বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা, ১১ আসামি পলাতক

228

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যেসব খুনী বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীঘ্রই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে আনতে আশাবাদী সরকার। এ সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। বঙ্গবন্ধু ও জেলে জাতীয় চার নেতা হত্যার পলাতক ১১ আসামি বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধুর পলাতক ৬ খুনীর মধ্যে লে কর্নেল (অব:) রাশেদ চৌধুরী ও লে কর্নেল (অব:) এস এইচ নুর চৌধুরীর অবস্থান সম্পর্কে জানা গেছে। অন্য ৪ জন ও জেলহত্যা মামলার পলাতক ৫ আসামির অবস্থান এখনও জানা যায় নি। দীর্ঘ ৪৪ বছরের এ সমস্ত খুনীদের ফিরিয়ে আনা যায় নি। পলাতক খুনীদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। খুনীরা যে দেশেই থাকুক তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। এদিকে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরীর মামলার কাগজপত্র চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে নুর চৌধুরীকে দেশে আনতে এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলো মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্তদের দেশে ফেরত দেয় না। অথচ আমেরিকা, চীনসহ ইউরোপের অনেক দেশেই এখনও মৃত্যুদন্ড বহাল রয়েছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত খুনীদের ইউরোপের আশ্রয়কারী দেশ তাদের ফেরত দিবে না তা সত্ত্বেও মৃত্যুদন্ড শিথিল করার চিন্তা ভাবনা নেই সরকারের। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আদালতের রায় কার্যকরের জন্য পলাতক দন্ডপ্রাপ্ত খুনীদের ফেরত দিতে আশ্রয়কারী দেশগুলোর উদ্যোগ কামনা করেছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদন্ড নিষিদ্ধ হলেও ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়েছিল ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধাপরাধের বিচার। বিচারের কাঠগড়ায় ছিলেন সাবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোশেভিচ। অনেকের কাছে বলকানের কসাই নামে পরিচিত ছিলেন এই সার্ব নেতা যিনি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন নিজেই। ১৯৯৫ সালে স্লোভেনিয়ায় মিলোশেভিচের বাহিনী ৮০০০ মুসলিম পুরুষ ও তরুণকে হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ।২০০৬ সালের ১১ মার্চ স্লোবোদান মিলোশেভিচকে তার কারাকক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। অভিযোগ কারাকক্ষে তাকে ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া আমেরিকায় ইনজেকশন, অন্যান্য দেশে ফায়ারিং স্কোয়াড, শিরñেদ, বৈদ্যুতিক চেয়ারসহ নানা ধরনের মৃত্যুদন্ডের প্রথা চালু আছে। বাংলাদেশে গুরুতর অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জডিত ১২ সেনা কর্মকর্তাকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর শাসনামলে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়েছিল। এর পর এইচ এম এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়ার সরকারও জিয়াউর রহমানের নীতিই অনুসরণ করেন। এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর খুনীরা বহাল তবিয়তে চাকরিসহ নানান সুবিধা ভোগ করেন। অবশেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শরু করে। খুনীদের বিচারে সর্বোচ্চ আদালত মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। এর মধ্যে ৫ জনের দন্ড কার্যকর হয়েছে। একজন মারা গেছে। অন্য ৫ জন বিদেশে পলতক রয়েছে। বিদেশে পলাতক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীদের দেশে ফেরত আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপ সহ অনেক দেশে মৃত্যুদন্ড উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশে মৃত্যুদন্ড শিথিল করা হচ্ছে কি না এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মৃত্যুদন্ড শিথিল করার কোন চিন্তা ভাবনা নেই। বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে আনার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে আইনবিজ্ঞরা বলেছেন, মৃত্যুদন্ড শিথিল হলে অপরাধ আরো বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে আইন অমান্য করার প্রবনতা। দেশে আইনের সুনির্দিষ্ট উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদন্ড বহাল থাকাই শ্রেয়।
খুনীদের ফিরিয়ে আনা হবে : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দুই খুনীর একজন আমেরিকায় আরেকজন কানাডায় আছেন। আমেরিকায় যিনি আছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হচ্ছে। তাকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক ও আইনী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কানাডায় যিনি আছেন তাকে ফিরিয়ে আনতে আইনী প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাকি চারজন কে কোথায় আছেন তাদের বিষয়েও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর খুনীরা যে যেখানেই থাকুক তাদের দেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনা হবে। তিনি আরো বলেন বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যা আসামিদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তারা পলাতক রয়েছে আশ্রয়কারী দেশ মৃত্যুদন্ড দের ফেরত দিতে চায় না। দেশে মৃত্যুদন্ড শিথিল করার কোন চিন্তাভাবনা নেই। এর আগে আইনমন্ত্রী ৭১ টিভিতে বলেছিলেন, যদি মৃত্যুদন্ড তাকে দেয়া হয় এবং সে যদি আমাদের দেশের বাইরে একবার পলায়ন করতে পারে তা হলে এই শাস্তি আর প্রয়োগ করতে পারব না। আমরা সেই কারনে সব অপরাধকে মৃত্যুদন্ডের আওতায় আইনে চাই না।
