সেনা মোতায়েন করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না অশান্তি ॥ আরও উত্তপ্ত আসাম, আন্দোলন ছড়াচ্ছে অন্য রাজ্যেও

14

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য আসাম। পুলিশের গুলিতে কয়েকজন নিহত হওয়ার পর এবার সেখানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। সেনা মোতায়েন করেও থামানো যাচ্ছে না অশান্তির আগুন। এখনো ১০টি জেলায় বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে জনগণের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। তবে তা উপেক্ষা করেই চলছে বিক্ষোভ।
আসামের এই আন্দোলনের ঢেউ ত্রিপুরার পর আছড়ে পড়েছে মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গেও। পরিস্থিতি চরম জটিলতার দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের দুই মন্ত্রীর সফর বাতিলের পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ভারত সফরও বাতিল হয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) নিয়ে উত্তর-পূর্বে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জেরে বাতিল হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের শিলং সফর। আগামী রবিবার নর্থ-ইস্ট পুলিশ অ্যাকাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ওই সফর বাতিল করা হয়েছে। এই সফরেই অরুণাচল প্রদেশেও যাওয়ার কথা ছিল অমিত শাহের। স্বাভাবিকভাবেই বাতিল হয়েছে সেই সফরও।
উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গও
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। প্রায় গোটা রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ। হাওড়ার উলুবেড়িয়া, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, বহরমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অশান্তি শুরু হয়েছে। অশান্তি ছড়িয়েছে কলকাতাতেও। কোথাও রেললাইন, কোথাও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আইনকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
হাওড়ার উলুবেড়িয়া এবং মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার পরিস্থিতি সবচেয়ে উত্তপ্ত। শুক্রবার প্রথমে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয় উলুবেড়িয়ায়। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তা আটকে আগুন জ্বালিয়ে দেন। পরে অবরোধ শুরু হয়েছে রেললাইনে। হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতের দিকে যাওয়া বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেন আটকে পড়েছে। হাওড়ায় ফেরার পথেও আটকে রয়েছে একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ওই শাখায় লোকাল ট্রেন পরিষেবাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রেললাইনের উপরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পাথর ছুড়ে হামলা চালানো হচ্ছে আটকে থাকা ট্রেনগুলোতে। একটি ট্রেনের চালক এবং এক রেল পুলিশ কর্মী হামলায় জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আটকে পড়া যাত্রীরা জানাচ্ছেন যে, তাদের অনেকেও জখম হয়েছেন।
কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকাও উত্তপ্ত হয়েছে। পার্ক সার্কাস সেভেন্ট পয়েন্ট অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো লোক। রাস্তায় টায়ার জ্বালানো হয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অশান্তির বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছেন। রাজ্যবাসীর উদ্দেশে তার আহ্বান— বাংলায় শান্তি বহাল রাখুন। সিএবি-র প্রতিবাদ করতে হলে গণতান্ত্রিক উপায়ে তা করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ পাঁচ মুখ্যমন্ত্রী : এদিকে অবিজেপি পাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, তারা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন মানছেন না।
শুরু থেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল এবং এনআরসির বিরোধিতায় সরব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই প্রথম ঘোষণা করেন, বাংলায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং এনআরসি চালু হতে দেবেন না। শুক্রবার দিঘায় আরও একবার স্পষ্ট করে একথা জানিয়েছেন মমতা। মমতা বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই বাংলায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বলবৎ হতে দেব না। এই বিল দেশকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করবে। আমাদের সরকার থাকা পর্যন্ত এ রাজ্যের একজন নাগরিককেও দেশ ছাড়তে হবে না।’
মমতার সুরেই সুর মিলিয়েছেন কংগ্রেস শাসিত তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং আগেই জানিয়েছিলেন, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া আইন তিনি সমর্থন করেন না। পাঞ্জাবে সিএবি চালু হবে না। শুক্রবার একই সুরে কথা বলেছেন আরও দুই কংগ্রেস শাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশের দুই মুখ্যমন্ত্রী। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেলের কথায়, ‘আমাদের অবস্থান একেবারেই আলাদা নয়। অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি যা ঠিক করেছে সেটাই হবে।’ একই কথা বলছেন কমল নাথও। তার কথায়, ‘আমরা এমন কোনো প্রক্রিয়ার অংশ হতে চাই না, যেটা বিচ্ছিন্নতবাদের বীজ বপন করছে। আমরা এআইসিসির সিদ্ধান্তই মেনে চলব।’
এই চার মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি বামশাসিত কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তার রাজ্যে সিএবি চালু হবে না।