সমুদ্রসীমায় সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে – প্রধানমন্ত্রী

28
বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সদ্য কমিশন প্রাপ্তদের মধ্যে রাইয়ান রহমান চৌকস মিডশিপম্যান হিসাবে সোর্ড অব অনার, সাইদিস সাকলাইন নৌ প্রধান স্বর্ণ পদক এবং সাব লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণ পদক প্রদান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিরোধ মীমাংসায় অর্জিত বিশাল সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনীকে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের নৌবাহিনী যাতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে সেজন্য সরকার এ বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি করে যাচ্ছে।
রবিবার সকালে চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমিতে নৌবাহিনী রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে প্রশিক্ষণ পাওয়া অফিসারদের উদ্দেশে তিনি কথাগুলো বলেন। বঙ্গোপসাগরকে অপার সম্পদের উৎস উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রচুর মৎস্য ও খনিজ সম্পদে ভরপুর আমাদের জলসীমার অতন্দ্র প্রহরী বাংলাদেশ নৌবাহিনী। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও এর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় প্রয়োজনে নৌবাহিনীর সদস্যরা সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করে থাকে। জাতীয় স্বার্থে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ প্রসঙ্গে বলেন, ২০০৯ সালে সরকার জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করে এবং তার বাস্তবায়ন শুরু করে। সে থেকে টানা তিনবার সরকার গঠনের ফলে আমাদের সরকারের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত নৌবাহিনীতে ২৭টি যুদ্ধজাহাজ সংযোজিত হয়েছে। আমরা নৌবাহিনীকে দক্ষ কমান্ডো ও উদ্ধারকারী দল তথা স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ড্রাইভিং এ্যান্ড সালভেজ কমান্ড এবং নৌবাহিনীর বৈমানিক দল বা এভিয়েশন উইং সৃষ্টি করেছি। ২০১৭ সালে আমরা নৌবহরে দুটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন সংযোজন করি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে আমরা একটি পূর্ণ ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করতে সমর্থ হয়েছি।
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কঠোর পরিশ্রমে তারা প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন, তা উৎকর্ষ অর্জনের সূচনা মাত্র। আজ ৭২ জন কর্মকর্তা একাডেমিক সীমানা অতিক্রম করে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। তারা প্রশিক্ষণের পর কাজে যোগ দেবেন। সব সময় মনে রাখতে হবে সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের মানসম্মান আপনারা রক্ষা করবেন। অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সন্তানরা আজ কমিশন্ড পেয়েছেন। তারা দেশের সেবায় নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে বলে আশা করি। আপনাদের সন্তানের এ সাফল্যের অংশীদার আপনারাও। আর যারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তাদেরও আমরা ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীর অগ্রযাত্রার সূচনা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় দুটো পেট্রোলক্রাফট নিয়ে নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু নৌঘাঁটিগুলো কমিশন্ড প্রদান করেন। এছাড়া বন্দর এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে সব মাইন পুঁতে রেখেছিল সেগুলো অপসারণ করে বন্দরকে ব্যবহার উপযোগী করেন। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল এ বাংলাকে সত্যিকারের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা। ইনশাল্লাহ, বাংলাদেশকে জাতির পিতার সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর গৌরবময় ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বাহিনী অপারেশন জ্যাকপট পরিচালনা করে। দেশমাতৃকার সেবায় এ বাহিনীর অবদান অনুসরণীয়।
রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাতীয় সংসদের হুইপ সামসুল হক চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভুঁইয়া, এমএ লতিফ, ওয়াসিকা আয়েশা খান, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী এবং তিন বাহিনী ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রবিবার অনুষ্ঠিত এই কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে চলতি বছর কমিশন্ড লাভ করেছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৬১ জন মিডশিপ ম্যান এবং ১১ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ ৭২ নবীন অফিসার। সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে রাইয়ান রহমান চৌকস মিডশিপ ম্যান হিসেবে সোর্ড অব অনার, সাইদিস সাকলাইন নৌপ্রধান স্বর্ণপদক এবং সাব-লেফটেন্যান্ট মোঃ কামরুজ্জামান ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।