামে বিষয়টি পরিচিত। ঐ মামলায় আসামি ছিল আব্দুল বাছির।
কেজাউড়া গ্রামে আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে বিরোধে জড়িয়ে যায় এবং অনেক গুলো মামলা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের দিকে আব্দুল বাছিরের আত্মীয় নীলুফা হত্যাকাণ্ড হয়। মামলায় আসামি ছিল আব্দুল বাছিরের প্রতিপক্ষরা। এক পর্যায়ে গ্রামের এক মুরব্বির উদ্যেগে হত্যার মামলাটি মিমাংসা হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তুহিনের পিতা আব্দুল বাসির আশঙ্কা করছিলেন পুরাতন মুজিব হত্যা মামলায় তার শাস্তি হতে পারে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি মিমাংসা হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলায় শাস্তি হতে পারে। এই আশঙ্কায় প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সে তার শিশু পুত্র তুহিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনায় ছিল বাবা আব্দুল বাছির, চাচা নাসির উদ্দিন, জমসেদ আলী ও আব্দুল মোসাব্বির ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার।
গত ১৪ অক্টোবর রাতে বাবার সাথে ঘুমিয়ে ছিল তুহিন। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশু তুহিনকে তার বাবা হত্যার দিন রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে বাড়ির মসজিদের সামনের রাস্তায় গলা কেটে নৃসংশভাবে হত্যা করে এবং পেটে ছুরি ঢুকিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিতে প্রতিপক্ষ ছালাতুল ও সুলেমানের নাম খুদাই করে তুহিনের বাবা-চাচারা। পরে ঘটনার দিন রাতেই অজ্ঞাত কয়েকজন আসামি করে মামলা করে মা মনিরা বেগম।
ঘটনার পর নিহত শিশুর পরিবারের কয়েকজন আটক করে পুলিশ। থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুহিনের পিতা, চাচা ও চাচাতো ভাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে।
পরে আদালতে চাচা নাসির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার ওরফে শাহরুল ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্ধী দেয়। মামলার তদন্ত করেন দিরাই থানার ওসি কেএম নজরুল।
১৬ অক্টোবর বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সুনামনগঞ্জের আলোচিত শিশু তুহিনের হত্যাকাণ্ডকে পৈশাচিক ‘এই হত্যার বিচার এমন হবে যাতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানোর চিন্তা কোনো মানুষের মাথায় যেন না আসে।’