নগরী থেকে স্বেচ্ছায় পালিয়ে যাওয়া দুই স্কুলছাত্রী ঢাকায় এবং ঢাকার এক শিশু দক্ষিণ সুরমায় উদ্ধার

15

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরী থেকে স্বেচ্ছায় পালিয়ে যাওয়া ২ স্কুলছাত্রী ঢাকায় এবং ঢাকার গাজীপুর থেকে অপহৃত এক শিশুকে দক্ষিণ সুরমা থেকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-পুলিশ। এই দু’টি ঘটনার মধ্যে থেকে অপহরণকারী চক্রের এক সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। গতকাল বুধবার ভোররাতে র‌্যাব দক্ষিণ সুরমার নিশ্চিতপুর গ্রাম থেকে অপহৃত শিশুকে এবং কোতোয়ালী থানা পুলিশ মঙ্গলবার রাতে ঢাকার তেজগাঁও এলাকা থেকে ২ স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে পুলিশ ২ স্কুল ছাত্রীকে তাদের পরিবারের জিম্মায় প্রদান করে।
র‌্যাব জানায়, ঢাকার গাজীপুর থেকে অপহৃত এক শিশুকে সিলেটর দক্ষিণ সুরমা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ১২ দিন আগে গাজীপুর চান্দুরা চৌরাস্তা এলাকায় শিশুটির নানীকে চেতনানাশক খাবার খাইয়ে ১০ বছরের ওই মেয়ে শিশুকে অপহরণ করেছিল দুর্বৃত্তরা। পরে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করে তারা। গতকাল বুধবার ভোররাতে দক্ষিণ সুরমার নিশ্চিন্তপুর গ্রাম থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আটক করা হয় অপহরণকারী চক্রের সদস্য তাহের আলীকে (২০)। সে ওই গ্রামের মজিবুর রহমানের পুত্র। তাহের আলী ওই শিশুটিকে আটকে রেখে ধর্ষণও করেছে। তাকে এক লাখ টাকায় বিক্রিরও চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিশুটি।
এদিকে,গতকাল র‌্যাব-৯ এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে উপ অধিনায়ক মেজর শওকাতুল মোনায়েম জানান, ৩১ অক্টোবর ১০ বছরের নাতনীকে নিয়ে শপিংয়ের জন্য গাজীপুর চান্দুরা চৌরাস্তায় আসেন এক নারী। এসময় দুই ব্যক্তি তাদেরকে নাস্তা করার প্রস্তাব দেয়। তাদেরকে ফুঁসলিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে চেতনানাশক মিশিয়ে নাস্তা করায়। এরপর নানীকে ফেলে রেখে শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সাথে নানীর মোবাইল ফোনও নিয়ে যায় তারা। জ্ঞান ফেরার পর অন্য একটি মোবাইল দিয়ে নানী তার মোবাইলে ফোন দিলে অপহরণকারীরা রিসিভ করে দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না পেলে নাতনীকে প্রাণে মারারও হুমকিও দেয়। এ ঘটনায় ৭ নভেম্বর শিশুটির নানী বাদি হয়ে গাজীপুরের বাসন থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। তিনি আরো জানান, মোবাইল ট্র্যাকিং করে অপহরণকারী চক্রের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গতকাল বুধবার ভোররাতে দক্ষিণ সুরমার নিশ্চিন্তপুরে অভিযান চালিয়ে তাহের আলী নামের এক অপহরণকারীকে আটক করে র‌্যাব। এসময় অপহৃত শিশুটিকেও উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর শিশুটি জানায় তাকে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণও করা হয়েছে। অপহরণকারীরা তাকে এক লাখ টাকায় বিক্রিরও চেষ্টা করেছে।
এদিকে পুলিশ জানায়, গত সোমবার নগরী থেকে স্বেচ্ছায় পালিয়ে যাওয়া দুই স্কুল ছাত্রীকে অভিনব কায়দায় উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁও এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিদিনের ন্যায় গত সোমবার স্কুলে যেতে বাসা থেকে বের হয় নবম শ্রেণীর ছাত্রী রুনা (১৪) (ছদ্মনাম) ও রুমী (১৪) (ছদ্মনাম)। স্কুল ছুটির পর তারা বাসায় ফিরেনি। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখোজি করে উভয় ছাত্রীর অভিবাবক (নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক) কোতোয়ালি থানায় এসে সাধারণ ডায়রী করেন। বিষয়টি থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার নির্মলেন্দু চক্রবর্তীকে অবহিত করা হলে তিনি নিজেই তদন্তে নামেন। দু’জন ছাত্রীর মধ্যে ১জন বাসায় ১টি চিঠি লিখে চলে যায়। চিঠিতে তাদের পারিবারিকভাবে শাসনের বিষয়টি উল্লেখ করে। তারা দু’জন একসাথে যাচ্ছে, কাউকে চিন্তা না করতে লিখেও যায়। যাওয়ার সময় একজন ছাত্রী তার মোবাইল নিয়ে গেলেও তা বন্ধ থাকায় কারও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। দুই দিন চেষ্টার পর গত মঙ্গলবার এক ছাত্রী তাদের এক বন্ধুকে ফোন দেয়। সেই বন্ধুকে খোঁজে বের করে পুলিশ। তাকে এনে তার মোবাইল কললিস্ট বের করে জানা যায় দুই ছাত্রী ঢাকার তেজগাঁও থানার তেজতুরী বাজার এলাকায় রয়েছে। তারা বাড়ীতে আসার জন্য ৫টি শর্ত দিলে সহকারী পুুলিশ কমিশনার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী তিনি নিজে উকিল সেজে সব শর্ত পূরণ করার আশ্বাস দেন। মঙ্গলবার রাত অনুমান ৯টায় ফিরে আসার কথা বললেও তারা আবার আত্মগোপন করে। তখন সহকারী পুুলিশ কমিশনার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী নতুন ফাঁদ পেতে বিকাশে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন তাদের দু’জনকে। রাত ১০টায় বিকাশে ১৪ হাজার টাকা পাঠানোর জন্য তারা একটি বিকাশ নাম্বার দেয়। বিকাশ নাম্বার পেয়েই সহকারী পুুলিশ কমিশনার বিকাশের এজেন্ট এর ঠিকানা সংগ্রহ করেন এবং তাদেরকে ঐ এজেন্ট থেকে টাকা আনতে বলেন। পূর্ব থেকেই তেজগাঁও থানার পুলিশকে বিকাশ এজেন্টের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিকাশের টাকা আনতে এজেন্টের কাছে যাওয়া মাত্রই ছাত্রী দু’জনকে আটক করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। ওইদিন রাতেই এসআই দেবাশীষের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তেজগাঁও থানা থেকে নিয়ে আসেন সিলেট কোতোয়ালি থানায়। পরে তাদের দু’জনকে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়।