স্টাফ রিপোর্টার :
গোলাপগঞ্জে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের দায়েরকৃত মামলায় একজনের মৃত্যুদন্ড (ফাঁসি) দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আমিরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পাশাপাশি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে আরো ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম- মো: কামরুল ইসলাম (২৭)। সে গোলাপগঞ্জ থানার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের মেহেরপুর গ্রামের মৃত ফারুক আহমদের পুত্র। বর্তমানের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী কারাগারে রয়েছে। এছাড়া একই গ্রামের মুহিবুর রহমানের পুত্র রানু মিয়াকে (৪০) দু’টি ধারায় মোট ৩ বছেরর সাজা দিয়েছেন আদালত। তবে রানু মিয়া সাজার চেয়ে বেশি মেয়াদে হাজতবাস করায় তাকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মামলার অপর ২ আসামী মনোয়ারা বেগম (৪০) এবং আয়েশা আক্তার (৩০) এর দোষ আদালতে প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষনার সময় সকল আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, গোলাপগঞ্জ থানার মেহেরপুর গ্রামের মুহিবুর রহমানের পুত্র ফয়েজ আহমদ রাজু প্রবাসে থাকার সুযোগে তার স্ত্রী নাছিমা আক্তারের সাথে একই বাড়ির মো: কামরুল ইসলাম তাকে বিভিন্ন সময়ে কুপ্রস্তাব ও নানাভাবে উত্যক্ত করে আসছিল। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে রিরোধ চলছিল। ঘটনার ১০/১২ পূর্বে নাছিমা আক্তার বিষয়টি সমাধানের জন্য বাড়ির মুরব্বীদের কাছে বিচারপ্রার্থী হন। এর জের ধরে ২০১৫ সালের ১২ ফেব্র“য়ারী রাত ১১ টার দিকে কামরুল ইসলামসহ তার লোকজন দেশীয় অস্ত্রসন্ত্রে সঞ্জিত হয়ে নাছিমা আক্তারের দেবর ফানু মিয়া (৩৫) ও তার ভাই রুবেল আহম্মদ (২৫) এর উপর ছুলফি ও দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত করলে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে কামরুল ইসলাম রুবেল আহম্মদকে বুকে ও পেটে ছুলফি দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলে সে মারা যায়। তাদের শোরচিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে ফানু মিয়াকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হলে সেখানে ফানু মিয়া মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের বোন কলেজ ছাত্রী নাজিরা আক্তার বাদি হয়ে কামরুল ইসলাম, রানু মিয়া, মনোয়ারা বেগম, আয়েশা বেগম ও রুহুল আমিনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে আসামী করে গোলাপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং-৯ (১৪-০২-১৫)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছরের ২০ জুন গোলাপগঞ্জ থানার এসআই মিজানুর রহমান ৫ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০১৭ সালের ২৮ মে আদালত আসামী রুহুল আমিনকে বাদ দিয়ে এ মামলার চার্জগঠন করে বিচার কায্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ১৬ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামী মো: কামরুল ইসলামকে গতকাল বৃহস্পতিবার ১৮৬০ সালের পেনাল কোর্ট এর ৩০২ ধারায় মৃত্যুদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়। রানু মিয়াকে ৩২৩ ধারায় ১ বছর এবং ৪২৭ ধারায় ২ বছরসহ মোট ৩ বছেরর সশ্রম কারাদন্ড দেন আদালত। তবে রানু মিয়া সাজার চেয়ে বেশি মেয়াদে হাজতবাস করায় তাকে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মামলার অপর ২ আসামী মনোয়ারা বেগম এবং আয়েশা আক্তার এর দোষ আদালতে প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও আসামীপক্ষে এডভোকেট মো: জসিম উদ্দিন মামলাটি পরিচালনা করেন।