দাবদাহে পুড়ছে দেশ, তাপমাত্রা আরও বাড়বে, গরমে রোজাদাররা কাহিল

142

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রচন্ড দাবদাহে পুড়ছে সারাদেশ। বৃষ্টি না থাকায় তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। আগামী ১২ তারিখের আগের এই পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না বলে জানিয়ে দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা জানায়, এই সময়ের মধ্যে দেশের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাবে। ফলে গরমের মাত্রাও সেই সঙ্গে বাড়বে। এদিকে অব্যাহত তাপপ্রবাহে সারাদেশে এক অসহনীয় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে মানুষের মধ্যে যেন হাহাকার পড়ে যাচ্ছে। গরমে রোজাদারদের অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়ছে।
অব্যাহত তাপমাত্রা বাড়ার কারণে দেশের তাপমাত্রার আবারও ৪০-এর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ফণী চলে যাওয়ার পর থেকেই সারাদেশে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার তা সর্বোচ্চ ৩৯.৫ ডিগ্রীতে পৌঁছে গেছে। উত্তরের জেলা রাজশাহীতে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তাদের রেকর্ড অনুযায়ী গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। এদিকে দেশব্যাপী ভয়াবহ তাপদাহের কারণে রোজাদারসহ সাধারণ মানুষের অবস্থা কাহিল। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ১২ মে নাগাদ এই তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ১২ তারিখের পর সাগরে পশ্চিমা লঘুচাপ সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে বৃষ্টি-বাদলের একটা সম্ভাবনা আছে। ফলে তাপমাত্রা তখন কিছুটা কমে যেতে পারে। তার আগে দেশে দাবদাহ কমার কোন লক্ষণ দেখছে না আবহাওয়া অফিস। তাপমাত্রা বেড়ে বর্তমানে দেশের রাজশাহী, খুলনা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, আগামী ১২ মের আগে এই তাপদাহ কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই সময়ে দেশের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, এই সময়ে সাগরে যে পশ্চিমা লঘুচাপ থাকে সেটি বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে অবস্থান করছে। এদিকে ১২ তারিখের পর বঙ্গোপসাগরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি এলেই তখন আকাশে মেঘ তৈরি হতে পারে। তখন কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাত হতে পারে। পুবালি বাতাস থাকলেও এর সঙ্গে পশ্চিমা লঘুচাপ যোগ না হওয়ায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বর্তমানে ক্ষীণ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, সারাদিন প্রচন্ড রোদের কারণে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে পড়ছে। এর সঙ্গে বাতাসে মিশে থাকা জলীয় বাষ্পের কারণে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠছে।
এদিকে অব্যাহত তাপপ্রবাহের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে অসহনীয় পরিবেশ বিরাজ করছে। বৈরী এই আবহাওয়ার কারণে মানুষের ভোগান্তির মাত্রা চরমে ওঠেছে। রাতে প্রচন্ড গরমে যেমন ঘুমানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার দিনের রৌদ্রতাপের কারণে বাইরেও বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। বাতাসে যেন আগুনের ফুলকি উড়ছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, বাতাসে আদ্রতা থাকলেও তা পরিমাণে খুব কম রয়েছে। ফলে বাতাস আগুনের মতো গরম হয়ে যাচ্ছে। তবে আদ্রতা বেশি থাকলেও ভ্যাপসা গরমের পরিধি বেড়ে যাচ্ছে।
মাহে রমজানের আজ চার তারিখ। শুরু থেকেই রোজাদারদের গরমে প্রচন্ড কষ্ট সয়ে রোজাব্রত পালন করতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের পরিস্থিতি যেন আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে। দুুপুরের পর থেকে সময় যেন আর কাটতে চায় না। গরমের হাত থেকে বাঁচতে দিনের বেলায় একটু বিশ্রামের আশায় সবাইকে ব্যতিব্যস্ত দেখা গেছে। দুপুরে রোদের হিট একটু বেশি বাড়ায় রাস্তায় যানবাহন প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। গরমে যানবাহনে চলতেও সমস্যা হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে মেটালগুলো আরও গরম হয়ে গরমে অনুভূতিকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাসাবাড়ির ট্যাপের পানি আগুনের মতো গরম হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে সারাদেশের ন্যায় রাজধানীর ঢাকার তাপমাত্রাও বেড়েই চলছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ঢাকাতে ২ থেকে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৫.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা আগের দিনের চেয়ে বেশি। সরেজমিন দেখা গেছে, সকালে অফিসে যাওয়ার কারণে রাস্তায় পরিবহন চাপ বাড়লে প্রচন্ড গরমে দুপুরে কেউ রাস্তায় বের হচ্ছে না। ফলে এই সময় রাস্তায় যান চলাচল কমে যাচ্ছে। গরমে যান চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচন্ড গরমে একটু নিয়ম মেনে না চলছে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তারা জানায়, রোজার সময় রোজাদাররা না খেয়ে থাকে। ফলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। দুপুর ১২টার পর থেকে রোদের যে পরিমাণ তাপ দিচ্ছে তাতে বের হওয়া মুশকিল। ফলে বেশি সময় ধরে রোদে থাকলে ডায়রিয়াসহ স্বাস্থ্যের ওপর নানা ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। গরমে হাত থেকে রেহাই পেতে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে রোদে বাইরে বের না হওয়াই ভাল। একান্ত বাধ্য হয়ে বের হলে মাথায় ছাতা ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ছাতা ব্যবহার করলে রোদের হিট এড়ানো সম্ভব হবে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছে, ফণী চলে গেলেও মে মাসের শেষ নাগাদ সাগরে আরও একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। তবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে সেটা থেকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এছাড়াও এবার বর্ষাও আগে আগে আসতে পারে। বিশেষ করে দেশে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করতে পারে। তারা জানায়, সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু দেশের ভেতরে প্রবেশ করে। তখন এর প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টিপাত দেখা দেয়। এবার মৌসুমি বায়ু জুনের ১ তারিখ বা তারও আগে আসতে পারে। মৌসুমি বায়ু দেশের ঢোকার পর তা যদিও সক্রিয় অবস্থায় থাকে তাহলে জুনের প্রথম থেকেই দেশের বৃষ্টিপাত বেড়ে যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন তারা।