বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
কোনটা ফুটতে শুরু করেছে, কোনটা ¤্রয়িমান আবার কোনটা প্র¯ফুটিত, এভাবেই জলের সাথে মিতালি করে পুরো একটা হাওরে বুক জুড়ে ফুটেছে লাল শাপলা যার বৈজ্ঞানিক নাম ( nymphaea rubra)|কাগজে কলমে হাওরের নাম বিকি বিল থাকলেও লোকমুখে সবাই বেকি বিল বলেই থাকে। তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নে বাদাঘাট ট্যাকের সড়কের মাঝা মাঝিতে এর অবস্থান। মুলত বোর ফসলি জমির হাওর। বার মাস’ই কম বেশি শাপলার দেখা মিলে বিকি বিলের হাওরে। তবে অক্টোবর নভেম্বর মাসে এর বিস্তৃতি বেড়ে যায় বহু গুণে। হাওরের পুরোটা বুক জোড়েই ফুটে থাকে লাল শাপলা। অনেক দিন ধরে যাবো যাবে করেও যাওয়া হয়নি বিলের ধারে কিংবা যখন গেছি তখন হয়তো সেভাবে ফুলের দেখা মেলেনি। তাই হুট হাট করে ৭ অক্টোবর সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়লাম। তাহিরপুর সদর থেকে বাইকে করে রওয়না দিলোম সাথে একাধিক শাপলা প্রেমিদের নিয়ে। মুলত একাধিক শাপলা প্রেমিদের জন্য যাওয়া। শরতের সকাল হেমন্তর কোয়াশা নিয়ে সকাল ৭ টার মধ্যে হাজির হলাম বিলে। কোয়াশার কারনে দূরের মেঘালয় আড়ালেই রয়ে গেল কাছ থেকে। দুর থেকে দেখে বুঝতে পারছিলাম না কি পরিমান ফুল ফুটেছে হাওরের বুকে। যতই কাছে যাচ্ছি ততই স্পষ্ঠ হচ্ছে ফুলের বিস্তৃতি। এরই মধ্যে ভ্রমণ পিয়াসু শাহীন আহমেদ ভাই জানালেন বরিশাল সাতলা কিংবা জৈন্তাপুর ডিবির হাওরের চাইতে এখানে প্রচুর শাপলা ফুটেছে। শুনে মনটা খানিক ভালো হলো। যাই হোক সকালটা মন্দ যাবেনা আজকে। বাইক থেকে নেমে বিলের মধ্যে শাপলার কাছাকাছি যাওয়া জন্য চেষ্টা। ঘাটে মাছ ধরা জেলেদের দু’একটা নৌকা ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। তাই জেলেদের কিছুটা অনুনয় বিনয় করে তাদের কাছ থেকে একটি নৌকা নিয়ে সেই সাথে ঘাটে ডুবানো একটা ছোট নৌকা সেচে বিলের মধ্যে প্রস্ফুটিত শাপলার কাছাকাছি যাওয়া। কোথাও হাঁটু সমান জল কোথাও একটু বেশী। এরই মধ্যে শাপলার বুকে খানিকটা ভাসলো আমাদের নৌকা। কিছুটা কুয়াশা থাকায় সকালের রোদ কিরণ পড়েনি প্রস্ফুটিত লাল শাপলার পপড়ি গুলোয়। তাই কিছুটা ম্লান মনে হয়েছে ফুলের পাতায় পাতায়। অনেকক্ষণ নৌকায় বসে লাল শাপলা গুণছিলাম এদিক ও দিক চেয়ে। যে দিকেই চোখ পড়েছে শুধু লাল রঙ এর খেলা দেখেছি সবুজ পাতায়। গুণতে পারিনি তাই অগুণতি থেকে গেলো। এরই মাঝে কথা হলো বাদাঘাট সরকারী ডিগ্রি কলেজ ও ক্রীড়া শিক্ষক ও বিকি বিল পাশ^র্স্থ পৈলন পুর গ্রামের গ্রামের রফিকুল ইসলাম এর সাথে, তিনি আমাদের জানালেন এ হাওরে ১ হাজার একররে বেশী জমি রয়েছে,গত ১৫ /২০ বছর পূর্বে সামান্য ফুল ছিল, গত দু বছর ধরে পুরো হাওরে লাল শাপলা ফুটে।
লোক মুখের আড়ালে কিংবা প্রচার না থাকায় টাঙ্গুয়া হাওরে হাজারো পর্যটক আসলেও এই বিকি বিলে তেমন একটা লোক জনের পদচারণা হয় নি। স্থানীয়রাই লাল শাপলার নয়ন লোভন সৌন্দর্য উপভোগ করেন। অনেক দিন ধরে ছোট ভাই সোহাগ, নাসরুম, মিজান ও বন্ধু সাইদুল তাগাদা দিচ্ছিল বিকি বিলের লাল শাপলা দেখতে। তাদের আগ্রহে সকালের ঘুম জলাঞ্জলি দিয়ে লাল শাপলার হাসি মুখ নিয়ে বাড়ি ফিরেছি গল্প বলতে বলতে বিকি বিল থেকে।
যে ভাবে যাবেন : আপনি দেশের যে প্রান্থ থেকে আসেন না কেন প্রথমে আপনাকে তাহিরপুর আসতে হবে। সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে তাহিরপুর উপজেলা সদর হয়ে কিংবা যাদুকাটা নদী পার হয়ে বিকি বিলে যাওয়ায় ব্যবস্থা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আপনি শুধু বাইকে যাতায়াত করতে পারবেন। অন্য দিকে তাহিরপুর সদর থেকে নৌকা যোগেও বিকি বিল যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আপনি যে ভাবেই যান না কেন আপনাকে সক্কাল সক্কাল যেতে হবে। কারণ শাপলা ফুল সূর্য উঠার পর পরই ম্রিয়মান হতে শুরু করে। তাই দেরি করলে পরিপূর্ণ সৌন্দর্য টা মিস করতে পারেন।