খুনী রাশেদ চৌধুরীর মামলার কাগজ চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র : প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর মামলার কাগজপত্র চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সফরত দক্ষিন ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী এলিস ওয়েলসের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ৫ নবেম্বর সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি আমরা আইনের শাসন চাই, সুশাসন চাই এবং এটা আপনারাও চান। আমাদের এখানে একটা ঝামেলা আছে। আমাদের একজন পলাতক আসামি আপনাদের দেশে আছে। আমরা চাই তাকে ফেরত পাঠানো হোক। প্রত্যুত্তরে তারা বলেছে, তোমরা যে বিচার করেছো তার কাগজপত্র দাও।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবারই প্রথম তারা তার বিষয়ে জানতে চেয়েছে। তারা বলেছে, কাগজপত্র দিলে আমরা পরীক্ষান্ডনিরীক্ষা করে দেখবো এবং পরে (আমাদের অবস্থান) জানাবে।
নূর চৌধুরীকে দেশে আনতে এক ধাপ অগ্রগতি : আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছে কানাডা আদালত। ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয় ফেডারেল আদালত। সে দিন বিচারক জেমস ডব্লিউ ওরেইলি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন,নুর চৌধুরী অভিভাষণ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থে ব্যাঘাত ঘটবে না। সুতরাং তার বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেয়ার সিদ্ধান্ত কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু এর আগে কানাডা সরকার বারবারই দেশটিতে তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে আসছিল। কানাডার আইন অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড কাউকে প্রত্যার্পনে বাধা থাকায় সে দেশের সরকার জনস্বার্থে রক্ষার্থে নূর চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করছিল না।
আইন পরিবর্তন করলে অপরাধ বাড়বে : সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, আইন পরিবর্তন না করেও পালিয়ে থাকা অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আমার অভিজ্ঞতা হলো এই যেসব প্রাণদন্ড উঠিয়ে দিয়েছে এমন দেশে আমাদের দেশে শাস্তি প্রাপ্ত আসামি রয়েছে ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলে বলা হয় তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তারা বলে শুরু একটি কথা লিখে লিখে দাও দেশে যদি যায় তাকে প্রাণদন্ড কার্যকর করা হবে না। অন্য যে কোন শাস্তি ভোগ করবে। তা হলে তো এ ধরনের আইন প্রণয়ন করার প্রয়োজন হয় না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিটর ব্যারিষ্টার তাপস কান্তি বল বলেছেন, মৃত্যুদন্ডের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, খুবই বিলল তম অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড দেয়া যেতে পাারে। জঘন্যতম অপরাধ যেমন হত্যা, ধর্ষণ, ইত্যাদি করলে তার শাস্তি মৃত্যুদন্ডই হওয়া উচিত। আমাদের দেশের সমাজ এখনও মৃত্যুদন্ড শিথিল করার মতো অবস্থায় আসেনি।
বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যা মামলায় ১১ জন পলাতক : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলে চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহামেমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান কে হত্যা মামলায় এখনও ১১ আসমি পলাতক রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যায় উচ্চ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় তারা হলেন, লে: কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে: কর্নেল (অব:) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব:) বজলুল হদা, লে: কর্নেল (অব:) মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারী)ও লে: কর্নেল (অব:) একেএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার)। অপর খুনী লে: কর্নেল (অব:) আজিজ পাশা ২০০২সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যায়। আর পালিয়ে রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এইচ বি এম নূর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ও অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মাজেদ। জেল হত্যা মামলা পলাতকদের মধ্যে আছে মেজর (অব্যাহতি) আহম্মদ শরিফুল হক, ক্যাপ্টেন কিসমত হোসেন, ক্যাপ্টেন নাজমুল আনসার, দফাদার মারফত আলী ও দফাদার আবুল হাসেম মৃধা।
পলাতকরা কে কোথায় : ১৯৭৫সালের ১৫ আগষ্ট সেনাবাহিনীর একদল উচ্চাবিলাসী সদস্যের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রানে বেচে যান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধাদেশ জারি করে তদানিন্তন সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার পথ রুদ্ধ করে দেয়। অবশেয়ে আওযামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শরু করে। একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে পলাতক খুনীদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন। শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান অথবা হংকংযে অবস্থান করছেন। তার পাকিস্তানের পাশপোট রয়েছে বলে জানা গেছে। রিসালদার মোসলেম উদ্দিন এবং আব্দুল মাজেদ চৌধুরী ভারতে, কর্নেল (অব:) আব্দুর রশিদ লিবিয়া, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে, অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। লে: কর্নেল (অব:) আজিজ পাশা ২০০২সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যায়। জেল হত্যার ৫ পলাতক আসামির অবস্থান জানা যায়নি।
