সুনামগঞ্জ সহ ১৩ জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে

179

কাজিরবাজার ডেস্ক :
যাত্রীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে দেশের সব জেলার সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ৫ ধাপে ১৩ জেলার সঙ্গে নতুন করে রেল সংযোগ তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি রেলের গতি বাড়াতে মিটারগেজকে ডুয়েলগেজ ও সিঙ্গেল লাইনগুলোকে ডাবল লাইনে রূপান্তর করার মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে। এর সঙ্গে থাকছে চক্রাকার রেলপথ ও পুনর্বাসন কাজ।
নতুন এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও রাঙামাটি, সুনামগঞ্জ জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে। এ লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের জন্য ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) মাস্টারপস্ন্যান হাতে নিয়েছে। এর আওতায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। থাকছে রূপসা-বাগেরহাট পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসনে কাজ।
রেলওয়ের মাস্টারপস্ন্যান সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ছয় পর্যায়ে মাস্টারপস্ন্যান বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে প্রথম পাঁচ পর্যায়েই (২০১৬-২০৪০) নতুন রেলপথ নির্মাণসহ বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
মাস্টারপস্ন্যানের প্রথম পর্যায়ে (২০১৬-২০২০) নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে ৪৩৮ দশমিক ৫২ কিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা ২১৩ কিলোমিটার রেলপথ, আখাউড়া-আগরতলা ১০ দশমিক শূন্য এক কিলোমিটার রেলপথ, বগুড়া-জামতৈল ৮৬ দশমিক ৫১ কিলোমিটার রেলপথ, চিলাহাটী-চিলাহাটী বর্ডার সাত কিলোমিটার রেলপথ, জালানীহাট-চুয়েট-কাপ্তাই ৪২ কিলোমিটার রেলপথ, চট্টগ্রাম বে-টার্মিনাল সংযোগ রেলপথ ১৬ কিলোমিটার, দর্শনা-মেহেরপুর-মুজিবনগর ২৬ কিলোমিটার রেলপথ, ফেনী-মিরেরসরাই ইকোনোমিক জোন সংযোগ রেলপথ ৩০ কিলোমিটার ও জামালপুর ইকোনোমিক জোন সংযোগ রেলপথ আট কিলোমিটার।
দ্বিতীয় পর্যায়ে (২০২১-২০২৫) নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে ৫২৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলপথ ২৩০ কিলোমিটার, ঢাকা শহরের চারপাশে বৃত্তাকার রেলপথ ১০০ কিলোমিটার, কুষ্টিয়া বাইপাস ১০ কিলোমিটার রেলপথ, ঈশ্বরদী ইপিজেড সংযোগ রেলপথ ছয় কিলোমিটার, মহেশখালী ও মাতারবাড়ী সংযোগ রেলপথ ১৮ কিলোমিটার, নাভারন-সাতক্ষীরা ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ, ছাতকবাজার-সুনামগঞ্জ ৩০ কিলোমিটার রেলপথ, সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ ১৫ কিলোমিটার রেলপথ ও জামালপুর-শেরপুর ৩২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ।
তৃতীয় পর্যায়ে (২০২৬-২০৩০) নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে ১৬৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে পায়রা-কুয়াকাটা ২৫ কিলোমিটার রেলপথ, ভৈরব-আব্দুলপুর-জামতৈল-কাউনিয়া বাইপাস রেলপথ ২০ কিলোমিটার, টুঙ্গিপাড়া-মংলা-ফকিরহাট ৭০ কিলোমিটার রেলপথ ও পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা ৭০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ।
চতুর্থ পর্যায়ে (২০৩১-২০৩৫) নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে ৪৮৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-টঙ্গী সাবওয়ে (ভূগর্ভস্থ রেলপথ) ৪০ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম শহরের চারদিকে বৃত্তাকার রেলপথ ১০০ কিলোমিটার, নাজিরহাট-খাগড়াছড়ি ৬০ কিলোমিটার রেলপথ, হাটহাজারী-রাঙ্গামাটি ৪০ কিলোমিটার রেলপথ, দোহাজারী-বান্দরবান ২৫ কিলোমিটার রেলপথ, পঞ্চগড়-চিলাহাটি-হাতিয়াবান্ধা ৬০ কিলোমিটার রেলপথ, রোহনপুর-জয়পুরহাট ৮০ কিলোমিটার রেলপথ ও যশোর-মাগুরা-শ্রীপুর-লাঙ্গলবান্ধা-পাংশা ৮০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ।
