সাক্ষাতকালে প্রিয়া সাহা ॥ দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না

24

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না বলে মন্তব্য করেছেন প্রিয়া সাহা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩৭ মিলিয়ন মানুষের ‘ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বইয়ের (২০০১ সালের) ধর্মীয় সংখ্যালঘু যে চ্যাপ্টার রয়েছে এবং সরকারি জনগণনা (সেনসাস) রিপোর্টে থেকে এ সংখ্যা পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করে আলোচনায় আসা প্রিয়া সাহা এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত এক সাংবাদিককে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। ৩৫ মিনিটি ২ সেকেন্ডের এই সাক্ষাৎকার গতকাল শনিবার (২০ জুলাই) ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রানা দাস গুপ্তসহ কেউ জানেন না যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন।
নিজের পরিবার ভীষণ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন প্রিয়া সাহা। তিনি বলেন, গতকাল তার বাসার সামনের তালা ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের ছবি পত্রিকায় ছেপে দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে নিজের দেওয়া বক্তব্যকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য বলে দাবি করেন প্রিয়া সাহা। বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর যখন ৯৪ দিন ধরে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলেছিল, তখন আজকের প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা সারাবিশ্ব ঘুরে বেড়িয়েছেন সংখ্যালঘুদের রক্ষায়। নানা জায়গায় বক্তব্য দিয়েছেন। ‘আমি তার কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে তার কথা অনুসরণে আমি কথা বলেছি। এবং যেকোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনও জায়গায় বলা যায়, আমি তার কাছে শিখেছি।’
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩৭ মিলিয়ন মানুষের ‘ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ সম্পর্কে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বইয়ের (২০০১ সালের) ধর্মীয় সংখ্যালঘু যে চ্যাপ্টার রয়েছে এবং সরকারি সেনসাস রিপোর্টে থেকে এ সংখ্যা পাওয়া যায়। দেশভাগের সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল ২৯.৭ ভাগ, এখন তা কমে ৯.৭ ভাগ। দেশের মানুষ এখন ১৮০ মিলিয়নের মতো। এই অনুযায়ী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বাড়লে তার দেওয়া সংখ্যাটা মিলে যায়। এ ক্ষেত্রে নিজ জেলা পিরোজপুরের উদাহরণ টানেন। বলেন, ২০০৪ সালে তাদের গ্রামে ৪০টি সংখ্যালঘু পরিবার ছিল, এখন আছে ১৩টি।
সাক্ষাৎকারে প্রিয়া সাহা দেশের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের অভিযোগ করেননি বলে দাবি করেন। জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা তুলে ধরার পেছনে তার অভিপ্রায় ছিল মৌলবাদবিরোধী লড়াইকে জোরদার করা। প্রিয়া সাহার মতে, বর্তমান সরকার মৌলবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারও মৌলবাদের বিরুদ্ধে। তিনি চান, দুই দেশের সরকার যৌথভাবে মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়ুক। এ কারণে তিনি ট্রাম্পের কাছে এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে নিজ জেলা পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সংখ্যালঘু নির্যাতনের কিছু চিত্র তুলে ধরেন প্রিয়া সাহা। দেশের ৯৯ ভাগ মানুষ অসাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিছু দুষ্টু লোক আছে। তারাই মৌলবাদ উসকে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে তিনি আজীবন লড়াই করবেন। দেশ ছেড়ে কোথাও যাবেন না মন্তব্য করে প্রিয়া সাহা বলেন, তার এ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তিনি আশা করেন সব ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। সব ধরনের পরিসংখ্যান দেখলে তার বক্তব্য পরিষ্কার হবে।