স্টাফ রিপোর্টার :
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ শুধু বিশ্বকবি নন, তিনি একজন বিশ্ব সাহিত্যিকও। সাহিত্যের সব স্থানে তাঁর বিচরণ রয়েছে। এছাড়াও চিত্রশিল্প ও সংগীতবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই যুগে ভ্রমণের তেমন সুযোগ সুবিধাও ছিলোনা, তবুও তিনি ৫টি মহাদেশ ভ্রমণ করেছেন। সেখানেও তিনি তাঁর কৃতিত্ব বজায় রেখেছেন। তিনি ছিলেন একজন বিশ্ব পরিব্রাজক।’
গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগমনের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে কবিগুরুর সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবুল মাল আবদুল মুহিত উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, এশিয়ার যে কয়জন ব্যক্তিত্ব নোবেল পেয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ সবার সেরা। এজন্য তাঁর সৃষ্টিকর্মের বিশালত্ব উপলব্ধি করা উচিত। শেষ বয়সে লেখা ঐকতান কবিতায় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, অনেক কিছু করার তিনি চেষ্টা করেছেন। সব সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন বাকিটা পূরণ করতে পারবে। এ প্রত্যাশার কথা রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় উল্লেখ করে গেছেন।’
রবীন্দ্রনাথকে নতুনভাবে জানা যায়, চেনা যায় উল্লেখ করে তিনি সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, রবীন্দ্র নাথের বিশাল প্রতিভা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে চর্চা করলে বিশ্ব জ্ঞানভাণ্ডার উন্মুক্ত হয়ে যাবে নতুন প্রজন্মের কাছে এবং পড়াশুনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বাড়বে।’
১৯১৯ সালের ৪ নভেম্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে ট্রেনে করে সিলেটে বেড়াতে যান। এ সময় তিনি কুলাউড়া জংশন রেলস্টেশনে রাত্রিযাপন করেন। সেই স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে দিনব্যাপী শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রবীন্দ্রনাথের কুলাউড়া আগমনের শতবর্ষ উৎসব উদযাপন পরিষদ।
দিনের শুরুতে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কুলাউড়া রেল স্টেশন প্রাঙ্গণে ‘স্মারকস্তম্ভের’ ফলক উন্মোচন করা হয়। বেলা ১০টার দিকে জাতীয় ও উৎসব পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। দুপুরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হয়।
শতবর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সাবেক অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা বিভাগের চেয়ারম্যান রুপা চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাংসদ নেছার আহমদ, মৌলভীবাজারের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিক আজিজুর রহমান, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য দেন, উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব কুলাউড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান। সভার শুরুতে ‘রবীন্দ্রসাহিত্যে সিলেটের ব্যক্তি অস্মিতার প্রভাব’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক নৃপেন্দ্র লাল দাশ। এর ওপর আলোচনায় অংশ নেন, সিলেটের মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সিলেটের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক প্রণব কান্তি দেব ও উদীচীর সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে দেশের বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন। এ ছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।