স্পোর্টস ডেস্ক :
রাতের মিরপুর স্টেডিয়াম। রাতের বটে। দিনের চেয়ে বেশি আলোকিত হয়ে উঠেছিল। ভাবছেন, ফ্লাডলাইটের আলো? মোটেই নয়। বরং বলিউড হার্টথ্রব সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফের একঝলক উপস্থিতি গোটা স্টেডিয়ামের চেহারা পাল্টে দেয়। বোম্বে সিনেমার জনপ্রিয় জুটি শুধু আলো ছড়াননি, ঝড় তুলেছিলেন। আর জেমস, সনু নিগম, কৈলাশ খেড়ের মতো শিল্পীরা মাতিয়ে রেখেছিলেন সঙ্গীতপ্রেমীদের। এভাবে সঙ্গীত, নৃত্য, আতশবাজির ঝলকানির মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হয় বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০১৯ এর। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ আইপিএলের আদলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি এর আয়োজন করছে।
রবিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ এই ক্রিকেট উৎসবের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। কোন বক্তৃতা না করলেও, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানান তিনি। আশা করেন, জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে শুরু হওয়া বঙ্গবন্ধু বিপিএল ক্রিকেটপ্রেমীদের আনন্দ দেবে। এ সময় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ ক্রিকেট বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে মঞ্চে এসে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের এবারের বিশেষত্ব তুলে ধরেন উপস্থাপক হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ও সঙ্গীতা আহমেদ। উপস্থাপকরা জানান, ২০১২ সালে প্রথম আয়োজন করা হয়েছিল বিপিএলের। সে ধারাবাহিকতায় এবার আয়োজন করা হচ্ছে সপ্তম আসরের। জাতি যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে ঠিক তখন এই আয়োজন। বিরাট এ উপলক্ষের সঙ্গে ক্রিকেটকে যুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এবারের আয়োজনের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০১৯।
কথাবার্তা বলতে এটুকুই। আগে-পরের বাকি সময়টুকু নাচে, গানে, আতশবাজিতে দারুণ মেতেছিল স্টেডিয়াম। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পর পরই শুরু হয়ে যায় আতশবাজি। কিছুক্ষণ আগেও যে আকাশ ছিল অন্ধকার, মুহূর্তেই তা আলোয় ভরে ওঠে। নানা রঙের আলো। নিচ থেকে উপরের দিকে রকেটের মতো ছুটে যায়। যেতে যেতে গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। একটি শেষ হতে না হতেই আরেকটি। এভাবে দারুণ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ। এর মধ্যেই মঞ্চের ব্যাকড্রপে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংবলিত লোগো ভেসে ওঠে।
বরাবরের মতো এবারও বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ করার চেষ্টা করা হয়। বঙ্গবন্ধু নামটি যোগ হওয়ায় বিশেষ তৎপর ছিলেন আয়োজকরা। দর্শকের প্রত্যাশাও ছিল বেশি। সে প্রত্যাশা পূরণে প্রধান ভূমিকা রাখেন সালমান ও ক্যাটরিনা। কখনও সালমান ও ক্যাটরিনা আলাদা আলাদাভাবে মঞ্চে আসেন। কখনও দেখা যায় যুগল পারফর্মেন্স। নিজেদের সিনেমার জনপ্রিয় গানের সঙ্গে নাচেন তারা। দুই তারকার সঙ্গেই বড় সংখ্যায় সহশিল্পীরা ছিলেন। বিপুল জনপ্রিয় গানের সঙ্গে চোখ ধাঁধানো কোরিওগ্রাফি। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন দর্শক। সালমান-ক্যাটরিনার ধামাকা নাচ শীত তাড়িয়ে অদ্ভুত এক উষ্ণতা ছড়ায় স্টেডিয়ামে।
