ট্রাফিক বিভাগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না ॥ পার্সেল কোম্পানীগুলোর কার্গো ভ্যানের কারণে জিন্দাবাজারে যানজট ॥ চার মাসেও অফিস স্থানান্তর হয়নি

88
দিন দুপুরে নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারে প্রবেশ করছে একটি কার্গো সার্ভিসের গাড়ি। গাড়ি প্রবেশের ফলে প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হয়। ছবিটি সম্প্রতি নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজার থেকে তোলা।

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জিন্দাবাজার। এই এলাকার যানজট যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। সকাল ৮টা হোক বা রাত ৮টা, কখনোই এই এলাকা যানজটমুক্ত রাখা যায় না। তাই প্রায় ৪ বছর আগে সিলেট ট্রাফিক প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় জিন্দাবাজার এলাকার পার্সেল সার্ভিসের অফিসগুলো ব্যস্ততম এই এলাকা থেকে সরানো। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিলেট জেলা পার্সেল সমিতির সদস্যদের নিয়ে সভা করে তাদের প্রতিষ্ঠান জিন্দাবাজার এলাকা থেকে সরানোর নির্দেশনা দেন। তখন গুটি কয়েক পার্সেলের অন্য এলাকায় প্রতিষ্ঠান স্থানন্তর করলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সেই নির্দেশনা অমান্য করে। ওইসব পার্সেল সার্ভিসের বড় বড় কার্গো ভ্যান অবাদেই জিন্দাবারে প্রবেশ করে। যার ফলে বিশাল এসব কার্গো ভ্যান যখন জিন্দাবাজারে প্রবেশ করে এবং বাহির হয় তখন দীর্ঘ যানজন সৃষ্টি হয়।
প্রায় তিন মাস আগে আবারও ট্রাফিক প্রশাসন সব পার্সেলের ম্যানেজার ও সিলেট জেলা পার্সেল সমিতির সদস্যদের নিয়ে সভা করে। তখন আবারও সিদ্ধান্ত হয় ২০২০ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে জিন্দাবাজার থেকে সকল পার্সেল সার্ভিস সরানোর। সভায় সকল পার্সেলের প্রতিনিধিরা ট্রাফিক প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সম্মতি প্রকাশ করলেও এখন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি ট্রাফিক প্রশাসনও জিন্দাবাজার থেকে ওইসব পার্সেল সার্ভিসের অফিস সরানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
সিলেট জেলা পার্সেল সমিতি সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলা পার্সেল সমিতির সদস্য হিসেবে আছে ৮টি পার্সেল সার্ভিস। সুন্দরবন পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ পার্সেল সার্ভিস, রেইনবো পার্সেল সার্ভিস, সুগন্ধা পার্সেল সার্ভিস, জননী পার্সেল সার্ভিস, এস.এ পরিবহন পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিস, এ.জে. আর পার্সেল সার্ভিস, ওমেক্স পার্সেল সার্ভিস। চার বছর আগে যখন ট্রফিক প্রশাসন নির্দেশনা দেয় তখন এস.এ পরিবহন পার্সেল এন্ড কুরিয়ার সার্ভিস, সুগন্ধা পার্সেল সার্ভিস, রেইনবো পার্সেল সার্ভিসজিন্দাবাজার থেকে অফিস স্থানন্তর করে নেয়। তবে প্রায় ২ বছর আগে রেইনবো পার্সেল সার্ভিস আবারও জিন্দাবাজারে তাদের অফিস নিয়ে আসে।
এই ৮ পার্সেল সার্ভিসের মধ্যে ৬টির অফিস এখনো জিন্দাবাজার এলাকায় থাকায় বিভিন্ন সময় তাদের বড় কার্গো গাড়ি এই এলাকায় প্রবেশ করে। এই গাড়িগুলো প্রবেশ, বাহিরের সময় জিন্দাবাজার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এ সড়ক ব্যবহারকারী সাধারণ জনগনসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ পার্সেল সার্ভিসের ম্যানেজার মো. জাহারুল ইসলাম বলেন, ট্রাফিক প্রশাসন থেকে মৌখিক ভাবে আমাদের বলা হয়েছে ১ জানুয়ারির মধ্যে জিন্দাবাজার থেকে অফিস স্থানান্তরের জন্য। কিন্তু আমাদের অফিসের বিল্ডিংয়ের মালিকের সাথে চুক্তি পূর্ণ না হওয়ায় আমরা যেতে পারছি না। চার পাঁচ মাসের মধ্যে আমাদের চুক্তি শেষ হবে। ইতোমধ্যে অফিস স্থানন্তরের জন্য কাজিরবাজারের দিকে নতুন অফিস দেখা হয়েছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেই আমরা নতুন জায়গায় চলে যাব।
রেইনবো পার্সেল সার্ভিসের ম্যানেজার হাসান বলেন, আমি একমাস যাবত এই প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে আছি। তাই ট্রাফিক প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বা প্রতিষ্ঠান স্থানন্তরের বিষয়ে আমি জানি না। তবে গত কয়েক মাস যাবত জিন্দাবাজারে গাড়ি প্রবেশ করাতে ট্রাফিক পুলিশ সমস্যা করছেন। যদি প্রতিষ্ঠান স্থানন্তরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তাহলে আমি আগের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানাতে পারবো।
