স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর ২৭নং ওয়ার্ডের গোটাটিকর এলাকায় অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে মিষ্টি খাইয়ে ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। গতকাল শনিবার দুপুরে সোলেমান মিয়ার বাসায় এ ঘটনাটি ঘটে।
জানা যায়, বালাগঞ্জ থানার চাঁনপুর গ্রামের জমসেদ আলীর পুত্র মো. ফয়জুল হক মেম্বারের পরিচয় হয় জুবায়ের ও শহিদুলের সাথে। জুবায়ের ও শহিদুল গত তিন মাস থেকে গোটাটিকর এলাকায় সোলেমান মিয়ার বাসায় ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করছিল। প্রায় মাস খানেক আগ থেকে ফয়জুল হকের সাথে জুবায়ের ও শহিদুলের পার্টনারশিপ হয়ে জায়গা ক্রয়ের জন্য কথা হয়। তিনজন মিলে দেড় কোটি টাকা দিয়ে সোলেমান মিয়ার বাসার পাশে একটি প্লট ক্রয় করবেন বলে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। গতকাল শনিবার তিনজন মিলে প্লটের বায়না বাবদ ৬০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা থাকায় ফয়জুল হক তার অংশের ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে গোটাটিকরের সোলেমান মিয়ার ৫ তলা বাসায় আসেন। বাসায় আসার পর তিনজনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়। জুবায়ের ও শহিদুল ফয়জুল হককে জিজ্ঞেস করে যে, আমরা আমাদের অংশের টাকা রেডি করে রাখছি, আপনি আপনার অংশের টাকা সাথে নিয়ে এসছেন তো। তখন ফয়জুল হক তার অংশের টাকা নিয়ে সাথে এসেছেন বলে জানান। এক পর্যায়ে তিনজন মিলে মিষ্টি ও ঠান্ডা পান করেন। মিষ্টি ও ঠান্ডা খাওয়ার পর ফয়জুল হকের মাথায় ঝিমঝিম করাতে মাথায় পানি ঢালার জন্য তিনি বাথরুমে যান।
এরইমধ্যে প্রতারক জুবায়ের ও শহিদুল ফয়জুল হকের টাকার ব্যাগ নিয়ে উধাও হয়ে যায়। বাথরুম থেকে ফয়জুল হক ফিরে এসে চোখে ঝাপসা দেখেন এবং তার টাকার ব্যাগ সহ জুবায়ের ও শহিদুলকে দেখতে না পেয়ে তিনি ঐ বাসার কেয়ারটেকারকে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় যে, জুবায়েরকে সে চিনে বলে জানায়। তিনি সাথে সাথে মোগলাবাজার থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করলে আলমপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ রুবেল ও এএসআই আব্দুল জলিল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে সোলেমান মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান, তিনি ভাড়াটিয়াদেরকে চিনেন এবং গত ৩ মাস থেকে তারা বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে এবং বাসার ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ আছে। এসময় বাসার মালিক সোলেমান মিয়া পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অসংগতিপূর্ণ কথাবার্তা বলেন।
বাসার মালিক সোলেমান মিয়ার স্থায়ী ঠিকানা জকিগঞ্জ থানায়। তিনি গোটাটিকর এলাকায় জায়গা ক্রয় করে ৫ তলা বিশিষ্ট দুটি ভবন নির্মাণ করেন। ভবনগুলো ভাড়া দেওয়ার পর থেকে সোলেমান মিয়া ও তার শশুরের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বলে জানা যায়।
বিগত কয়েকদিন আগেও একটি সিকিউরিটি কোম্পানীকে ভাড়া দিয়ে ঐ কোম্পানী অনেকের টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সংবাদটি একটি বেসরকারী টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। ফয়জুল হকের দাবী ঐ বাসার কেয়ার টেকার সোলেমান মিয়ার শশুর এসব ঘটনার সাথে জড়িত।
গোটাটিকর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হক এনাম জানান, ঐ ভবনের বাসা ভাড়া দেওয়ার পর থেকেই নানা অভিযোগ রয়েছে। আমরা স্থানীয়রা অনেকবার বলার পরেও তারা ভাড়াটিয়ার তথ্য না নিয়েই বাসা ভাড়া দিয়ে থাকেন।
এ ব্যাপারে প্রতারিত হওয়া ফয়জুল হক জানান, ঐ ঘটনায় বাসার কেয়ারটেকারের যোগসাজস আছে বলে আমি মনে করি। তিনি নিজে বাদী হয়ে মোগলাবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন।
সোলেমান মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এমনকি তার স্থায়ী ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, ভোক্তভোগী ফয়জুল হক বাদি হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দিয়ে গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।