রমজানুল মুবারক : ফাজায়েল ও করণীয়

106

মুফতি পিয়ার মাহমুদ

রমজানুল মুবারকের ফাজায়েল : হিজরি বর্ষের একটি মাসের নাম রমজানুল মুবারক। এ মাসের মহাত্ম্য ও মর্যাদা অপরিসীম। এ মাস আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। মুমিনের পাথেয় অর্জনের ভরা মৌসুম। ইবাদত বন্দেগির বসন্তকাল। তাই বান্দা এ মাসে জাগতিক সকল চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে লাভ করবে প্রভুর অফুরন্ত দয়া ও রহমত এবং কল্যাণও বরকত। অতীতের সকল পাপ-পঙ্কিলতা থেকে পাক-ছাফ হয়ে নতুনভাবে গ্রহণ করবে ঈমানী উত্তাপ। সেই ঈমানী উত্তাপে সতেজ হয়ে অর্জন করবে তাকওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- “হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” [সূরা বাকারা: ১৮৩]
মহান আল্লাহ তাআলা এই মাসকে যেসব মর্যাদা ও মহাত্ম্য দ্বারা মহিমান্বিত করেছেন, যে পরিমাণ বরকত, দয়া, ফাজায়েল, সওয়াব এবং প্রতিদান দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন তার হিসাব করা মানব সাধ্যের অতীত। তথাপি পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এবং হাদিস শরিফের বিস্তৃত ভাণ্ডারে যে ফজিলত ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে, তার কিঞ্চিৎ এখানে উল্লেখ করব। এ মাসের একটি বৈশিষ্ট্য হলো কুরআন মাজিদ, তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, হযরত ইবরাহিম (আ.) এর সহিফাসহ সকল প্রকার আসমানী কিতাব এ মাসেই অবতীর্ণ হয়েছে। তাবারানিতে বর্ণিত একটি সহিহ হাদিসে একথা উল্লেখ আছে। এই মহিমান্বিত মাসে পূর্ণ পবিত্র কুরআন লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হয়। অত:পর রাসুলে করিম (সা.) এর উপর কুরআনের সর্বপ্রথম ওহীও এমাসেই অবতীর্ণ হয়। রমজানুল মুবারকের অন্য কোন ফজিলত বর্ণিত না হলেও এই একটি ফজিলতই তার মর্যাদা ও মহাত্ম্যের জন্য যথেষ্ট ছিল। রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, “রমজান মাস হলো সেই মাস, যাতে নাজিল হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত ও সুপথ প্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ এবং ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যকারী। কাজেই তোমাদের যে কেউ এ মাসটি পাবে, সে যেন অবশ্যই এমাসের রোজা রাখে। [সূরা বাকারা:১৮৫]
হযরত আবুু হুরায়রা (রা.) বলেন, যখন রমজানুল মুবারকের আগমন ঘটল তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের মাঝে বরকতপূর্ণ মাস রমজান এসেছে। এ মাসের রোজা আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর ফরজ করেছেন। জান্নাতের দরজাগুলো এ মাসে খুলে দেয়া হয় আর বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাসমূহ এবং শয়তানদের বন্দী করা হয় শিকলে। এ মাসে রয়েছে এমন একটি রাত যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যাকে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করা হলো, তাকে সমুদয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করা হলো। [মুসনাদে আহমাদ: হাদিস ৭১৪৮; সুনানে নাসায়ি: ১/২৩০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৬/৯৪, হাদিস ৮৯৫৯] আবু হুরায়রা (রা.) অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আল্লাহর কসম মুসলমানের জন্য রমজানুল মুবারকের চেয়ে অধিক উত্তম ও উপকারী কোন মাস আসেনি আর মুনাফিকের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোন মাস আর আসেনি। কারণ মুমিন বান্দা এ মাসে (সারা বছরের) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও ত্র“টি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিন বান্দার জন্য গণীমত আর পাপীর জন্য ক্ষতির কারণ। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৬/৯৮; হাদিস: ৮৯৬৮]
মুমিন বান্দা যেন এ মাসের মহামূল্যবান ও অতি বরকতময় সময় পুণ্যের কাজে ব্যয় করতে পারে এবং মুনাফিক ও পাপীদের মত কল্যাণ ও বরকত থেকে মাহরূম না থাকে, সে লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা রমজানের শুরু থেকেই পৃথিবীময় এমন আবহ সৃষ্টি করেন যা পুরো পরিবেশকেই খায়র ও বরকত দ্বারা আচ্ছাদিত করে দেয়। এবং তাদের পুণ্য ও প্রতিদানের সুসংবাদ দিতে খুলে দেয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো। আর পাপাচার ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাসমূহ। সর্বপ্রকার ফাসাদ ও অনিষ্ট থেকে রক্ষা করতে শিকল পড়িয়ে আবদ্ধ করা হয় দুষ্ট ও কুমন্ত্রণাদাতা শয়তান ও জিনদের। এরপর আহ্বান করা হয় কল্যাণের পথে অগ্রসর হতে এবং অন্যায় ও পাপের পথ থেকে নিবৃত্ত থাকতে। এমর্মে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, “যখন রমজানুল মুবারকের