১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি ও ধসের পর গত ২৩ বছরেও স্থিতিশীল করা যায়নি বাজারকে। ২০১০ সালে আরেকটি বড় ধস দেখে বিনিয়োগকারীরা। সেই থেকে যে পতনের শুরু, তা আর কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। বাজারের চতুর খেলোয়াড়রা এর মধ্যেও বাজার থেকে তুলে নিয়েছে ব্যাপক লভ্যাংশ। সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। সংখ্যায় তারা বেশি হলেও তাদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই। ফলে আস্থার সংকটে বাজার ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। দরপতনের পাশাপাশি শেয়ারবাজারে সূচকেরও পতন ঘটছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবার দেশের দুই পুঁজিবাজার ডিএসই ও সিএসই সূচক হ্রাস পেয়েছে। ডিএসইতে শেয়ার বিক্রির চাপ থাকায় ৬৬ শতাংশ কম্পানির শেয়ারের দাম হ্রাস পেয়েছে। আর সিএসইতে ৭৬ শতাংশ কম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।
এমন ঘটবে কেন? পুঁজিবাজার পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, লাভে থাকার পরও বাজারে আসছে না অনেক সরকারি কম্পানি, আমলাদের অনীহা রয়েছে বাজারের ব্যাপারে। ফলে গত ১১ বছরে মাত্র একটি সরকারি কম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে। সরকারি কম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে গঠিত কমিটি কার্যত অচল। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ভালো শেয়ারেরও সংকট রয়েছে। সরকারি শেয়ার এবং বহুজাতিক কম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে এ সংকট থাকবে না। বহুজাতিক কম্পানিগুলো এ দেশে ভালো ব্যবসা করে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে। তারা দেশের পুঁজিবাজারে এলে বাজারের গভীরতা ও ব্যাপ্তি বাড়ত। পুঁজিবাজারমুখী হতো বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও। লাভবান হতো সংশ্লিষ্ট কম্পানি, দেশ ও সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশে চার শতাধিক বহুজাতিক কম্পানি ব্যবসা করলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মাত্র ১৩টি। বাধ্যতামূলকভাবে পুঁজিবাজারে আনার মতো কোনো আইন না থাকায় পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি অন্যতম। বাজারের মন্দাবস্থার কারণে ক্রমাগত কমছে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। পুঁজিবাজার সাপোর্টে রাষ্ট্রায়ত্ত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়েও নানামুখী প্রশ্ন রয়েছে। বাজার গতিশীল রাখতে সরকার থেকে আইসিবি কোটি কোটি টাকার ফান্ড পেলেও তাদের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে স্টেকহোল্ডাররা।
একাধিক বড় বিপর্যয়ে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হওয়ার কারণে দেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের ভীতি ও শঙ্কা কাজ করছে। শেয়ারবাজারে সৃষ্ট হঠাৎ অস্থিরতার কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করে দেশের পুঁজিবাজারকে আরো গতিশীল করতে হবে। শেয়ারবাজার সক্রিয় করতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া গেলে অবশ্যই গতিশীল হবে শেয়ারবাজার। তবে কথিত ‘খেলোয়াড়দের’ সম্পর্কে সচেতন থেকেই বিনিয়োগ করতে হবে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি বিধান করা গেলেও আস্থার সংকট অনেকটা কেটে যেত বলে ধারণা করা যেতে পারে।