নগরীর ৩টি পয়েন্টে ৪৫ টাকা কেজিতে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি ॥ ধাক্কাধাক্কিতে নারীসহ ২ জন গুলিবিদ্ধ

20
নগরীর কীন ব্রীজ এলাকায় শত শত মানুষের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
ভারত থেকে অবৈধ পথে আসা আটককৃত ৭ হাজার ২শ’ কেজি পেঁয়াজ গতকাল সোমবার ১০টা থেকে নগরীর কবি নজরুল অডিটোরিয়াম এলাকা, কীন ব্রীজের মোড় ও দক্ষিণ সুরমা বঙ্গবীর রোডের মার্কাস পয়েন্টে ৩টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে একই দামে প্রতিদিন ঐসব পয়েন্টে পেঁয়াজ বিক্রি করবে কিনা সেটা টিসিবির কাছে পরিস্কার নয়।
খোলা বাজারে ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রির সময় সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জনপ্রতিনিধিসহ সব শ্রেণীর লোকজন দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতিজন এককেজি পেঁয়াজ ক্রয় করতে দেখা গেছে। তবে অনেকেই টিসিবি’র ৪৫ টাকা দরের বিক্রি করা পেঁয়াজ না পেয়েই বাড়ি ফিরতেও হয়েছেন। এছাড়া বিক্রি করা পেঁয়াজের মান তেমন একটা ভাল নয় বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
এদিকে, গতকাল সোমবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে নগরীর রিকাবিবাজারের কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের সামনে টিসিবি’র পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কির সময় পুলিশের ‘মিস ফায়ারে’ নারী ও এক পুলিশ সদস্যসহ দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত চন্দ্র কান্ত সিংহকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক ভাবে আহত নারীর পরিচয় জানা যায়নি। এসময় আরও কয়েকজন আহত হন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ নভেম্বর শুক্রবার শহরতলীর বটেশ্বর বাইপাস এলাকায় র‌্যাব-৯ পরিচালিত একটি অভিযানে এক ট্রাক পেঁয়াজ উদ্ধার করা হয়। ভারত থেকে সিলেটের তামাবিল বর্ডার হয়ে অবৈধভাবে চোরাকারবারিরা ৭ হাজার ২শত কেজি পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ সময় আমদানির কাগজ দেখাতে না পারায় ট্রাক ও পেঁয়াজ জব্দসহ দুইজনকে আটক করা হয়। উদ্ধারকৃত পেঁয়াজের বর্তমান আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা। পরে এই পেঁয়াজগুলো প্রথমে নিলামে ওঠানোর কথা থাকলেও পরবর্তীতে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্র জানায়, সারাদেশে দফায় দফায় দাম বাড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলা পেঁয়াজ এখন যেন সোনার হরিণ। এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০-২৩০ টাকায়। ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় লাগামছাড়া হয়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। সাধারণ মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে এদিকে গতকাল খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খুচরা বাজারের লবণসহ অন্যান্য নিত্যপূণ্য দ্রব্য জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
বঙ্গবীর রোডের কেন্দ্র থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনতে আসা আব্দুর রহমান বলেন, টিসিবির ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও পেঁয়াজ মিলছে না। সিএনজি অটোরিকশা চালক মিফতা আহমদ জানান, এক কেজি পেঁয়াজের জন্য ২ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পেঁয়াজ পাচ্ছি না। আজ পেঁয়াজ পাবো কী-না তা সন্দেহ।
কীন ব্রীজ কেন্দ্র থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা মোস্তাক আহমদ বলেন, বর্তমান বাজারের এক কেজি পেঁয়াজ কেনার টাকা দিয়ে এখানে তিন কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবো। কিন্তু পেঁয়াজ ট্রাকে কম, পাবো কিনা সন্দেহ। পেঁয়াজের থেকে লাইনে মানুষ বেশি।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিতা আক্তার জানান, শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য পুলিশ ৫ জন করে ক্রেতাকে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিচ্ছিল। এর মধ্যে পেছন থেকে হঠাৎ ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে চন্দ্র কান্ত সিংহের লোড করা একটি শর্টগান থেকে অসাবধানতাবশত: গুলি বের হয়ে অনাকাক্সিক্ষত উক্ত ঘটনা ঘটে যায়।
সিলেট মেট্রোপলিটন প্রথম আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়াদুর রহমান বলেন, উদ্ধারকৃত পেঁয়াজ নিলামে তুললে ব্যবসায়ীরা কিনে নেবে। এমনটা হতে পারে ভেবে তারা বেশী মূল্যে ক্রেতাদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করবে। ক্রেতাদের ভোগান্তি থেকেই যাবে, মাঝখানে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। তাই তিনি নিলামের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৪৫টাকা কেজি দরে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করার পরামর্শ দেন। ম্যাজিষ্ট্রেটের এমন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল সারাদিন নগরীর ৩টি পয়েন্টে এই পেঁয়াজগুলো বিক্রি করা হয়।
টিসিবি সিলেটের ইনচার্জ মো. ইসমাইল মজুমদার বলেন, উদ্ধারকৃত পেঁয়াজগুলো টিসিবির মাধ্যমে গতকাল আমাদের ডিলার সরকার নির্ধারিত ৪৫ টাকা মূল্যে নগরীতে ৩টি পয়েন্টের মাধ্যমে ৩টি ট্রাকে করে এই পেঁয়াজগুলো বিক্রি করা হয়।
লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনলেন মেয়র আরিফ: গতকাল সোমবার খোলাবাজারে নগরীর কীন ব্রীজ পয়েন্টে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির অস্থায়ী কেন্দ্র থেকে দীর্ঘ এক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে সিলেট সিটি কপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এক কেজি পেঁয়াজ ক্রয় করেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের কাতারে এসে পেঁয়াজ কিনতে আসা তার প্রতীকী প্রতিবাদ। এসময় তিনি পেঁয়াজ, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানোর দাবি জানান। সিসিক মেয়র আরিফ আরও বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়াকে কেন্দ্র করে নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যের, বিশেষ করে চালের দাম বাড়ানোর একটা অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এজন্য আমরা সিলেট সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে সন্দেহভাজন ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত করছি। যাতে পেঁয়াজ ইস্যুতে অন্যান্য পণ্যের দাম না বাড়ে।
বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে ৩ ব্যবসায়ীকে জরিমানা: মহানগরীর বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে নজর দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অবশেষে গত রবিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের দু’টি টিম অভিযানে নামে নগরীর রিকাবীবাজার ও পাইকারি বাজার কালীঘাটে। আলাদা অভিযানে ভারতীয় লবণ রাখা ও অধিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করার দায়ে রিকাবীবাজারের সালাম ব্রাদার্সকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় অন্য দোকানীদের সতর্ক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর স্নিগ্ধেন্দু সরকার ও মহানগর পুলিশের সদস্যরা। অন্যদিকে, বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর কালীঘাট পাইকারি বাজারে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে হাজি নূর অ্যান্ড সন্সকে তিন হাজার টাকা জরিমানা ও আসাদ ব্রাদার্সকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় অন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন ভ্রাম্যমান আদালত। এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা রায়। অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি বিপণন বিভাগের বাজার কর্মকর্তা মো. মোরশেদ কাদের প্রমুখ।