কাজিরবাজারে ৩ দিনের উচ্ছেদ অভিযান ॥ ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে পথে বসেছেন ২ শতাধিক ব্যবসায়ী, কর্মহীন সহস্রাধিক শ্রমিক

58

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর কাজিরবাজারে ৩ দিনে প্রায় ২ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে সিটি কপোরেশন। গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর থেকে দোকানপাট হারিয়ে পথে বসেছেন ২ শতাধিক ব্যবসায়ী। এছাড়া কর্মহীন হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক শ্রমিক। এ অবস্থায় রোজি-রুটির একমাত্র ব্যবসা হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে এ পরিবারগুলো।
উচ্ছেদ অভিযানের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেক ব্যবসায়ী। তাদের বক্তব্য উচ্ছেদ হওয়া এসব জায়গায় তারা তাদের বাপ-দাদার আমল থেকে ব্যবসা করে আসছেন। অনেকেই আবার রেকর্ডীয় সূত্রে জায়গার মালিক রয়েছেন। এর পরও কোন কিছুই আমলে নেননি কর্তৃপক্ষ। বাচবিচারনা করেই গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন সবস্থাপনা। এতে করে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছেন একেকজন ব্যবসায়ী। এর পাশাপাশি ব্যবসায়ীক দেনা-পাওনার তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা আটকে গেছে। যা উদ্ধার করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে শংকায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, গুঁড়িয়ে দেয়া দোকানপাটগুলোর নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু কিছু মালামাল সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতির শিকার ব্যবসায়ীরা দাবী করেন, হঠাৎ করে তাদের বাপ-দাদার আমলের দোকানপাট গুঁড়িয়ে দেয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি সম্মুখিন হয়েছেন তারা। এছাড়া ব্যবসায়ীক বাকী পড়া লক্ষ লক্ষ টাকা আর উঠাতে পারবেন না এ নিয়ে শঙ্খায় রয়েছেন তারা। এখন তারা পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় দাড়াবেন সে চিন্তায় দিশেহারা।
ব্যবসায়ী সোবহান মিয়া জানালেন, তার ১টি হোটেল ও ২টি সুপারীর দোকান ছিল। বৈধভাবে দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে ছেলেদের নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। বৈধতার কোন কাগজপত্র না দেখে আকস্মিকভাবে অভিযান চালিয়ে এ দোকানগুলো ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এতে দোকানের মালামালসহ প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হন তিনি। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে নি:শ্ব হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, তার ২টি সুপারীর দোকান ছিল। রেকর্ডীয় জায়গায় বৈধভাবে ব্যবসা করে আসছিলেন। কিন্তু কোন নোটিশ ছাড়া হঠাৎ করে দোকানগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। প্রায় ৭০ বছর ধরে বাপ-দাদার পর তিনি ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। দোকানগুলো ভাঙ্গার ফলে এখন অসাহায় হয়ে পড়েছেন। প্রায় ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবেন বা পরিবার নিয়ে কোথায় দাঁড়াবেন সে চিন্তায় এখন দিশেহারা।
সুপারী দোকানদার মো: জামাল মিয়া অনেকটা ক্ষুভের সঙ্গে জানালেন, হঠাৎ দোকান ভেঙ্গে ফেলায় অসহায় হয়ে পড়েছি। এখন কোথায় ব্যবসা করবো তা নিয়ে দিশেহারা। পরিবার নিয়ে এখন না খেয়ে থাকতে হবে। ব্যবসার মধ্যে যে ৭/৮ লক্ষ টাকা বাকী পড়েছে তা কিভাবে সংগ্রহ করবো। তিনি বলেন, দোকানের কিছু মালামাল সরিয়ে ফেলের আগেই শ্রমিকরা গাড়ীতে তুলে নিয়ে যায়।
ব্যবসায়ী মো: আতিকুর রহমান জানান, গত ২৩ জুন সরকারী লোকজন এসে দোকানের সামনের রাস্তার মাপযোগ করে এবং লাল দাগ দিয়ে যায়। হঠ্যৎ দোকানটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ ব্যবসার উপর আমার সংসার চলে। আমিসহ দোকানের প্রায় ২০ জন শ্রমিক এখন না খেয়ে মরতে হবে। ২৬ হাজার টাকা দামের এক বস্তা সুপারীও ট্রাকে তুলে নিয়ে যায় তারা। ব্যবসায়ীক বাকী টাকাসহ আমার প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
হোটেল ব্যবসায়ী কামাল মিয়া বলেন, দোকান ভাঙ্গার ফলে সংসারের লোকজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। উচ্ছেদকারীরা মালামাল সরিয়ে সময় না দিয়ে দোকানের চেয়ার-টেবিল ও বাসনপত্র ট্রাকে তুলে নিয়ে গেছে। আমার প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি।
ব্যবসায়ী মো: আব্দুর রহমান বলেন, এ ব্যবসা থেকে আমাদের পরিবার চলতো। এখন না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। দোকান ভেঙ্গে ফেলায় প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়।
ব্যবসায়ী মো: মনছুর বলেন, হঠাৎ দোকান ভাঙ্গার কারনে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। বাকী প্রায় ব্যবসায়ী ১৫ লক্ষ টাকা রয়েছে। দোকান ভাঙ্গার পর প্রায় ৫/৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
দরজা-জানালা ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল মুনিম জানান, তার ২টি দোকান ছিল। দোকান হঠ্যৎ ভেঙ্গে ফেলার পর তিনি দোকান চিনতে পারছিলেন না। ৩০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার দোকানে। তিনি জানান, দোকান ভাঙ্গার সময় অনেক মালামাল সুরমা নদীতে তলিয়ে গেছে।