কুলাউড়ায় চা শ্রমিক-খাসিয়া সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা

10

কুলাউড়া থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সড়কে যাতায়াত নিয়ে ঝিমাই চা বাগান ও ঝিমাই পুঞ্জির খাসিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাতে প্রথমে ঝিমাই পুঞ্জির মন্ত্রী রানা সুরং ১২ জনকে অভিযুক্ত করে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ঝিমাই চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম পুঞ্জির ৭ জনকে অভিযুক্ত করে পাল্টা মামলা দায়ের করেন একই থানায়।
জানা যায়, ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঝিমাই পুঞ্জির খাসিয়ারা তাদের নির্মাণাধীন একটি গির্জার কাজে ব্যবহৃত টাইলসসহ মালামাল নিয়ে যাওয়ার জন্য ঝিমাই চা বাগানের গেইটের সম্মুখে যায়। এ সময় ট্রাকটি গেইটে ভিতরে প্রবেশ করতে না পারায় পুঞ্জির ১৫-২০ জন লোক কাঁধে করে মালামাল নিয়ে যেতে চাইলে বাগানের পাহারাদার জামাল মিয়া তাদেরকে বাঁধা দেয় এবং বাগান ব্যবস্থাপকের অনুমতি নিয়ে আসার জন্য বলেন।
কিন্তু এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে (পাগলা ঘণ্টা) বাজালে বাগানের শ্রমিকরা ছুটে এসে উপস্থিত হলে সংঘর্ষ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের সংঘর্ষে ৭ জন আহত হয়।
আহতদের মধ্যে ৪ জন চা শ্রমিক ও ৩ জন খাসিয়া রয়েছে বলে জানা গেছে। তাৎক্ষণিক খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাউসার দস্তগীর ও ওসি মো. ইয়ারদৌস হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
প্রসঙ্গত, ঝিমাই পুঞ্জিতে বসবাসরত খাসিয়াদের সাথে দীর্ঘদিন থেকে পার্শ্ববর্তী ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে ভূমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। পুঞ্জিতে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসবাস। পান চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। ওই এলাকায় বিরোধপূর্ণ ৬৬১ একর লিজকৃত জায়গা নিয়ে ঝিমাই চা-বাগান ও পুঞ্জির মধ্যে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পুঞ্জিতে প্রবেশের সড়ক দিয়ে পণ্য ও যাত্রীবোঝাই গাড়ি চলাচলে বাগান কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
ঝিমাই পুঞ্জির মন্ত্রী রানা সুরং বলেন, পুঞ্জির ভিতরে গির্জার কাজের জন্য মালামাল নিয়ে যাচ্ছিলেন আমাদের লোকেরা। কিন্তু বাগানের পাহারাদার এতে বাঁধা দিলে বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় আমার পুঞ্জির ৩জন লোক আহত হয়। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পুঞ্জির লোকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি আরও বলেন, পুঞ্জির কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে তখন গাড়ি নিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ঝিমাই চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলাম জানান, খাসিয়াদেরকে বাগানের রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে বিধি নিষেধ রয়েছে। তবে পুঞ্জির কেউ অসুস্থ হলে বাগান কর্তৃপক্ষ কখনো তাদের বাঁধা প্রদান করেনা। গাড়ি ব্যবহারের পূর্বে বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জোরপূর্বক খাসিয়ারা গেইটের পাহারাদারকে মারধর করে বাগানে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাগানের অন্যান্য শ্রমিকরা তাদের ধাওয়া দেয়। এতে বাগানের ৪ জন শ্রমিক আহত হন।
কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়ারদৌস হাসান বৃহস্পতিবার বিকেলে বলেন, এ ঘটনায় দু’পক্ষ মামলা করেছেন। তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।