প্রথম রজনীর আগমন ঘটে তখন দুষ্ট ও কুমন্ত্রণাদাতা শয়তান ও জ্বিনদের শিকলে আবদ্ধ করা হয় এবং বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। ফলে (পুরো মাস) কোন দরজাই খোলা হয় না আর খুলে দেয়া হয় জান্নাতের দরজাগুলো। ফলে (পুরো মাস) কোন দরজাই আর বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষণা করতে থাকে- হে কল্যাণের প্রত্যাশী সামনে অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের অন্বেষী! থেমে যাও। আর পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দেন এ মাসের প্রতি রাতে। [তিরমিযি: ১/৪৭; ইবনে মাজা ১১৮-১১৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৬/৯; হাদিস: ৮৯৬০]
হযরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রমজানুল মুবারকের প্রতিটি দিবস ও রজনীতে আল্লাহ তাআলা মুক্তিদান করেন অসংখ্য জাহান্নামীকে জাহান্নাম থেকে এবং প্রত্যেক মুসলিমের একটি দোয়া যা সে করে, কবুল করা হয়।” [মাজমাউয যাওয়ায়েদ: হাদিস ১৭২১৫] অপর এক বর্ণনায় এসেছে, যায়েদ বিন খালিদ আল জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে। তবে তার প্রতিদান থেকে বিন্দু পরিমাণও হ্রাস করা হবে না।” [তিরমিযি:১/১৬৬, ইবনে মাজা: ১২৫]
এ মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে আমলের সওয়া বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। দুনিয়ার ব্যবসায়ীদের ব্যবসার যেমন বিশেষ বিশেষ মৌসুম থাকে, যখন ব্যবসা খুব জমজমাট হয় এবং বছরের অন্য মাসের তুলনায় মুনাফা ও উপার্জন বেশি হয়, তেমনি মুমিন বান্দার আখেরাতের সওদার শ্রেষ্ঠ সময় ও ভরা মৌসুম হচ্ছে এ মাস। এ মাসে আমলের দ্বারা মুনাফা অর্জন করা যায় অনেক বেশি। যেমন সহিহ বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, “আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এক আনসারী নারীকে বললেন, রমজান এলে তুমি ওমরা করবে। কেননা এ মাসের ওমরা হজ্ব সমতুল্য। সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় এসেছে- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন রমজানে ওমরা হজ্ব সমতুল্য অথবা বলেছেন, আমার সাথে হজ্ব করার সমতুল্য।” [বুখারি: ১/২৩৯, হাদিস: ১৭৪৭; মুসলিম:১/৪০৯; তিরমিযি: ১/১৮৬] অপর এক বর্ণনায় এসেছে, (এই বর্ণনাটি সনদের বিবেচনায় দুর্বল) যে ব্যক্তি রমজানুল মুবারকে একটি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। [শুআবুল ঈমান বায়হাকী, ৩/৩০৫-৩০৬] পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রমজান মাস হলো গুনাহ মাফের মাস। যে মাসে সকল মুমিনের জন্য ক্ষমার সদর দুয়ার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ক্ষমা লাভের এমন সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও যে ব্যক্তি মাগফিরাত লাভ করতে পারলনা সে সত্যিই ভাগ্যাহত। হাদিস শরিফে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে- “রমজানুল মুবারক লাভকারী ব্যক্তি যে রোজা, তারাবিহ (ও অন্যান্য আমল) উত্তমরূপে আদায় করে, তাঁর প্রথম পুরস্কার হলো, সে রমজান শেষে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে যায় যে দিন সে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। [মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৬/৯৬-৯৭, হাদিস: ৮৯৬৬]
এ মাসের আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে রয়েছে এমন একটি রাত যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এই রাতটি আমাদের মাঝে লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর নামে পরিচিত। এই রাত এত মযার্দাশীল ও মহিমান্বিত যে, এক হাজার রাত ইবাদত করলে যে সওয়াব হয় এই এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায় এবং এ রাতে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে অবতীর্ণ হয় জিবরাঈল এর নেতৃত্বে ফেরেস্তাগণের বিশাল এক বহর। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- “লাইলাতুল ক্বদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে ফেরেশতাগণ ও জিবরাঈল (আ.) তাদের পালন কর্তার আদেশক্রমে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এ রাতের পুরোভাগেই থাকে শান্তি, যা অব্যাহত থাকে ফজর পর্যন্ত। [কদর: ৩-৫]
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রমজানুল মুবারকের আগমন ঘটলে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমাদের মাঝে এই মাসের আগমন ঘটেছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যে ব্যক্তি এ রাতের খায়র, বরকত ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃত পক্ষে সর্বপ্রকার বরকত ও কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। একমাত্র সর্বহারা দুর্ভাগ্যরাই এ রাতের বরকত ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। [ইবনে মাজা: ১১৯] তাই প্রত্যেক মুমিন বান্দার উচিৎ ইবাদত ও আমলের মাধ্যমে এই রাত ও এই মাসের যাবতীয় খায়র বরকত ও কল্যাণ লাভে ধন্য হওয়া। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।
