কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগ্রহ যেখানে নেই, সেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি শেষ পর্যন্ত কি হতে যাচ্ছে সে নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমার সরকার তাদের সেনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লেলিয়ে দিয়ে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে সে দেশের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। গত দুবছর সময়ে মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়নি। উপরন্তু এদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। অপরদিকে পালিয়ে আসা রোিহঙ্গারাও নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নে কিছু দাবি তুলেছে। উভয় পক্ষের এ ধরনের শর্ত ও দাবির বিপরীতে প্রত্যাবাসন ইস্যু এখন নিস্তেজ। ইতোপূর্বে গত বছরের ১৩ নবেম্বর ও ২২ আগস্ট দুদফা বাংলাদেশ পক্ষ সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করার পরও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। এ ঘটনার জন্য মিয়ানমার সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও রোহিঙ্গাদের মাঝে নানা চাপ সৃষ্টি হয়ে থাকায় মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মিয়ানমার পক্ষ বিশ্বচাপে থাকলেও তারা তাদের প্রণীত পরিকল্পনা অনুযায়ী অবস্থানে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক ২ এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা : উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কর্মরত আন্তর্জাতিক এনজিও আদ্রা এবং আল মারকাজুল ইসলাম বাংলাদেশকে শুধু রোহিঙ্গা শিবির নয়, বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে এনজিও ব্যুরো। বুধবার থেকে এনজিও ব্যুরোর এ আদেশ জারি হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এনজিও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আশরাফুর আবসার জানিয়েছেন আদ্রা ও আল মারকাজুল ইসলাম নামের এ দুটি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ দুই এনজিওর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকা, গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের শোডাউনে আর্থিক সহায়তা, টি শার্ট সরবরাহসহ বেআইনী তৎপরতার বহু বিষয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরও জানান, এ দুই আন্তর্জাতিক এনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তাদের সকল প্রকল্প কক্সবাজার অঞ্চল থেকে গুটিয়ে ফেলার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এর আগে মুক্তি কক্সবাজারসহ ৪১ এনজিওর কার্যক্রম রোহিঙ্গা শিবির থেকে গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় এনজিও ব্যুরো থেকে।
এদিকে নতুন শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে কাজে যোগ দেবেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। বিদায়ী আরআরআরসি আবুল কালামও আজ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি হিসেবে যোগ দেবেন। উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠান নিয়ে আরআরআরসি আবুল কালাম ও তার প্রশাসন তুমুল বিতর্কে পড়েন। সরকার পক্ষও এ ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরআরআরসি আবুল কালামকে ওএসডি ও সাত ক্যাম্প ইনচার্জকে বদলির আদেশ আসে।
এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জটিলতা, রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী ও অপরাধ কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিওর বিরুদ্ধে এবং আইএনজিওগুলোর লাগামহীন কর্মকান্ড, দীর্ঘদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত বিভিন্ন রোহিঙ্গা সংগঠনের অপতৎপরতা বৃদ্ধিসহ আরও বহুবিদ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। এসব মোকাবেলার জন্য নতুন আরআরআরসিসহ অন্য সব সংস্থাকে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। সমাধানের পথ খুঁজতে হবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এনজিও এবং আইএনজিওগুলোর দ্বন্দ্ব, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থানসহ দীর্ঘদিন জিইয়ে থাকা অনেক জটিল সমস্যার।
প্রয়োজন আরও পরিবর্তন : উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ নানা রকমের অভিযোগ উঠেছে। এনজিওদের প্রতিটি প্রকল্প থেকে ঘুষ দাবি, তাদের পরিবারের লোকজন ও নিকটাত্মীয়দের চাকরি দেয়া, পরিদর্শনের নামে হয়রানি, রোহিঙ্গা মাঝির মাধ্যমে চাঁদা তোলা, ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং ত্রাণের মালামাল বিক্রিতে সহায়তা করে টাকা আয় করাসহ অনেক নারী এনজিও কর্মীর হয়রানিরও অভিযোগ উঠেছে। মূলত ২ সেপ্টেম্বর প্রভাবশালী ৩ জন ক্যাম্প ইনচার্জসহ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে একযোগে বদলি হওয়ায় অনেক এনজিও প্রধান গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব তথ্য তুলে ধরছেন। এছাড়া বদলি হওয়া ক্যাম্প ইনচার্জ শামিমুল হক পাভেলের স্ত্রীও আইওএম এনজিওতে চাকরি করেন বলে জানান তারা। একইসঙ্গে বেশির ভাগ ক্যাম্প ইনচার্জদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তাকে বাধ্য হয়ে চাকরি দিতে হয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
থ্রি ও ফোরজি বন্ধ : রোহিঙ্গা শিবিরে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করতে বিটিআরসির নির্দেশ অনুযায়ী মোবাইল অপারেটররা শিবিরগুলোতে বিকেল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত তেরো ঘণ্টা থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধ করেছে।
৪ বিজিপি সদস্য হস্তান্তর : মিয়ানমারের বিজিপির চার সদস্যকে বুধবার পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে হস্তান্তর করে বিজিবি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে টেকনায় দুই নম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফয়সাল হাসান খান জানান, গত ২৫ আগস্ট রাতে নাজিরপাড়া সংলগ্ন নাফ নদীর তীর থেকে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী বিজিপির ওই চার সদস্যকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়।
স্থল মাইন বিস্ফোরণে রোহিঙ্গা হত : সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে এক রোহিঙ্গা। তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় মিলেনি। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম এলাকার ৩৯তম পিলারের তুইঙ্গাপাড়া এলাকা থেকে ওই রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।