ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে নিউজিল্যান্ড

23

স্পোর্টস ডেস্ক :
দলীয় ৯২ রানে ছয় উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের। অর্থাৎ, বড় ব্যাটসম্যানরা সব ফিরে গেছেন সাজঘরে। ভারতীয় শিবিরে যেন হতাশার কালো মেঘ নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে ধোনি ও জাদেজা জুটি বেঁধে উইকেটে যেন আঁঠার মতো লেগে থাকেন। ধোনি ধীরে খেললেও জাদেজা ঝড়ো ব্যাট করতে থাকেন। এই জুটিই আশা দেখাচ্ছিল ভারতকে। তবে, শেষটা করে আসতে পারেননি তারা। যার ফলে ১৮ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হলো ভারতকে। আর টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে গেল নিউজিল্যান্ড।
অন্যদিকে, গতবারের মতো এবারও সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিল ভারত। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ১৪ জুলাই।
বুধবার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২৪০ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৩ ওভারে ২২১ রান সংগ্রহ করে অলআউট হয় ভারত। দলের পক্ষে ৫৯ বলে ৭৭ রান করেন রবীন্দ্র জাদেজা। তিনিই দলের সেরা রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান। ৫০ রান করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে ম্যাট হেনরি ৩টি, মিচেল স্যান্টনার ২টি, ট্রেন্ট বোল্ট ২টি, লকি ফার্গুসন ১টি ও জেমস নিশাম ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
শেষ ২৪ বলে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৪২ রান। ৪৭তম ওভারে ম্যাট হেনরি এসে মাত্র পাঁচ রান দেন। এরপর ভারতের সামনে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৮ বলে ৩৭ রান। ৪৮তম ওভারে ভারতের অন্যতম ভরসা জাদেজাকে ব্যক্তিগত ৭৭ রানে বিদায় করে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন বোল্ট।
শেষ দুই ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৩১ রান। ধোনি উইকেটে ছিলেন বলে আশা দেখছিল ভারত। ৪৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন ফার্গুসন। ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেন ধোনি। দ্বিতীয় বলটি ডট হয়। তবে, তৃতীয় বলে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে বিদায় নেন ধোনি। এখানেই সব আশা শেষ হয়ে যায় ভারতের। ৭২ বলে ৫০ রান করেন ধোনি। এই ওভারের শেষ বলে ভুবনেশ্বর কুমারকে বোল্ড করেন ফার্গুসন। শেষ ওভারে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন চাহাল।
ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ২৪ রানে চার উইকেট হারায় ভারত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ম্যাট হেনরির বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এবারের বিশ্বকাপে পাঁচটি সেঞ্চুরি করা রোহিত শর্মা। আজ চার বলে এক রান করেন এই ভারতীয় ওপেনার।
তৃতীয় ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের বলে এলবিডব্লিউ হন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। রিভিউ নিয়েও কোহলি বাঁচতে পারেননি। ৬ বল খেলে তিনি করেন এক রান। চতুর্থ ওভারে লোকেশ রাহুলকেও উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন হেনরি। সাত বলে রাহুল করেন এক রান। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানই এক রান করে আউট হলেন।
এর পরের উইকেটটিও নেন হেনরি। ভারতের দলীয় রান তখন ২৪। ম্যাট হেনরির বলে পয়েন্টে জেমস নিশামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান দিনেশ কার্তিক। ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নেন নিশাম। ২৫ বলে কার্তিক করেন ৬ রান।
এরপর ৪৭ রানের জুটি গড়েন রিশাব পান্ত ও হার্দিক পান্ডিয়া। দলীয় ৭১ রানে গ্র্যান্ডহোমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে পান্তকে ফেরান মিচেল স্যান্টনার। ৫৬ বল খেলে ৩২ রান করেন পান্ত। দলীয় ৯২ রানে ফিরে যান হার্দিক পান্ডিয়া। এরপর ১১৬ রানের জুটি গড়েন জাদেজা ও ধোনি।
ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে গতকাল (মঙ্গলবার) শুরু হয় ম্যাচটি। টস জিতে ব্যাট করতে নামে নিউজিল্যান্ড। ৪৬.১ ওভার খেলা হওয়ার পর বৃষ্টি নামে। তখন কিউইদের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ২১১ রান। বৃষ্টি না থামায় গতকাল আর খেলা মাঠে গড়ায়নি। নিয়মানুযায়ী আজ রিজার্ভ ডে’তে খেলা গড়ায়। গতকাল যেখানে খেলা শেষ হয়েছিল আজ আবার সেখান থেকেই শুরু হয়। নিউজিল্যান্ড ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৩৯ রান সংগ্রহ করে।
কিউই ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন রস টেইলর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ভুবনেশ্বর কুমার ৪৩ রান দিয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া জ্যাসপ্রীত বুমরাহ ১টি, রবীন্দ্র জাদেজা ১টি, হার্দিক পান্ডিয়া ১টি ও যুজবেন্দ্র চাহাল ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
লিগ পর্বে ৯ ম্যাচের মধ্যে ভারত সাতটিতে জয় পেয়েছিল ও একটিতে হেরেছিল। লিগ পর্বে ভারত ও নিউজিল্যান্ডে মধ্যকার ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছিল। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে বিরাট কোহলিরা পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে লিগ পর্ব শেষ করেছিল।
অন্যদিকে, ১১ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে থেকে সেমিফাইনালে ওঠে নিউজিল্যান্ড। লিগ পর্বে কিউইরা পাঁচটিতে জয় পায় ও তিনটিতে হারে। বিশ্বকাপে গত আসরের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্স আপ হয়েছিল নিউজিল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ১৮ রানে জয়ী নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ড ইনিংস: ২৩৯/৮ (৫০ ওভার)
(মার্টিন গাপটিল ১, হেনরি নিকোলস ২৮, কেন উইলিয়ামসন ৬৭, রস টেইলর ৭৪, জেমস নিশাম ১২, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ১৬, টম লাথাম ১০, মিচেল স্যান্টনার ৯*, ম্যাট হেনরি ১, ট্রেন্ট বোল্ট ৩*; ভুবনেশ্বর কুমার ৩/৪৩, জ্যাসপ্রীত বুমরাহ ১/৩৯, হার্দিক পান্ডিয়া ১/৫৫, রবীন্দ্র জাদেজা ১/৩৪, যুজবেন্দ্র চাহাল ১/৬৩)।
ভারত ইনিংস: ২২১ (৪৯.৩ ওভার)
(লোকেশ রাহুল ১, রোহিত শর্মা ১, বিরাট কোহলি ১, রিশাব পান্ত ৩২, দিনেশ কার্তিক ৬, হার্দিক পান্ডিয়া ৩২, মহেন্দ্র সিং ধোনি ৫০, রবীন্দ্র জাদেজা ৭৭, ভুবনেশ্বর কুমার ০, যুজবেন্দ্র চাহাল ৫, জ্যাসপ্রীত বুমরাহ ০*; ট্রেন্ট বোল্ট ২/৪২, ম্যাট হেনরি ৩/৩৭, লকি ফার্গুসন ১/৪৩, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ০/১৩, জেমস নিশাম ১/৪৯, মিচেল স্যান্টনার ২/৩৪)।
ম্যাচ সেরা: ম্যাট হেনরি (নিউজিল্যান্ড)।