স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের চিকিৎসক ও সুবিদবাজার ফাজিলচিশত থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রীসহ ২ নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার সকালে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।
নিহতরা হচ্ছে- নগরীর পশ্চিম পাঠানটুলা পল্লবী আবাসিক এলাকার ২৫ নম্বর বাসার দিবাকর চন্দ্র দেব কল্লোলের স্ত্রী নগরীর তেলিহাওর তালতলা রোডের পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের প্রভাষক প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তা (২৯) এবং নগরীর সুবিদবাজার ফাজিলচিশতের ডা. আব্দুল হালিমের কন্যা ওসমানী মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ছাত্রী ইশরাত জাহান মিথিলা (২১)।
এদিকে, চিকিৎসক প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তা’র মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল রবিবার দুপুরে স্বামী স্থপতি দিবাকর দেব কল্লোল, শ্বশুর সুভাষ চন্দ্র দেব ও শাশুড়ি রতœা রানী দেবকে আটক করে জালালাবাদ থানা পুলিশ। পরে পুলিশ রবিবার আদালতের মাধ্যমে আটককৃতদের কারাগারে প্রেরণ করেছে।
পুলিশ জানায়, গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে নগরীর পশ্চিম পাঠানটুলা পল্লবি আবাসিক এলাকার ২৫ নম্বর বাসা থেকে প্রভাষক প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তা এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। ডা. প্রিয়াংকার পৈত্রিক বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার গঙ্গাধরপুর গ্রামের হৃষিকেশ দাসের কন্যা। তার ৩ বছরের এক ছেলে রয়েছে। স্বামী দিবাকর দেব কল্লোল পেশায় স্থপতি। তিনি লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ৫ বছর আগে তাকে ওই ইউনিভার্সিটি থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল বলে সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে, প্রিয়াংকার মৃত্যু রহস্যজনক বলে দাবি করছেন তার পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. হারুনুর রশীদ জানান, গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঝুলন্ত অবস্থায় ডা. প্রিয়াংকার লাশ উদ্ধার করেন তারা। পরে এ ঘটনায় নিহতের পিতা হৃষিকেশ দাস বাদি হয়ে স্বামী স্থপতি দিবাকর দেব কল্লোল, শ্বশুর সুভাষ চন্দ্র দেব ও শাশুড়ি রতœা রানী দেবকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং-১৫ (১২-০৫-১৯)। তিনি বলেন, এ মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ রবিবার আদালতের মাধ্যমে আটককৃতদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ ও পরিববার সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার এমবিবিএস ছাত্রী ইশরাত জাহান মিথিলা একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষে নিজ রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। ওইদিন রাতে সে রোজা রাখার জন্য সেহরীও খেয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠতে না দেখে পরিবারের লোকজন তাকে ডাকাডাকি করে। এক পর্যায়ে তার সাড়াশব্দ না পেয়ে তারা পুলিশকে খবর দেন। পরে সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচানো মিথিলার ঝুলন্ত ফাঁস লাগানো লাশ উদ্ধারে করে ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। বিকেলে নিহতের লাশ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হন্তান্তর করেছে পুলিশ।
এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শাহাদাৎ হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ইশরাত জাহান মিথিলার ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ওসি শাহাদাৎ আরো বলেন, মিথিলা এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপের কারণে তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পেলে ও তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তিনি জানান, গতকাল রবিবার বিকেলে নিহতের লাশ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হন্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।