রোজার ফাজায়েল ও গুরুত্ব
রমজানুল মুবারকের রোজা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের উত্তম উপায়। পরকালীন পাথেয় অর্জনের উৎকৃষ্ট মাধ্যম। আত্মশুদ্ধির কার্যকর প্রক্রিয়া। ইবাদত বন্দেগি কবুল হওয়ার শ্রেষ্ঠ উপকরণ। প্রত্যেক নেক আমলের রয়েছে নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোজার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। রোজার প্রতিদান দিবেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। হযরত আবু হুরায়রা’ (রা.) এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন-আদম সন্তানের প্রত্যেক আমলের সওয়াব বৃদ্ধি করা হয় দশগুণ থেকে সাতশতগুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন কিন্তু রোজার বিষয়টি আলাদা। কারণ রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান প্রদান করব। রোজাদার বান্দা একমাত্র আমার জন্যই স্বীয় চাহিদা পরিত্যাগ করেছে এবং পানাহার বর্জন করেছে। [মুসলিম: ১/৩৬৩; ইবনে মাজা:১১৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৬/১০৪ হাদিস: ৮৯৮৭] তো সকল মাখলুকের গ্রষ্টা, বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক, পরম দয়ালু আল্লাহ তাআলা নিজেই যখন এর প্রতিদান দিবেন, তখন কি পরিমাণ দিবেন? এর ব্যাখ্যায় উলামায়ে কিরাম বলেছেন- আল্লাহ তাআলা রোজাদারকে যে পুরস্কার দিবেন তা মাপা হবে না, ওজন করা হবে না। দিবেন বিনা হিসাবে। রোজা ও অন্যান্য আমলের মাঝে এ ব্যবধান হলো কেন? এর জবাবে মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেছেন যদিও প্রকৃত পক্ষে সকল আমলই হয়ে থাকে আল্লাহর জন্য, তাঁর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায়। তথাপী অন্যান্য সকল ইবাদতের কাঠামোগত ক্রিয়া কলাপ, আকার-আকৃতি ও পদ্ধতিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যের পাশাপাশি রিয়া তথা লোক দেখানো ও নফসের স্বাদ গ্রহণের সুযোগও বিদ্যমান থাকে। তার অনুভূতির অন্তরালেও তা লুকিয়ে থাকতে পারে। নিজে অনুভব করতে না পারলেও তার ভিতরের অবচেতন ভাবেও বিদ্যমান থাকতে পারে। পক্ষান্তরে রোজার ব্যপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। রোজা কাঠামোগত, আকার-প্রকৃতি ও নিয়ম-পদ্ধতিতে এমন যে, ‘রেজায়ে মাওলা’ ব্যতীত রোজাদারের নফসের স্বাদ গ্রহণের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। নিজে মুখে প্রকাশ না করলে সর্বজ্ঞ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট প্রকাশ হয়না। এ কারণেই রোজা ও অন্যান্য ইবাদতের মাঝে এই ব্যবধান। রোজা পালনকারীর ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে আবু হুরায়রা (রা.) বাচনিক রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেন- “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্ববতী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” [বুখারি ঃ ১/২৫৫, হাদিস: ১৮৬৩, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৬/৯৮, হাদিস: ৮৯৬৯]
অপর এক বর্ণনায় এসেছে, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- “আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর ফরজ করেছেন রমজানের রোজা আর আমি সুন্নাত করেছি তারাবীহর নামাজ। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের প্রত্যাশায় রমজানের রোজা রাখবে এবং তারাবীহর নামাজ আদায় করবে; সে গুনাহ থেকে ঐ দিনের মত পবিত্র হয়ে যাবে, যেদিন সে মায়ের উদর থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। [সুনানে নাসায়ি: ১/২৩৯; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৫/২২৯-২৩০ হাদিস: ৭৭৮৭]
সুনানে নাসায়ির অন্য এক বর্ণনায় এসেছে- “হযরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে কোন আমলের আদেশ করুন। তিনি বললেন, তুমি রোজা রাখ। কেননা তার সমতুল্য কোন কিছু নেই। আমি আবার বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাকে কোন আমলের আদেশ করুন। তিনি বললেন, তুমি রোজা রাখ। কারণ তার সমকক্ষ কোন কিছু নেই। মুসনাদে আহমাদের এক বর্ণনায় এসেছে, আমি বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন তুমি রোজা রাখ। কারণ এর সমক্ষক কিছু নেই। আমি দ্বিতীয়বার তার নিকট এসে একই কথা বললে, তিনি বললেন, তুমি রোজা রাখ। [নাসায়ি: ১/২৪০; মুসনাদে আহমাদ হাদিস: ২২১৪০, ২২১৪৯] (অসমাপ্ত)