কাজিরবাজার ডেস্ক :
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ রিপোর্ট (চার্জশীট) রবিবার সাড়ে চারটার দিকে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার ৬৫ দিন পর রবিবার বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ২৪ আসামির বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ৬শ’ ১৪ পৃষ্ঠার এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এজাহারভুক্ত এক নম্বর সাক্ষী নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে ৭নং আসামি করা হয়েছে। অপরদিকে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন বন্ডকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
চার্জশীট প্রদানের বিষয়ে কোর্ট ইন্সপেক্টর আবদুল কুদ্দুস জানান, মামলার এজাহারে ১২ আসামির নাম উল্লেখ থাকলেও চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে ২৪ জনের নামে। এদের মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৪ জন শিশু। শিশুদের জন্য আলাদা সম্পূরক চার্জশীট প্রদান করা হয়। এপর্যন্ত এ মামলায় গ্রেফতারকৃত ১৫ আসামির মধ্যে কেউকেই অব্যাহতি প্রদান করা হয়নি। দন্ডবিধির ৩০২/৩৪/২১২/১০৯/ ১১৪/১২০-বি (১) ধারায় পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। সোমবার বিচারক দাখিলকৃত অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করবেন।
এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, চন্দন, মোঃ মুসা, মোঃ রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান, মোঃ হাসান, রিফাত, অলি ও টিকটক হৃদয়। আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে সম্পৃক্ত করার বিষয় স্পষ্ট হলে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়। মিন্নি ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করায় তাকেও আসামি করা হয়।
২৬ জুন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারী কলেজের গেটের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে গুরুতর যখম করে নয়ন বন্ড, রিফাত ও রিশান ফরাজীসহ একটি দুর্বৃত্তচক্র। কোপাকুপির এ দৃশ্য তিনতলার ছাদ থেকে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে দেশ বিদেশে হত্যাকান্ডটি ভাইরাল হয়ে যায়। ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় সর্বত্র। বেলা সাড়ে তিনটায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত শরীফ। ২৭ জুন এ বিষয় বরগুনা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় মামলা দায়ের করেন হত্যাকান্ডের শিকার রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। প্রধান সাক্ষী হয় হত্যাকান্ডের সময় উপস্থিত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। নিরাপত্তাজনিত কারণে মিন্নির বাড়িতে ক্যাম্প করে পুলিশ পাহাড়া বসানো হয়। ২ জুলাই রিফাত শরীফ মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়নবন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। এ যাবত এজাহারভুক্ত ৮ এবং সন্দেহভাজন ৭ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ধৃত আসামিদের পুলিশের রিমান্ডে নেয়ার পর সকলেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে বরগুনাসহ দেশে-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে মানববন্ধন। ১৪ জুলাই রিফাত শরীফের পরিবার বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নিকে রিফাত শরিফ হত্যা মামলায় জড়িত বলে গ্রেফতার দাবি করে। পরদিন শহরে একই দাবিতে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মানববন্ধন হয়। ১৬ জুলাই মিন্নিকে একই মামলার অন্য আসামিদের শনাক্তকরণের জন্য পুলিশ লাইনে আনা হয়। ওইদিন রাতেই পুলিশ মিন্নিকে গ্রেফতার করে। ১৭ জুলাই মিন্নিকে পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ডে নিলেও দুদিনের মাথায় মিন্নি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। মিন্নির পক্ষে তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর হয়। একই সঙ্গে পুলিশ নির্যাতন করে জবানবন্দী নিয়েছে দাবি করে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন জানায়। আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলে হাইকোর্ট ‘কেন মিন্নির জামিন দেয়া হবে না’ মর্মে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চান। ২৯ আগষ্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করেন। বরগুনা কারাগারে জামিনের কাগজপত্র পৌঁছার পূর্বেই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
এদিকে চার্জশীটে মিন্নিকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, আমি সন্তুষ্ট। তিনি দ্রুত মামলাটির বিচার নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, মিন্নি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।’
বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিনের খবরে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। অপরদিকে মিন্নির জামিনে মুক্ত হওয়ার খবরে হতাশা ব্যক্ত করেছেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। চার্জশীটে মিন্নিকে সম্পৃক্ততায় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার, পুলিশ আমাদের প্রতি অন্যায় করেছে।