সঙ্গীত পর্বে মঞ্চে ছিলেন কৈলাশ খেড় ও সনু নিগম। ভারতের জনপ্রিয় শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক সনু মাতিয়ে রাখেন পুরোটা সময়। অসংখ্য গান তার। বাংলাদেশেও দারুণ জনপ্রিয় তিনি। প্রথমে ধীর লয়ের একটি গান দিয়ে শুরু করেন তিনি। গানের মাঝখানেই উপস্থিত সকলের উদ্দেশে নমস্কার ও সালাম জানান। প্রথম গান শেষ করে বলেন, আমি আজ যে গানগুলো করব তা আগে কোনদিন মঞ্চে করিনি। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাজি’র জন্য তার এ প্রস্তুতি বলে জানান তিনি। কিন্তু তখনও শ্রোতারা অনুমান করতে পারেনি যে, সনু বাংলা গান ধরবেন। তার আগে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বাংলা উচ্চারণে ভুল থাকতে পারে। আপনারা আমার আবেগটুকুকে আমলে নিলে খুশি হব। শিল্পী এদিন দ্বিজেন্দ্র লাল রায় থেকে গেয়ে যান: এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/ও সে সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি…। গান শুনে মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রীকে লম্বা সময় ধরে করতালি দিতে দেখা যায়। পরের গানে আবারও চমকিত করেন সনু। এবার তিনি গান: শোন, একটি মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি,/আকাশে বাতাসে উঠে রণি…। বাংলা গান শেষ করে সনু বলেন, এ গান আপনাদের জন্য আমার ভালবাসার প্রকাশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাজির জন্য শ্রদ্ধা। পরে ‘ক্যা এ মেরা পেহলা পেহলা প্রেম’,‘শুকরান আল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ’, ইয়ে দিল দিওয়ানা’, ‘তুমকো দেখে বিনা’ মেরে হাত মে তেরে হাত হো’সহ বলিউড সিনেমার জনপ্রিয় কয়েকটি গান গেয়ে শোনান। অপেক্ষাকৃত ক্ল্যাসিক্যাল ধারার গান বেছে নিলেও, প্রায় প্রতিটি গানের সঙ্গে গাইতে দেখা যায় ভক্তদের। গানের পাশাপাশি সনু নিগমের কথাও বাংলাদেশী শ্রোতাদের অভিভূত করে। গায়ক এদিন কসম কেটেই বলেন, পৃথিবীর অন্যতম ভাল শ্রোতা আমি ঢাকায় দেখেছি। বাইরে শো করার সময়ও এ কথা বলেন বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে গান করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম গায়ক জেমস। তার ‘কোথায় আছে কেমন আছে মা’ গান আবেগাক্রান্ত করে শ্রোতাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গানের সঙ্গে আঙুল দিয়ে তাল বাজাতে দেখা যায়। গায়কের ‘আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব’ গানে কণ্ঠ মেলান শ্রোতারা। বোম্বে সিনেমায় প্লেব্যাক করা শিল্পী একটি হিন্দী গানও পরিবেশন করেন এদিন। গান করেন তরুণ প্রজন্মের গায়ক শুভ। রকস্টার হলেও শিল্পীর কণ্ঠে ছিল এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া গান ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে/ রইবো না আর বেশিদিন তোদের মাঝারে…।’ শচীন দেববর্মন থেকে তিনি গেয়ে শোনান, ‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক/পায়েলখানি বাজে’ গানটি। গান পরিবেশন করেন রেশমী মির্জা ।
এদিকে, রবিবার উদ্বোধন করা হলেও খেলা শুরু হবে আগামী বুধবার থেকে। বঙ্গবন্ধু বিপিএলেও অংশ নিচ্ছে মোট সাতটি দল। দলগুলো যথাক্রমে যমুনা ব্যাংক ঢাকা প্লাটুন, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, রাজশাহী রয়্যালস, সিলেট থান্ডার, প্রিমিয়ার ব্যাংক খুলনা টাইগার্স, রংপুর রেঞ্জার্স ও কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স। ১৭ জানুয়ারি ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হবে টি টোয়েন্টির উৎসব।