কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্মেলন পেছাতে পারে বলে দলটির নেতাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। তারা বলছেন, গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকে যথাসময়ে অর্থাৎ আগামী অক্টোবরের মধ্যেই সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজও শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো আর এগোয়নি। জুলাই শেষ হতে চলেছে। শোকের মাস আগস্টে শোকের কর্মসূচি ছাড়া সাংগঠনিক কোনও কর্মকাণ্ড হয় না। এরপর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি নিউইয়র্কে যাবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফিরবেন সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের প্রথমে। যে কারণে অতি অল্প সময়ে সম্মেলন আয়োজন সম্ভব নাও হতে পারে। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
গত এক দশক ধরে নির্ধারিত সময়েই সম্মেলন করে আসছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। দলটির সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। সে হিসাবে আগামী অক্টোবরের ২৩ তারিখে শেষ হচ্ছে তিন বছরের জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘সম্মেলনের জন্য খুব সীমিত আকারে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে অনেক আগেই। যদিও এই মাসে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সম্মেলন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। সম্মেলনের আগে বেশ কিছু কাজ থাকে। সেগুলো এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ এতো শক্তিশালী সংগঠন যে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অক্টোবরেই সম্মেলন করা হবে, তাহলে সেটা সম্ভব।’
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, সম্মেলনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক সফরের জন্য দলের আটটি টিম গঠন করা হয়। ঈদুল ফিতরের আগেই দু’একটি জেলায় সফরেও যান নেতারা। কিন্তু রমজান মাসে সফর বন্ধ হয়ে যায়, যা এখনও পূর্ণাঙ্গরুপে শুরু হয়নি। এছাড়া প্রতিটি সম্মেলনের আগে তৃণমূল তথা ইউনিয়ন, থানা, জেলা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে এরপর কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। এবার হাতে গোনো দু’একটি থানা ছাড়া এখনও কোথাও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে আগামী সেপ্টম্বরে কয়েকটি জেলায় সম্মেলন করার বিষয়ে আলোচনা করছেন দলটির নেতারা।
এছাড়া কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোরও সম্মেলন করা হয়। আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শ্রমিক লীগের মধ্যেও কোনও সম্মেলন প্রস্তুতি নেই।
এছাড়া এখন সারাদেশে বন্যা এবং রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বন্যা মোকাবেলা ও ত্রাণ বিতরণের কাজ করছেন। সেদিক থেকেও সাংগঠনিক কার্যক্রম আপাতত শিথিল।
এদিকে সম্মেলন করার আগে জরুরি বিষয় হলো সদস্য সংগ্রহ অভিযান। এতে নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং পুরনো সদস্যদের সদস্যপদ নবায়ন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও সেভাবে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়নি।
এছাড়া গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রতি সম্মেলনের আগে হালনাগাদ করা হয়। এবার এখনও এ সংক্রান্ত কোনও আলোচনা বা উদ্যোগ দেখা যায়নি। আর সম্মেলনের আবশ্যিক প্রস্তুতি কাউন্সিলর তালিকা তৈরি, মঞ্চ সাজানো, বিভিন্ন প্রকাশনা বের করার কাজ তো থাকছেই।
তবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শোক জানিয়ে প্রতি বছর আগস্ট মাসে যেকোনও ধরণের সাংগঠনিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে শাসক দল আওয়ামী লীগ। যে কারণে সেপ্টেম্বরেই এক যোগে তৃণমূলে সম্মেলন, সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন, সদস্য সংগ্রহ অভিযান সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন নেতারা। গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই)দলের সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গির কবীর নানক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে এসব বিষয় নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। সেখানে সম্মেলন অল্প দিনের জন্য পেছাতে হতে পারে বলে মতামত উঠে আসে।
সম্মেলন নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘দলের সম্মেলন অব্যাহত একটা প্রক্রিয়া। কিছু বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা হবে। সেখানে যথাসময়ে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হতে পারে আবার যৌক্তিক কারণে অল্প কিছুদিন পিছিয়েও সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কাজেই এখনি চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না সম্মেলন পেছাচ্ছে।’