সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ঐক্যমত ॥ এখন থেকে নিয়োগপত্র পাবেন চালক ও হেলপাররা

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
এখন থেকে সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের (চালক-হেলপার) নিয়োগপত্র দেবে মালিকপক্ষ। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হয়ে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিও এই নিয়োগপত্র গ্রহণে সম্মত হয়েছে।
পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান ও ব্যক্তি মালিকানাধীন সড়ক পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বোর্ডের কার্যক্রমের বিষয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের ডাকা হয়।
জানা গেছে, বৈঠকে নিয়োগপত্র দেওয়া-নেওয়া নিয়ে মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষই একে অন্যকে দোষারোপ করে। শ্রমিকপক্ষ অভিযোগ করে, মালিকরা তাদের নিয়োগপত্র দিতে অনীহা প্রকাশ করে। কারণ, মালিকপক্ষ মনে করে, দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও সমস্যা হলে, তার দায় তাদের ওপর বর্তাবে। বিপরীতে মালিক প্রতিনিধিও পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, ‘শ্রমিকরা সাধারণত ঘন ঘন কোম্পানি বা পরিবহন পরিবর্তন করেন, যে কারণে তারা নিয়োগপত্র নিতে চান না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ডাকা হয়েছিল। আইনেই নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা রয়েছে। পরিবহনের রুট পারমিটের জন্য আবেদনের সঙ্গে চালকের নিয়োগপত্র যুক্ত করতে হয়। কিন্তু মালিক ও শ্রমিক দুই পক্ষের অনীহার কারণেই এটার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আজ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দুইপক্ষই একমত হয়েছে। এখন থেকে মালিকরা নিয়োগপত্র দেবেন এবং শ্রমিকরা নেবেন। এ বিষয়ে শ্রম বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দুই পক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেবে। সংসদীয় কমিটি শ্রম বিভাগকে এ বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করতে বলেছে।’
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বৈঠকে মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয়, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের (ড্রাইভার ও শ্রমিক) নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। এ বিষয়টি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের চিঠি দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করে।
জানা গেছে, বৈঠকে মালিকানাধীন সড়ক পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে সংসদীয় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ২০০৫ সালের আইনে বোর্ড গঠন হলেও পরিবহন শ্রমিকদের কল্যাণে কোনও ভূমিকা রাখতে পারেনি। এই বোর্ডকে এক কোটি টাকা ‘সিড মানি’ দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা বেড়ে এখন এক কোটি ৭০ লাখ টাকা হয়েছে। কিন্তু এই টাকা শ্রমিকদের কোনও কাজে আসেনি।
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আর শ্রম মন্ত্রণালয়ের টানাটানির কারণে বোর্ডকে কার্যকর করা যায়নি।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় বৈঠকে ব্যক্তি মালিকানাধীন সড়ক পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বোর্ডকে আরও যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত করার লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিআরটিএ’র প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন এবং এই কমিটির সুপারিশ পরবর্তীতে সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করার জন্য সুপারিশ করা হয়।
পাটকলের মজুরি স্কেল : সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের মিলগুলোর উৎপাদিত পাটপণ্য বিক্রি করে যে অর্থ আসে, তা দিয়ে জাতীয় মজুরি স্কেল ২০১৫ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় হতে এ বাবদ চাহিদা অনুযায়ী অর্থ পাওয়া গেলে মজুরি স্কেল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, সরকারি ২৭টি পাটকলের মধ্যে ৬টি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বাকি ২১টি কারখানার কোনোটিতেই মজুরি স্কেল বাস্তবায়িত হয়নি। বেসরকারি ১৭১টি পাটকলের মধ্যে বন্ধ আছে ৩৫টি। চালু থাকা ১৩৬টি পাটকলের মধ্যে ৮৮টিতে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন হয়েছে।
কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বিজেএমসির শ্রমিকদের মজুরি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা বাবদ গত ২৫ জুলাই তিন হাজার ৩৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিজেএমসির উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে গত ১৩ নভেম্বর এক হাজার ১০৩ কোটি টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ২০১৯ সালে নিহত ১৯ জন শ্রমিকের পরিবারকে মালিকপক্ষ থেকে এক কোটি ১৪ লাখ টাকা, ২০১৮ সালে ১৭ জন শ্রমিকের পরিবারকে ৮৫ লাখ টাকা এবং ২০১৭ সালে ১৬ জন শ্রমিকের পরিবারকে ৮০ কোটি ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হকের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, শাজাহান খান, মো. ইসরাফিল আলম এবং শামসুন নাহার বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহসহ মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।