স্টাফ রিপোর্টার :
ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে গতকাল সোমবার দিনভর পৃথক ভাবে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। অভিযানে বৈধ কাগজপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ২৪টি ট্রাভেল এজেন্সিকে পৌনে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিভিন্ন স্থানে ২০ জনকে আটক করে কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর আওতায় অভিযানে নেতৃত্ব দেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে সালিক রুমাইয়া, হেলাল চৌধুরী, ইরতিজা হাসান ও আশরাফুল হকসহ ৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট।
সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে সিলেটের বেশ কয়েকজন নিহতের পর মানবপাচারের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। ট্রাভেল এজেন্সির নামে অবৈধভাবে বিদেশ পাঠানোর ব্যবসা নিয়ে আলোচনা হয়। এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে সিলেট জেলা প্রশাসন। গতকাল সোমবার ৫ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫টি টিম গঠন করে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। অভিযানে ২৪ টি ট্রাভেলস এজেন্সি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও মোট ৪ লাখ ৭৫ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ওয়েস্ট ওয়ার্ল্ড শপিং সিটি থেকে ৩ জন মানব পাচারকারী আটক করা হয় এবং তাদেরকে ১ মাসের কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল চৌধুরী। কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছে- ইউসিএস এ্যাডুকেশনের হীরা, রিচ রিল্যাশন গ্র“পের মাহবুব এবং জাকির এডুক্যাশনের কর্মচারী।
আম্বরখানা এলাকায় অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট ইরতিজা হাসান। অভিযানে আবুসাইদ এন্টাপ্রাইজকে ৩০ হাজার, ট্রাভেল টাইমকে ২৫ হাজার টাকা, জিলানী এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে ৫ হাজার, মিরাজ এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে ২০ হাজার, জে স্কয়ার কনসালটেন্সিকে ২০ হাজার, রেন্জার ইন্টারন্যাশলকে ২০ হাজার ও নিউ জান্নাত ট্রাভেলসকে ৩০ হাজার এবং ট্রাভেলস কর্মচারী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ১৫ দিনের ও নজমুল ইসলাম খানকে ১০দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হকের নেতৃত্বে শাহজালাল উপশহর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে রোজভিউ কমপ্লেক্সের আবিদ ওভারসিজকে ২০ হাজার, আসসালাম হজ্জ এবং ওমরা (প্যারাডাইস) ১৫ হাজার, আলকেফা ২০ হাজার, খাজা এয়ার ইন্টান্যাশনাল সর্ভিসকে ২০ হাজার, হোয়াইট ট্রাভেলস থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন ট্রাভেল এজেন্ট বাংলাদেশ (আটাব) সিলেটের সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, অভিযানে কম করে হলেও ১০০ জনকে ধরা যেতো। অভিযান শুরুর খবর পেয়ে সবাই দোকান বন্ধ করে পালিয়েছেন।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন খান বলেন, শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠেছে ট্রাভেল এজেন্সি। এসব ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। চোরাই পথে মানুষকে বিদেশ পাঠিয়ে প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। তাই অভিযান জোরদার করা হয়েছে। যতোদিন এসব অপকর্ম বন্ধ না হবে, ততোদিন অভিযান চলতে থাকবে। তিনি বলেন, শহরে ৫টি টিম নামানো হয়েছে। এর মধ্যে শাহজালাল উপশহর, বন্দরবাজর, আম্বরখানা, জল্লারপাড়, জিন্দাবাজার ও দক্ষিণ সুরমা। প্রতিটি টিমে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তাদের সহযোগিতা করছেন আটাব নেতারা।
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ও নিবন্ধনহীন ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ভবিষ্যতে কেউ যেন এসব এজেন্সির প্রতারণার শিকার না হয়, সে জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।