জননী পার্সেল সার্ভিসের ম্যানেজার মিজানুর রহমান মনির বলেন, ট্রাফিক প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল পার্সেল সার্ভিসগুলো এখান থেকে সরানো যায় কি না। এখন আমাদের এত সার্মথ্য নাই যে সিলেটে ২টি অফিস রেখে ব্যবসা করার। তাছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ২ বার আসে। খুব সকালে ও বেলা ১১টার দিকে। তখন তেম কোনো সমস্যা হয় না।
অফিস স্থানান্তর নিয়ে মতবিরোধ আছে সিলেট জেলা পার্সেল সমিতির সদস্যদের মধ্যেও। বেশ কয়েকটি পার্সেল সার্ভিসের ম্যানেজার ও কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চার বছর আগে ট্রাফিক প্রশাসন নির্দেশনা দিলেও এখনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না ট্রাফিক প্রশাসনের কর্তাদের জন্যই। এ ব্যাপারে ট্রাফিক প্রশাসনের দায়িত্ব যারা আছেন তারা প্রতি মাসে প্রতিটি পার্সেল সার্ভিস থেকে মোটা অংকের মাসোহারা পান। তারা বিভিন্ন সময় ডেকে নিয়ে সভা করে নির্দেশনা দেন ও মাসোহারার পরিমান বাড়ান। এই উদ্যোগ কখনোই বাস্তবায়ন করবে না ট্রাফিক প্রশাসন। কারণ জিন্দাবাজার থেকে অফিস স্থানান্তর করলে ট্রাফিক পুলিশের মাসোহারা বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পার্সেল সমিতির সভাপতি মো. মানিকুজ্জামান চৌধুরী মানিক বলেন, চার বছর আগে ট্রাফিক প্রশাসন নির্দেশনা দেয় জিন্দাবাজার থেকে পার্সেল সার্ভিসের অফিস সমূহ স্থানান্তর করার। তখন আমার প্রতিষ্ঠান সুগন্ধা পার্সেল সার্ভিসের অফিসসহ তিনটি স্থানান্তর করা হয়। আমি সভাপতি তাই কেউ যেন প্রশ্ন না তুলে সেজন্য আগে আমার পার্সেল সার্ভিস স্থানান্তর করেছি। এখন কেউ সরতে না চাইলে আমিতো কাউকে জোর করতে পারি না।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আবারও ট্রাফিক প্রশাসন ডেকে নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন ১ জানুয়ারির মধ্যে জিন্দাবাজার থেকে অফিস স্থানান্তরের। আমি এ ব্যাপারে আমার সমিতির সদস্যদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছে স্থানান্তরের ব্যাপারে ট্রাফিক প্রশাসন যেহেতু জোর দিচ্ছি না তো আমি কেন জোর দিচ্ছি। এখন ট্রাফিক প্রশাসন যদি তাদের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কোনো উদ্যোগ না নেয় আমার কিছু করার নেই। তবে জনগনের ভোগান্তী বাড়িয়ে কারোরই ব্যবসা করা ঠিক হবে না। ব্যবসায়িক চিন্তা করলে আমিও আমার প্রতিষ্ঠান জিন্দাবাজার থেকে সরাতাম না। আমি এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ট্রাফিক প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মুহিবুর রহমান বলেন, জিন্দাবাজারের পার্সেল সার্ভিসগুলোকে অন্যত্র চলে যাওয়ার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি এতটুকুই জানি। কারণ আমি এই পদে নতুন এসেছি। যখন পার্সেল সমিতির সদস্যদের নিয়ে বসা হয় তখন প্রশাসনের দায়িত্বে ছিলেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ। তিনি এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, জিন্দাবাজারের যানজট নিরশনের জন্য প্রায় তিন মাস আগে সকল পার্সেল সার্ভিসের অফিস জিন্দাবাজর থেকে সরানোর মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে লিখিত ভাবে নির্দেশনা দেওয়ার জন্য আমাদের ডিসি স্যারের নির্দেশনা রয়েছে। তবে লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা সেটা আমি বলতে পারবো না। কারণ আমি এখন প্রশাসনের দায়িত্বে নেই। এখন যিনি দায়িত্বে আছেন তিনি এ ব্যাপারে আপডেট দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, শুধু পার্সেল সার্ভিস নয় সব ধরনের বড় কার্ভাড ভ্যান, কার্গো গাড়ি পিক আওয়ারে শহরে প্রবেশের নিষেদাজ্ঞা আছে। আমাদের নির্দেশনা আছে এসব বড় গাড়ি রাত ১০টার পর শহরে প্রবেশ করবে এবং সকাল ৯টার ভিতরে শহর ত্যাগ করবে। তবে যেহেতু পার্সেল সার্ভিসএকটি ইর্মাজেন্সি এবং জরুরি শাখা তাই তাদের বড় গাড়িগুলো শহরের বাইরে রেখে ছোট গাড়ি দিয়ে মালামাল আনতে বলা হয়েছিল।
তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস স্থানান্তর একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। আমরা তিন মাস আগে বলেছিলাম ১ জানুয়ারির ভিতর প্রতিষ্ঠানের অফিস স্থানান্তর করতে। এখন তাদেরকেও প্রতিষ্ঠান স্থনান্তরের জন্য সময় দিতে হবে।