কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ায় সরকার দলীয় ১০ থেকে ১৫ জন এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তবে তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ আয়োজিত ‘দুর্নীতি দমনে আইনজীবী ও বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছোট গাছ উপড়ে ফেলা যত সহজ বড় গাছ উপড়ানো তত কঠিন। আমরা বড় গাছ ধরছি না, তা নয়। আমরা ধরছি। চুনোপুঁটিও ধরব,বড় মাছও ধরব।’
সরকারি দলের পাশাপাশি অন্য দলের নেতাদেরও ধরা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্য এক দলের ১৫ জন, আরেক দলের ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। আরেক দলের ব্যবসাসংক্রান্ত ২৫ জন, ঊর্ধ্বতন আমলা সচিব থেকে শুরু করে ডেপুটি সেক্রেটারি পর্যন্ত ১৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।’
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ যারা দুর্নীতির কারণে কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের কল্যাণেই চুনোপুঁটিদের আইন-আমলে আনতে হচ্ছে এবং তা অব্যাহত রাখা হবে।’
‘তবে এ কথা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি শুধু চুনোপুঁটি নয়, রাঘব-বোয়ালদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, বিত্তবান ব্যবসায়ী কিংবা উচ্চ পদে আসীন অনেক আমলার বিষয়েও দুদক অনুসন্ধান, তদন্ত কিংবা প্রসিকিউসন করছে।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছোট গাছ উপড়ে ফেলা যত সহজ বড় গাছ উপড়ানো তত কঠিন। তাই বলে যে আমরা বড় গাছ ধরছি না, তা নয়। আমরা ধরছি। চুনোপুঁটিও ধরব, বড় মাছও ধরব। দেশের সাধারণ মানুষ যারা গ্রামে বাস করে তারাই দুর্নীতি, হয়রানি কিংবা অনিয়মের সবচেয়ে বড় শিকার। এসব দুর্নীতিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুনোপুঁটিরাই সম্পৃক্ত থাকেন।’
‘আসলে বৈপ্লবিকভাবে কিংবা হুট করে সবকিছু করা সম্ভব হবে না। আমরা আস্তে আস্তে ধরব। চুনোপুঁটি ধরেছি, বড় মাছও ধরা হবে। ইন ওয়ান গোয়িং ওয়ান জাম্প।’
‘আমরা এমন কিছু করতে চাই না। আমরা হাত দিলে হাত নিয়ে আসতে চাই না। হাত পুড়ে যাক, আমরা সবাই চলে যাই, তাও ভালো। যদি হাত দেই তো দেবই। যদি না পারি তাহলে দেব না। এটাই আমাদের কমিশনের ফিলোসফি।’
মানিলন্ডারিং মামলা প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘মানিলন্ডারিং ইস্যুটা আমাদেরই। মানিলন্ডারিং আইন সংস্কার করে শুধু ঘুষ আর দুর্নীতির বিষয়গুলো কমিশন দেখছে। এ সংক্রান্ত ২০০ মামলা তদন্ত করছে কমিশন। এর মধ্যে ২২টি মামলার ২২টিতেই শাস্তি হয়েছে। অর্থাৎ শতভাগ শাস্তি হয়েছে। ঘুষ থেকে উৎসরিত অর্থ যদি লন্ডারিং হয়, তাহলে আমরা আছি। বাকিগুলো সিআইডি, বাংলাদেশ কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দেখছে। তবে দুদকের ওপর অনেকেরই মানিলন্ডারিং মামলার তদন্ত নিয়ে প্রত্যাশা বেশি। সেটা ভালো। আমরা এসব নিয়ে তিনটি রিসার্চ করছি। আমাদের ফিলোসফি রয়েছে।’
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘সমাজে দুই পেশাজীবী শ্রেণির গুরুত্ব অনেক বেশি। ডাক্তার শ্রেণি সরাসরি মানুষের জীবনরক্ষায় কাজ করে থাকেন। কিন্তু আইনজীবীদের ক্ষেত্রে দায়িত্ব ও গুরুত্ব আরও বেশি। কারণ, দুদকের মামলায় আমরা ভালো আইনজীবী নিতে চাই। এটা নিয়ে বিজ্ঞ আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হবে।’
দুদকের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদক কিন্তু হুট করে আসেনি। আমরা যারা দুদকে কাজ করি তারাও এ সমাজেরই মানুষ, এ সমাজেরই অংশ। সমাজের অন্যান্য জায়গায় যা হয়, তা আমাদের এখানে যে হয় না, তা নয়। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। সে দায় আমাদেরই। আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তাও কম। একটা প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, একজন ডেপুটি পরিচালক কিংবা সহকারী পরিচালক যখন সচিবের পদমর্যাদার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করেন। তখন সরকারি কর্মকর্তাকে ধরতে সরকারের অনুমতি লাগে না।’
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সমস্যা আমরা যেটা বলি সেটা বিশ্বাস করি না, যেটা করি সেটা বলি না, যেটা করি সেটা বিশ্বাস করি না। এ এক অদ্ভুত নিগড়ে আমরা বন্দী। আর এই নিগড় ভাঙতে হলে তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষা ও মননে বিকশিত করে উন্নত মানসিকতা সম্পন্ন একটি প্রজন্ম সৃষ্টি করতে হবে।’
ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমি যোগদান করেই বলেছিলাম, অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্তে টাইমলাইন অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য টাইমলাইন যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। যদিও আমরা চেষ্টা করছি।’
সভাপতির বক্তব্যে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘মানুষ বিশ্বাস করে দুদক চুনোপুঁটিদের ব্যাপারে কঠোর। বিরোধী রাজনীতিকদের প্রতিও তারা কঠোর। পক্ষান্তরে সরকারি দলের প্রতি তারা দুর্বল। তবে এ কথাও ঠিক বর্তমান চেয়াম্যানের নেতৃত্বাধীন কমিশনে ক্লিন সার্টিফিকেট নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়েছে।’