ইউরোপসহ যেসব দেশে মৃত্যুদন্ড বহাল : এদিকে কানাডায় পলাতক বঙ্গবন্ধু খুনী নুর চৌধুরীকে ফেরত দিতে নানা ধরনের বাহানা শুরু করেছে। ইউরোপের দেশগুলোতে মৃত্যুদন্ড সমর্থন করে না। কিন্তু এখনও উইরোপ সহ অনেক দেশেই মৃত্যুদন্ড চালু আছে। এ সমস্ত দেশ গুলোর মধ্যে আছে রশিয়া, বেলারুশ, যুক্তরাষ্ট্র, আফগানিস্তান, বাহরাইন, বতসোয়ানা, চাঁদ, চীন, মিসর, গিনি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, জাপান, জর্ডান, কুয়েত মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর কোরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়াা, দক্ষিণ সুদান, সুদান, তাইওয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন প্রভৃতি দেশে। এ ছাড়া আইন আছে কিন্ত মৃত্যুদন্ড থেকে বিরত রয়েছে এ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বাহামা, বার্বাডোজ, বেলিজ, কোমোরোস, কিউবা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ডমিনিকা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া,গায়ানা, জামাইকা, লেবানন, লেসথো, কাতার, সেইন্ট কিটস এ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, ত্রিনিদাদ এ্যান্ড টোবাগো, উগান্ডা ও জিম্বাবুয়ে।
দুই মামলায় যারা দন্ডিত : ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খন্দকার মোশতাক আহম্মেদ এ ইনডেমনিটে (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। ২০১০ সালে ফেব্রুয়ারিতে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। এর ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নবেম্বর ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর পর ১৯৯৬ সালে ২ অক্টোবার ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যাক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মামলা দায়ের করেন। সেখানে আসামি করা হয় ২৪ জনকে।
১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর বিচারিক আদালত ওই মামলায় ১৫ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। রায়ের বিরুদ্ধ আপীল করা হয। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপীল ও মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিভক্ত রায় দেন। বিচারপতি এম রুহুল আমিন ১৫ আসামির ১০ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। খালাস দেয় পাঁচ আসামিকে। অপর বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির সবার মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। এরপর ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১২ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। খালাস দেন তিনজনকে। এই ১২ আসামির মধ্যে একজন মারা গেছেন, ছয়জন পলাতক রয়েছেন। অপর পাঁচজন কারাগারে আটক ছিলেন। ১২ আসামির মধ্যে প্রথমে চারজন ও পরে এক আসামি আপীল করে। কিন্তু এরপর ছয় বছর আপীল শুনানি না হওয়ায় আটকে যায় বিচারপ্রক্রিয়া। দীর্ঘ ছয় বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আপীল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপীল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্ব তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির আপীল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট আপীল শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপীল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওই বছরের ৫ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করে। আপীল শুনানির জন্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এমএম রুহুল আমিন ৪ অক্টোবর পরবর্তী প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেন। আপীল বিভাগ ২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর থেকে টানা ২৯ কর্মদিবস শুনানি করার পর ২০০৯ সালের ১৯ নবেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া পাঁচ আসামির আপীল খারিজ করে। ফলে হাইকোর্টের দেওয়া ১২ খুনির মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল থাকে। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়।
অন্যদিকে ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে। ৪ নবেম্বর তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিন আসামি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদন্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করেন। যাবজ্জীবন দন্ডিত আসামিরা হলেন, লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর (অব.) বজলুল হুদা ও মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ, লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম, কর্নেল (অব.) এম বি নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) আহম্মদ শরিফুল হোসেন, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ, ক্যাপ্টেন (অব.) কিশমত হাশেম, ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হোসেন আনসার। যাবজ্জীবন দন্ডিত চার আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) আপীল করেন। ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়। মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা মৃত্যুদন্ড থেকে খালাস পান। এ ছাড়া আপীল কারী চার জন খালাস পান। যাবজ্জীবন দন্ডিত অপর আট আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল রাখা হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করে। আপীলে দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে হাইকোর্টের খালাসের রায় বাতিল করে বিচারিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়। ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
জিয়া, খালেদা, এরশাদ খুনীদের নানান সুবিধা দিয়েছে : বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সাথে জডিত ১২ সেনা কর্মকর্তাকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর শাসনামলে বিভিন্ন দুতাবাসে চাকরি দেয়া হয়েছিল। ১৯৭৬ সালে তাদের চাকরি দেয়ার পর ১৯৮০ সালে তাদেরকে পররাষ্ট্র সার্ভিস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর পর এইচ এম এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়ার সরকারও জিয়াউর রহমানের নীতিই অনুসরন করেন। এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার সময় বঙ্গবন্ধুর খুনীরা বহাল তবিয়তে চাকরী সহ নানান সুবিধা ভোগ করেন। সরকার এই ৬ খুনীকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নানবিধ চেষ্টা করে যাচ্ছে।