পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা চা বাগানে চা শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি থেকে ফান্ডের টাকা কাটা হলেও তিন মাস ধরে সেগুলো অফিসে জমা হচ্ছে না। অন্যদিকে চা বাগানে শ্রমিকদের পরিবার সদস্যরা চিকিৎসা সুবিধা, মাঠ ওয়ালের ঘরের টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় ন্যাশনাল টি কোম্পানী (এনটিসি) এর ১৪০০ শ্রমিক বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি পালন ও বিক্ষোভ শুরু করলে সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে বিকাল ৪টায় এর নিরসন হয়।
চা বাগান শ্রমিকরা জানান, চা শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি থেকে নিয়মিত ফান্ডের টাকা কাটা হচ্ছে। তবে গত তিন মাস যাবত এই টাকা অফিসে জমা হয়নি। এ নিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত চা বাগান শ্রমিক ভবিষ্যৎ তহবিল কার্যালয় এর নিয়ন্ত্রক (উপসচিব) শেখ কামরুল হাসান এর স্বাক্ষরিত একটি পত্র গত ১০ অক্টোবর চা বাগান ব্যবস্থাপককে প্রেরণ করেন। এর অনুলিপি চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দকে প্রেরণ করা হয়। এই পত্র দেখে চা শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। প্রেরিত পত্রে তিন মাসের বকেয়া টাকার সাথে ২৫ শতাংশ ক্ষতিপূরণ সহ বিশ লক্ষ বার হাজার ৬২৯ টাকা পত্র প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে ‘বি ফরম’সহ পরিশোধের জন্য কুরমা চা বাগান ব্যবস্থাপককে বলা হয়।
কুরমা চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি নারদ পাশীসহ শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, কুরমা চা বাগানে যার কাজ আছে তার স্বামী কিংবা স্ত্রী অসুস্থ হলে বাগানে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়ে দেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এছাড়া ফান্ডের টাকা অফিসে জমা না হওয়া, শ্রমিকদের মাঠওয়ালের ঘরের ৫ হাজার টাকা পরিশোধ না করা, বিদ্যুতের ওয়্যারিং এসব নানা সমস্যা নিয়ে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী পিএফ তহবিলের বকেয়া ৩ মাসের টাকা স্বীয় তহবিলে জমা দানের দাবিসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে কুরমা চা বাগানে শ্রমিকদের কর্মবিরতির সত্যতা নিশ্চিত করেন। কর্মবিরতি চলাকালে সমঝোতা বৈঠকে আলোচনাক্রমে পিএফ তহবিলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে টাকা জমা করার সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাকি দাবিগুলো পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে আলোচনা করে পর্যায়ক্রমে পূরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে বলেও তিনি জানান।
কুরমা চা বাগান ব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান বলেন, সাধারণত এক মাসের টাকা পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে দেওয়া হয়। তাছাড়া কোম্পানীর ১২টি বাগানের টাকা একসাথে দেওয়া হয়। এখানে আর্থিক সচ্ছলতার বিষয়টিও সম্পৃক্ত। তবে কর্তৃপক্ষ টাকা না পেয়ে আমাদের যে চিঠি দিয়েছেন সেটির কপিও পঞ্চায়েতকে দেয়ায় এই সমস্যা দেখা দেয়। বিষয়টি সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে সমাধা হয়েছে এবং টাকাও যথারীতি জমা দেয়া হবে।
সমঝোতা বৈঠকে চা বাগান ব্যবস্থাপকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ, চা বাগান পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী, চা শ্রমিক ইউনয়িনের মনু-ধলই ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা, শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন, বাঘাছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি রাখাল গোয়ালা, চাম্পারায় চা বাগান পঞ্চাযেত সভাপতি শংকর ব্যানার্জি ও কুরঞ্জী চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি শিমন্ত মুন্ডা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।