কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায়। ইতোমধ্যে প্রায় ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে এটিই হবে-এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড অর্জনকারী বাজেট। যদিও গত কয়েকবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাজেটের আকার বাড়ছে। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথমবারের মতো আগামী ১৩ জুন বৃহস্পতিবার মহান সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের বাজেট হবে চমক সৃষ্টিকারী একটি স্মার্ট বাজেট। কর ও ভ্যাট হার না বাড়িয়ে বরং এর আওতা বাড়িয়ে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো হবে। বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে ধীরে ধীরে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়নের দিকে যাচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, এবারের বাজেট হবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানমুখী বাজেট। এছাড়া ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সব ধরনের ভোগ্য ও নিত্যপণ্য ভ্যাটের আওতামুক্ত থাকার ঘোষণা দিবেন অর্থমন্ত্রী। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম কমানো হবে। কমবে কৃষিযন্ত্রপাতির দাম। এছাড়া নতুন বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশ সুবিধাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ সরকারের রয়েছে। ধূমপান নিরৎসাহিত করতে বাড়ানো হবে বিড়ি, সিগারেট ও জর্দার মতো পণ্যের দাম। ধীরে ধীরে নিজস্ব অর্থায়নেই বাজেট দেয়া হবে। এ কারণে কর প্রদানে সক্ষম জনগণকে করনেটের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হবে বাজেটে।
জানা গেছে, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে। এ লক্ষ্যে ভ্যাট আদায়ে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে তাদের দাবি বিবেচনায় রেখে এক স্তরের পরিবর্তে বহুস্তর ভ্যাট ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। বাড়ানো হবে করদাতার সংখ্যা। নতুন ১ কোটি মানুষকে করনেটে নিয়ে আসার একটি পরিকল্পনা রয়েছে এনবিআরের। এ লক্ষ্যে এবার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করদাতা শনাক্তের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য সারাদেশে নিয়োগ দেয়া হবে প্রায় ১০ হাজার জনবল। সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই করজরিপ কাজে নিয়োগ দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে এবার স্মার্ট বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ভ্যাট ও কর হার বাড়ছে না। তবে এর আওতা বাড়ানো হবে। যারা কর প্রদানে সক্ষম অথচ কর দিচ্ছে না তাদের করনেটের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আগামী নতুন অর্থবছরেই প্রায় ১ কোটি নতুন করদাতা করনেটে নিয়ে আসা সম্ভব। এজন্য শীঘ্রই করজরিপের কাজ শুরু করা হবে।
ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন ও করদাতার সংখ্যা বাড়ানো হবে : আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে। সর্বনিম্ন ২ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশসহ মোট ভ্যাটের হার হচ্ছে পাঁচটি। তবে ভ্যাটের আদর্শ বা স্ট্যান্ডার্ড রেট ১৫ শতাংশই বহাল থাকবে। বড় কোন পরিবর্তন না করে বর্তমান ১৯৯১ সালের আইনের আদলেই নতুন আইনটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এছাড়া কোন খাতে কত ভ্যাট বসবে সেটিও চূড়ান্ত হয়েছে। বর্তমানে ১৯৯১ সালের আইনে নির্দিষ্ট খাতে (৩৯টি) প্রযোজ্য হারে উৎসে ভ্যাট আদায় করা হয়। শুধু আমদানি পর্যায়ে বাণিজ্যিক পণ্যে (কমার্শিয়াল ইমপোর্টার) অগ্রিম ভ্যাট (এটিভি) আদায় করা হয়। নতুন আইনে বাণিজ্যিকসহ সকল পণ্যে অগ্রিম ভ্যাট দিতে হবে। ফলে ভ্যাটের আওতা বাড়বে। তবে ভ্যাট আইনটি বাস্তবায়নে যাতে ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা তৈরি হলে প্রয়োজনে আইনের ধারা সংশোধন ও পরিবর্ধন করে নেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, আগের মতো বেশির ভাগ ভ্যাট আসবে ১৫ শতাংশ স্তর থেকে। ফলে আদায় কমবে না।
এদিকে, আগামী অর্থবছরে বর্তমান ৩৮ লাখ আয়করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে ১ কোটি করা হবে। এজন্য নতুন জরিপের মাধ্যমে শুধু ঢাকা শহর থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ নতুন আয়করদাতা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হবে। এর বাইরে বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা থেকে আরও ৬০ লাখ সম্ভাব্য করদাতা সংগ্রহ করা হবে। এজন্য জেলা ছাড়াও স্থাপন করা হবে উপজেলাভিত্তিক কর অফিস। এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোকবল নিয়োগ দিয়ে আয়করদাতাদের চিহ্নিত করা হবে।
জানা গেছে, রাজস্ব আয়ের প্রায় ৬৪ শতাংশ এনবিআর আদায় করে থাকে। বাকি ৩৬ শতাংশ এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে। এনবিআর খাতের মধ্যে এখন পর্যন্ত বেশি রাজস্ব আয় হয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট থেকে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আয়কর খাত। তৃতীয় অবস্থানে সম্পূরক শুল্ক এবং চতুর্থ অবস্থান আমদানি শুল্ক। আগে আমদানি শুল্ক থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হতো। প্রসঙ্গত, এনবিআরের হিসাবে দেশে বর্তমানে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী ৩৮ লাখ। এর মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ২০ থেকে ২২ লাখ করদাতা তাদের রিটার্ন দাখিল করে থাকেন।
আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস করা হবে : একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায়। এটি হবে চলতি সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশন। আগামী ১৩ জুন সংসদে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হবে। ওই সময় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশী-বিদেশী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
জানা গেছে, এবারের অধিবেশনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারামুক্তিসহ কয়েকটি ইস্যুতে সাধারণ আলোচনা চাইবেন বিএনপি দলীয় এমপিরা। ইতোমধ্যে অধিবেশনকে ঘিরে সংসদ ভবন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি অধিবেশনে বাজেট ছাড়াও অর্থ বিলসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৩০ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস হবে।