পঞ্চম পর্যায়ে (২০৩৬-২০৪০) নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে ১৫৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে জয়দেবপুর-ধামরাই-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া ৯০ কিলোমিটার রেলপথ ও মধুখালী-মাগুরা-যশোর ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ। সব মিলিয়ে পাঁচ ফেইজে ১ হাজার ৭৬৯ দশমিক ৫২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
মাস্টারপস্ন্যানের অনুযায়ী, পাঁচ পর্যায়ে ১ হাজার ৬৩৮ দশমিক ৪১ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে রূপান্তর করা হবে আখাউড়া-সিলেট ১৭৭ কিলোমিটার, পার্বতীপুর-কাউনিয়া ৫৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার ও সিলেট-ছাতকবাজার ৩৩ দশমিক ৩১ কিলোমিটার।
দ্বিতীয় পর্যায়ে টঙ্গী-ভৈরববাজার ১২৮ কিলোমিটার, ভৈরব-আখাউড়া ৬৬ কিলোমিটার ও লাকসাম-চট্টগ্রাম ১৫৯ দশমিক ২ কিলোমিটার ডাবল লাইন রেলপথকে ডুয়েলগেজ করা হবে। এছাড়া শান্তাহার-বগুড়া ৩৯ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর ১৪৭ কিলোমিটার, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম-ষোলশহর ১২ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার ও ষোলশহর-দোহাজারী ৪০ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ ১১৫ দশমিক ৬১ কিলোমিটার, লাকসাম-চাঁদপুর ৫১ দশমিক ৫২ কিলোমিটার, লাকসাম-নোয়াখালী ৪৯ দশমিক ১১ কিলোমিটার, ষোলশহর-নাজিরহাট ৩০ দশমিক ৬ কিলোমিটার, ফতেয়াবাদ-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দুই দশমিক ১৫ কিলোমিটার, বগুড়া-লালমনিরহাট-বোনারপাড়া ও ত্রিমোহনী-বালাশীঘাট ১১৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে।
চতুর্থ পর্যায়ে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে জামালপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব ও জামালপুর-বাহাদুরাবাদঘাট ১১৭ দশমিক শূন্য তিন কিলোমিটার, ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ ও শ্যামগঞ্জ-জারিয়া ঝাঞ্ঝাইল ৭০ দশমিক ৬১ কিলোমিটার এবং শায়েস্তাগঞ্জ-বালস্না ২৭ কিলোমিটার রেলপথ। আর পঞ্চম ফেইজে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে লালমনিরহাট-বুড়িমারী ও তিস্তা-রমনাবাজার ৮৪ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার রেলপথ।
এ প্রকল্পগুলোর বাইরে তিন পর্যায়ে ডাবল লাইন করা হবে ৯৪৬ কিলোমিটার রেলপথ। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ১৭৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর ১৩৯ দশমিক ১১ কিলোমিটার ও খুলনা-দর্শনা ১২৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার; দ্বিতীয় ফেইজে আব্দুলপুর-রাজশাহী ৪০ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার এবং তৃতীয় ফেইজে আব্দুলপুর-পার্বতীপুর ১০৪ দশমিক ২৪ কিলোমিটার, আখাউড়া-সিলেট ১৭৬ দশমিক ৭২ কিলোমিটার ও ফৌজদারহাট-সিজিপিওয়াই ১২ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইন করা হবে।
এদিকে নতুন রেলপথ নির্মাণ, ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ ও ডুয়েলগেজে রূপান্তর ছাড়াও প্রথম পর্যায়ে যশোর-বেনাপোল ৩৫ কিলোমিটার ও তৃতীয় ফেইজে রূপসা-বাগেরহাট ২৫ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হবে। এগুলোর পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ধীরাশ্রম, উত্তরা ইপিজেড, মংলা ও ঈশ্বরদীতে চারটি এবং তৃতীয় পর্যায়ে দর্শনা ও শাহবাজপুরে দুটি আইসিডি (অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো) নির্মাণ করা হবে।